মুনাফায় টান পড়ার আশঙ্কায় তারা অন্যদের উপরে জোর খাটিয়েছিল বলে অভিযোগ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। চোখ রাঙানির মাসুল দিয়ে এ বার তাই নিজেই শাস্তির মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের ওষুধের দোকান-মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)।
রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ‘ন্যায্য মূল্যে’র দোকানে এবং কিছু বেসরকারি ফার্মাসি’তে ওষুধের দামে ছাড় দেওয়ার বিরোধিতায় নেমেছিল বিসিডিএ। এ প্রসঙ্গেই তাদের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ ওঠে, যা লিখিত ভাবে পৌঁছয় ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (সিসিআই)’-র হাতে। প্রতিযোগিতার বাজারে সব সংস্থার স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত এই কেন্দ্রীয় কমিশন বিষয়টি যাচাই করে বিসিডিএ-কে দোষী সাব্যস্ত করে । অ্যাসোসিয়েশনকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।
এবং এতে রাজ্য সরকার স্বভাবতই খুশি। রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি করের মন্তব্য, “আশা করি, এর পরে কেউ এমআরপি-র কমে ওষুধ বিক্রিতে বাধাদানের সাহস দেখাবে না।” অ্যাসোসিয়েশনও সুর নরম করেছে। “ভুলটা বুঝতে পেরেছি। আর কোনও দোকানকে কম দামে ওষুধ বিক্রিতে বাধা দেওয়া হবে না। ন্যায্য মূল্যের দোকানকেও আমরা সমর্থন করছি। কমিশনকে এটা লিখিত ভাবে জানিয়েছি,” বলছেন বিসিডিএ’র সাধারণ সম্পাদক তুষার চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, “২১ জানুয়ারি ন্যায্য মূল্যের দোকানের বিরুদ্ধে সভা করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী তাতে ক্ষুব্ধ হন। ওঁকে বলতে চাই, আমরা আর এমন করব না।”
উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় এসে সিদ্ধান্ত নেয়, আমজনতার স্বার্থে সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ফার্মাসি চালু হবে, যেখানে এমআরপি’র কম দামে ওষুধ মিলবে। খদ্দের ধরে রাখতে কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় পাঁচ হাজার বেসরকারি ফার্মাসিও এমআরপি’র উপরে ‘ডিসকাউন্ট’ দিতে শুরু করে। কী ভাবে?
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “ধরা যাক, কোনও ওষুধের গায়ে দাম (সর্বাধিক খুচরো মূল্য, সংক্ষেপে এমআরপি) লেখা রয়েছে ১০০ টাকা। উৎপাদক সংস্থার কাছ থেকে স্টকিস্ট বা ডিস্ট্রিবিউটর তা কেনে ৭২-৭৫ টাকায়। তাদের থেকে দোকান মালিক নেয় ৮৫-৮৬ টাকায়। তারা খদ্দেরকে সেটা এমআরপি’তে বেচলেও ১৭%-১৮% লাভ।” এমআরপি’র একটু কমে বেচলে মুনাফার অঙ্ক একটু কমলেও ক্রেতা ধরে রাখা যাবে। এই কারণে বেসরকারি বিভিন্ন দোকানও ছাড়ের পথে হাঁটতে থাকে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
আর এতেই বিরোধের ক্ষেত্র তৈরি হয়। ন্যায্য মূল্যের ফার্মাসি চালু থাকায় তাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে অভিযোগ তুলে বিসিডিএ আন্দোলনে নামে। গত ২১ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে ওষুধ-দোকান বন্ধ রাখার ডাক দিয়ে রানি রাসমণি রোডে তারা বিক্ষোভ সমাবেশও করেছিল। অভিযোগ ওঠে, বহু বেসরকারি দোকানকে ‘ডিসকাউন্ট’ বন্ধ করে এমআরপি অনুযায়ী ওষুধ বেচতে বাধ্য করছে অ্যাসোসিয়েশন এই অভিযোগ পেয়ে সিসিআই সক্রিয় হয়। কারণ তাদের কাজই হল, দেশের বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখা। এই লক্ষ্যে বলবৎ ‘কমপিটিশন আইন-২০০২’-এর কার্যকারিতা সর্বত্র নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। যদি প্রমাণিত হয়, কেউ আইন লঙ্ঘন করে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করছে, তাকে আর্থিক জরিমানা করার এক্তিয়ারও কমিশনের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, গত ৩ জুলাই বিসিডিএ-কে চিঠি দিয়ে সিসিআই জানিয়েছে, তাদের আর্থিক জরিমানা করা হল। জরিমানার অঙ্ক অবশ্য এখনও স্থির হয়নি। পাশাপাশি গত ২৪ অক্টোবর সংগঠনের ৮০ সদস্যকেও আলাদা আলাদা ভাবে দোষী চিহ্নিত করে চিঠি দিয়েছে সিসিআই। তাদেরও আর্থিক জরিমানা কেন হবে না, চিঠিতে সেই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। |