সংগ্রাম সিংহ রায় • শিলিগুড়ি |
ছবির মতো ছোট্ট গ্রাম ‘খোলাচাঁদ ফাপড়ি’। তার কোলে ছবির মতো ছোট্ট এক স্কুল। শিলিগুড়ি শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব হলেও রাস্তা খারাপ হওয়ায় আরও বেশি মনে হয়। সেখানেই বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া একচিলতে জমিতে পঠনপাঠন চলছে নেপালি মাধ্যম স্কুল খোলাচাঁদ ফাপড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ১৯৭০-এ চালু হলেও ক’বছর আগেও অজ্ঞাতবাসে থাকা স্কুলটি এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষা গবেষকদের চর্চার বিষয়। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর বিষয়ে শুনে ডেনমার্ক, জার্মানি, লাওস, আফগানিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের এক গবেষক দল সম্প্রতি ঘুরে গিয়েছেন এই স্কুলে।
২০১৩ সালে শিশুমিত্র তকমা পাওয়া এই স্কুলটি মাত্র ৭৮ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে চলছে। প্রধান শিক্ষক কৈলাস সুব্বা জানান, এ এলাকায় লড়াই করে বাঁচতে হয়। রাত হলেই হাতির ভয়। তার মধ্যেই পড়াশোনা। বাচ্চারা শেখে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও। তিনি বলেন, “মানুষকে প্রতি দিন লড়ে বাঁচতে হয়। তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করা একটা বড় লড়াই। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও তাই স্কুলে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের দিকে নজর রাখা হয়েছে। |
স্কুলের প্রতিটি ক্লাস রুমের দরজা ও জানলায় মৌলিক ও যৌগিক শব্দ, জোড়-বিজোড় সংখ্যা, ভাজ্য-ভাজক আলাদা রং দিয়ে লেখা। তা বারবারই চেখে পড়ে যায় ছাত্রছাত্রীদের। মুখস্থ রাখতে পরিশ্রম করতে হয় না। মিড ডে মিল খাওয়ার জন্য তিন দিক ঘেরা, এক দিক খোলা ডাইনিং। তাতে রংবেরঙের টাইলস। খাওয়ার ঘরের ঠিক মাঝখানে এক কৃত্রিম গাছ। তাতে আম, কলা, আপেল, কাঁঠাল, লিচু, জাম, বেদানা, পেঁপে-সহ নানা রকম কৃত্রিম ফল ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক জানালেন, খেতে খেতেই এই সব ফলের গুণ ও উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য বাচ্চাদের জানানো হয়। তারাও যে বিষয়টি উপভোগ করে তা জানা গেল তাদেরই এক জনের কথায়। স্কুলের ছাত্র সংসদের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করা চতুর্থ শ্রেণির দীপেন সুব্বা বলে, “সকালে আমরা অনেকে স্কুলে চলে আসি। এখানে বেশি পড়তে হয় না। কিন্তু স্যরদের বাহবা পাই।” ঘরের বাইরে প্রতিটি কলের পাশে খাওয়ার পর হাত পরিষ্কার করার জন্য জালে ঝোলানো রয়েছে সাবান।
স্কুলেরই এক চিলতে জমিতে ছাত্র শিক্ষক মিলে চলে মরসুমি নানা সব্জি চাষ। লাউ, কুমড়ো, পালংশাক, পটল, রাই শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলো, শালগম-সহ অনেক সবজিই মিড ডে মিলে রেঁধে খাওয়া হয় সারা বছরই। স্থানীয় এক বাসিন্দা গৌরব দেওকোটা বলেন, “আমরা খুবই খুশি। আমাদের ছেলেমেয়েরা বাড়ির কাছেই এত ভাল একটা পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারছে। নতুবা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না বেশি পয়সা দিয়ে বাইরে নামী স্কুলে পড়ানোর।”
রাজগঞ্জ সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক রাজীব চক্রবর্তী ও স্কুলের প্রধানশিক্ষক কৈলাশ সুব্বা বলেছেন, “আমরা এই স্কুলের মান অনুযায়ী আরও কয়েকটি স্কুলকে গড়ে তুলতে চাইছি। আশা করি কয়েক বছরে আরও ৫টি স্কুলকে মডেল স্কুলে পরিণত করতে পারব।”
|