বামশাসিত জেলা পরিষদ বহু টাকা খরচ করে গত বছর হাওড়ার ডোমজুড় বাজারের কাছে তৈরি করেছিল মাকের্ট কমপ্লেক্স। এত দিন পরেও তা চালু হয়নি। কোনও ব্যবসায়ী সেখানে দোকানঘর না নেওয়ায় ফাঁকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে ওই মার্কেট কমপ্লেক্স। এ বার তা অন্যত্র সরানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে জেলা পরিষদ। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, মাকের্ট কমপ্লেক্সটি কোনও কাজে না আসায় সরকারি টাকা অপচয় হল।
বর্তমান জেলা পরিষদের পূর্ত (সড়ক) কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের কল্যাণ ঘোষ বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে অপরিকল্পিত ভাবে মার্কেট কমপ্লেক্স করা উচিত হয়নি। মার্কেট কমপ্লেক্সটি সরিয়ে অন্য কোথাও করা যায় কিনা, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।”
ওই এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, একটি নতুন বাস-ট্যাক্সি-অটো স্ট্যান্ডের। জেলা পরিষদ সেই দাবি মেনে প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, বাজারের হকারদের উচ্ছেদ করে ওই স্ট্যান্ড তৈরি করা নিয়ে প্রথম দিকে জটিলতা দেখা দেয়। সেই কারণে জেলা পরিষদ ও ডোমজুড় ব্যবসায়ী সমিতির মিলিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই বাজারের গায়েই ডোমজুড় থানার পাশে ১৯ হাজার বর্গফুট জমি কেনা হয়। খরচ হয় ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। ১১ হাজার বর্গফুট জুড়ে তৈরি হয় ট্রেকার-অটো-ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এবং ৪৫টি দোকান ঘর-সহ একটি মার্কেট কমপ্লেক্স। একই সঙ্গে আট হাজার বর্গফুট এলাকায় তৈরি হয় বাসস্ট্যান্ড এবং ৩০টি দোকানঘরের মাকের্ট কমপ্লেক্স।
স্ট্যান্ড দু’টির সঙ্গে সঙ্গেই নতুন দু’টি মার্কেট কমপ্লেক্সও চালু হওয়ার কথা ছিল। ২০১২ সালের ৮ অগস্ট অটো-ট্রেকার-ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন মার্কেট কমপ্লেক্সটি চালু হয়ে যায়। পুনর্বাসন পান উচ্ছেদ হওয়া হকাররা। চালু হয়ে যায় বাসস্ট্যান্ডটিও। কিন্তু চালু করা যায়নি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মার্কেট কমপ্লেক্স। দোকানঘরগুলি বিক্রি হলে আয়ের রাস্তা হত জেলা পরিষদের। নবনির্মিত ওই দোকানঘরগুলি লটারির মাধ্যমে নিতে কোনও দোকানদারই আগ্রহ দেখাননি।
কিন্তু কেন দোকানঘর নিতে কেউ আগ্রহ দেখালেন না?
স্থানীয় দোকানদার হীরু মালাকার বলেন, “বাসস্ট্যান্ডটি পরিকল্পিত ভাবে তৈরি হয়নি। দোকানগুলি পিছনের দিকে হওয়ায় ওখানে ক্রেতারা আসতে চান না।” বাজার এলাকার বাসিন্দা কার্তিক সাধুখাঁ বলেন, “কেন যে ওই জায়গায় মার্কেট কমপ্লেক্স হল জানি না। কোনও কাজেই এল না। যানজট যেমন হত, তেমনই হচ্ছে। সরকারি টাকার শুধু অপচয় হল।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাপি ঠাকুর চক্রবর্তী বলেন, “বাসস্ট্যান্ডে বাস থাকলে বাইরে থেকে দোকানগুলি দেখা যায় না। ক্রেতাদের সাইকেল, মোটরবাইক রাখার জায়গা নেই। তাই ওই দোকানঘরগুলি কেউ নেননি।”
অপরিকল্পিত ভাবে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ার কথা মানতে চাননি হাওড়া জেলা পরিষদের তৎকালীন পূর্ত (সড়ক) কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের আনন্দ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “পরিকল্পনা ঠিকই ছিল। আসলে দোকানঘরগুলি বণ্টনের জন্য আমরা লটারির ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু যে দাম ধার্য করা হয়েছিল, সেই দামে দোকান নিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই দাম কমিয়ে ফের লটারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আমাদের বোর্ড ভেঙে যায়। তবে এখন এই বিষয়ে বর্তমান বোর্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।” |