বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার সামান্য ডালের বড়ি।
ধান খেতে ঘেরা নিউ ময়নাগুড়ি স্টেশন লাগোয়া ছোট্ট বসতি সাহাপাড়া ওই বড়ির সুবাদেই এখন ‘বড়িপাড়া’ হিসেবে বেশি পরিচিত। যেখানকার মহিলাদের বানানো বড়ি উত্তরবঙ্গের বাজার ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে অসম-বিহারেও। স্বাবলম্বী হচ্ছেন মহিলারা। হাতে টাকা আসায় পাল্টাচ্ছে জীবন যাপন। বাড়ছে তাঁদের আত্মবিশ্বাস।
যে কোনও দিন ওই স্টেশনে নেমে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে সাহাপাড়ার পাথর বিছানো রাস্তার দু’পাশ সাদা হয়ে রয়েছে কাপড়ের উপরে মেলে দেওয়া ডালের বড়িতে। ফাঁকা মাঠে বাঁশের মাচাতেও শুকোচ্ছে বড়ি। সামান্য এগিয়ে ঘর-গেরস্থালি। মহিলাদের কথা বলার ফুরসৎ নেই। গামলায় বিউলি, মটর বা মুসুর ডালের সঙ্গে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনার মতো তাঁরা বড়ি দিয়ে চলেছেন। ঘুরছেন ক্রেতারা। কাজের ফাঁকে চলছে দরদাম। ভোর না হতেই ট্রাক বোঝাই করে বড়ি চলে যাচ্ছে শিলিগুড়ি, অসম বা বিহারের বাজারে। |
সাহাপাড়ার ‘বড়িপাড়া’ হয়ে উঠতে সময় লেগেছে বছর দশেক। ছোট্ট বসতিতে শতাধিক পরিবারের বাস। পুরুষেরা বেশির ভাগই ছোটখাটো ব্যবসা করেন। মহিলারা জানাচ্ছেন, তখন মূলত নিজেদের ব্যবহারের জন্য ঘরে বড়ি তৈরি হত। যেটা বাঁচত, বিক্রি করা হত। কিন্তু সেই টাকায় সংসারের হাল ফিরছিল না। তখনই বড়িকে আরও বেশি করে বাজারমুখী করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন তাঁরা।
গ্রামবাসী মিনতি সাহার কথায়, “আমাদের শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালের নভেম্বর মাস নাগাদ। শীতে বড়ির চাহিদা বাড়ে। সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই।” রুমা সাহা নামে আর এক মহিলা বলেন, “প্রথম দিকে বাড়ির পুরুষেরা নিজেদের ব্যবসার ফাঁকে বড়ি বিক্রি করতেন। বছর ঘুরতে পরিস্থিতি পাল্টায়। আমাদেরই বিক্রিতে নামতে হয়। কারণ চাহিদা বাড়ছিল।”
বেশ কয়েক বছর এ ভাবে চললেও ব্যবসা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় পুঁজির। মহিলারা নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তোলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এ পর্যন্ত সেই গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১টি। সদস্যসংখ্যা ১১০। মহিলারা জানান, তাঁরা প্রত্যেকে মাসে ৪০ টাকা করে গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে জমা দেন। গোষ্ঠী ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এখন জোগান ঠিক রাখতে মহিলারা প্রত্যেকে রোজ গড়ে ৪০ কেজি বড়ি তৈরি করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করছেন প্রত্যেকেই। একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য মালা দাস বলেন, “আমার এখনও ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কাজ ভালই চলছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া শিখছে। আর কী চাই।”
সাহাপাড়ার মহিলাদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনাটি জানেন ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “ওই মহিলাদের সাফল্যের কথা জানি। ওঁরা চাইলে সাহায্য করব।”
ডালের বড়ি তৈরি করে ভোল বদলেছে ‘বড়িপাড়া’র। |