নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
উদ্দেশ্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো। তাই ২০১১-১২ সালে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’র অধীনে বীরভূমের তিনটি গ্রামকে ‘জৈব গ্রামে’র আওতায় আনা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে চাষিরা উপকৃত হয়েছেন কি না, তা জানতে বুধবার খয়রাশোলের পানসিউড়ি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতলের একটি ফাঁকা ঘরে চলছিল আলোচনাচক্র। ফলন একটু কম হলেও ফসলের স্বাদ অন্য রকম তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই গ্রামের চাষিরা।
প্রসঙ্গত, যে তিনটি গ্রামকে এই জৈব গ্রামের আওতায় আনা হয়েছিল পানসিউড়ি ছাড়াও বোলপুর মহকুমার ইলবামবাজার এবং রামপুরহাট ১ ব্লকের একটি গ্রাম রয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে ধান চাষের আগে পানসিউড়ি গ্রামের ৪০ জন চাষিকে নিয়ে গ্রামে ১০ হেক্টর জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষের কলা কৌশল হাতে কলমে শিখিয়েছেন আধিকারিকেরা। |
ওই দিনের আলোচনাচক্রে গ্রামের প্রায় ৫০ জন চাষির সঙ্গে ছিলেন খয়রাশোলে ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত আচার্য। জানা গিয়েছে, গ্রামের প্রায় ১০০টি কৃষি নির্ভর পরিবারের মধ্যে ৪০ জন চাষি তো আগেই ওই পদ্ধিতিতে চাষ করেছেন। নতুন করে আরও ৩০-৩৫ জন চাষি এই পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বীজ শোধন করে, জৈব সার, সবুজ সার, কেঁচো সার এবং জৈব কীটনাশক(নিম তেল) ব্যবহার করে চাষের আভিজ্ঞতা ঠিক কেমন সেটাই বলছিলেন চাষিরা। চাষি পরিতোষ গোপ, প্রণব মণ্ডল, জয়ন্ত ঘোষরা বললেন, “ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের জন্য যা খরচ হতো এই পদ্ধতি চাষে সেটা হয়নি। এই পদ্ধতিতে চাষে উৎপাদিত ফসলের স্বাদ অন্য রকম। যেটা রাসায়নিক সার ব্যবহার করে পাওয়া যাবে না।”
অন্য দিকে, দেবপ্রসাদ ঘোষ, বারিন বাগদি, যাদব গোপরা বলছেন, “এই পদ্ধতিতে চাষ করে পরিবেশ ও মানুষের কোনও ক্ষতি না হয়, তা হলে এ ভাবে চাষ না করার কী আছে।” তবে অসুবিধা নেই, এমনটা কিন্তু চাষিদের অভিজ্ঞতা নয়। অনেকেই বলছেন, এই পদ্ধতিতে সর্ষে চাষ করে আগের বার আশানুরূপ ফলন হয়নি। এই সারের জোগানও পর্যাপ্ত নয়। খয়রাশোলে এর তেমন বাজার নেই। কৃষি আধিকারিক দেবব্রত আচার্য বলেন, “রাতারাতি বাজার তৈরি হবে না। কিন্তু চাষিরা যদি এ ভাবে চাষ চালিয়ে যেতে পারেন, তা হলে একদিন সেটাও সম্ভব।” ফলন কমের প্রশ্নে ওই আধিকারিক বলেন, “বহু বছর পর জৈব পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে, ধীরে ধীরে মাটি উর্বর হবে। আর জৈব সার কৃষকেরা নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারেন এবং অতিরিক্ত সার বিক্রি করতেও পারেন। তা হলে তো আর সমস্যা থকবে না।” জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (শস্য রক্ষা) অশুতোষ মণ্ডলও এ ব্যাপারে একমত।
|