গত বছরই পরিবহণ মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, জিটি রোডের পারাজ মোড়ে দুর্গাপুর-কলকাতা রুটের এসবিএসটিসি-র বাসগুলি দাঁড়াবে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থাও গত ২৫ অক্টোবর নির্দেশ জারি করেছিল যে ১ নভেম্বর থেকে পারাজ মোড়ে ওই সরকারি বাসগুলি দাঁড়াবে। নিয়মমাফিক টাকা জমা দিয়ে ২৩ অক্টোবর নিযুক্ত হয়েছিলেন এসবিএসটিসি-র এজেন্টও। অথচ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দিনের পর দিন এসবিএসটিসির-র বাসগুলি পারাজ মোড়ে দাঁড়াচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ফের আন্দোলনে নামার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
দুর্গাপুর সিটি সেন্টার থেকে সারাদিনে মোট ৫৪টি এসবিএসটিসি-র বাস কলকাতা থেকে দুর্গাপুর যাতায়াত করে। পারাজের উপর দিয়েই যায় বাসগুলি। বাসিন্দাদের দাবি, ১৫ মিনিট অন্তর ধর্মতলা বা করুণাময়ী রুটের বাস পারাজের উপর দিয়ে চলাচল করলেও দাঁড়ায় না। স্থানীয় বাসিন্দা টোটন দে, তবিবর মণ্ডল, কাজল চৌধুরীরা জানান, “পারাজ দুর্গাপুর সিটিসেন্টার থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে। তবু এসবিএসটিসি থেকে বলা হয়েছিল, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার থেকে কলকাতা পর্যন্ত বাসের যা ভাড়া, সেই ৮৫ টাকা দিয়েই পারাজের যাত্রীদের ওই দূরপাল্লার বাস পরিষেবা পেতে হবে। তাতেও স্থানীয় মানুষ রাজি ছিলেন। কিন্তু ১ নভেম্বর থেকে এতদিনে মাত্র তিনটি সরকারি দূরপাল্লার বাস পারাজে দাঁড়িয়েছে।” পারাজ মোড়ে বাস ধরতে শুধু পারাজবাসীই নয়, আশপাশের গলসি ১ ও ২ ব্লকের পূরষা, শিরোরাই, লোয়া, রামগোপালপুর, কৃষ্ণরামপুর, উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামের মানুষও আসেন। বাস না দাঁড়ানোয় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও।
গত বছর ৩০ অগস্ট প্রায় সাড়ে চারশো মানুষের সই করা এসবিএসটিসি-র দূরপাল্লার বাস পারাজে দাঁড় করানোর আবেদন জমা পড়েছিল পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে। গত বছরই ২৮ নভেম্বর তিনি পারাজে বাস দাঁড়ানোর জন্য একদফা নির্দেশ দেন। তারপরেও কাজ না হওয়ায় স্থানীয়রা আবার তাঁকে আবেদনপত্র পাঠান। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই মদনবাবু চলতি বছরের ১ অক্টোবর এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমনাশ ঘোষকে পারাজে দূরপাল্লার বাস দাঁড় করানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি শুনে তিনিও বিস্মিত। মদনবাবু বলেন, “কী হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না। কারা এমন করে মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করছে? জেলা প্রশাসনকে বলব, অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে।”
এসবিএসটিসি-র পারাজের অনুমোদিত এজেন্ট গৌতম চট্টোপধ্যায়েরও অভিযোগ, “ওই বাসগুলি দাঁড়াবে বলে আমাকে দশ হাজার টাকার টিকিট তুলতে হয়েছে এসবিএসটিসির কাছ থেকে। সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে পাঁচ হাজার জমাও দিতে হয়েছে। আমি টিকিট কেটে যাত্রীদের নিয়ে পারাজে অপেক্ষা করছিলাম কয়েকদিন। এসবিএসটিসি-র ডিপোতে ফোন করেও বলেছিলাম, প্রায় শতাধিক যাত্রী টিকিট কেটেছেন। কিন্তু দিনের পর দিন বাসগুলি আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। ফলে আমাকে টিকিটের টাকা তো ফেরত দিতেই হয়েছে, মানুষের কাছে চরম হেনস্থাও হতে হয়েছে।”
তবে এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান তমনাশ ঘোষের দাবি, “এমন তো হতে পারে না। আমাকে বলা হয়েছে, ওখানে আমাদের বাস দাঁড়াচ্ছে। অবিলম্বে বাসগুলি দাঁড় করাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |