‘কখনও পড়ে থাকা মৃতদেহ সরিয়ে এগোতে হয়েছে। কখনও বরফ কুয়োয় মই পেতে সামনের দিকে যেতে হয়। প্রতি পদে ঝুঁকি। কিছুটা উচ্চতা পর্যন্ত গুল্মজাতীয় গাছ আর অল্প কিছু পাখি ছিল। তার পর যত উপরে এগিয়েছি, শুধু বরফ আর বরফ।”
কোচবিহার রবীন্দ্রভাবনে মঙ্গলবার এভারেস্ট জয়ের এ অভিজ্ঞতা বললেন পর্বতারোহী ছন্দা গায়েন। মুগ্ধ হয়ে শুনছিল স্কুলপড়ুয়ারা। সর্বশিক্ষা মিশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে কোচবিহারের প্রাথমিক ও হাইস্কুল মিলিয়ে ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন মাউন্ট এভারেস্ট ও লোৎসে বিজয়িনী পর্বতারোহী ছন্দা গায়েন। ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুলগুলির পড়ুয়াদের অনেকে অনুষ্ঠানে হাজির ছিল। যখন ছন্দা বলছিলেন, তখন হলে পড়ুয়ারা সবাই চুপ।
বইয়ের পাতায় এডমন্ড হিলারি কিংবা তেনজিং নোরগের ছবি দেখেছে ওদের অনেকেই। সংক্ষিপ্ত তথ্যও কেউ কেউ পড়েছে। কিন্তু, দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পর্বত শৃঙ্গে চড়ার অভিজ্ঞতা, সেই অনুভূতিটা যে কেমন তা সরাসরি কোনও পর্বতারোহীর মুখ থেকে শোনার সুযোগ মেলার ব্যাপারই আলাদা। তাই এভারেস্ট বিজয়িনীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যাবে জানতে পেরে ভালই উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল কোচবিহারে। অনুষ্ঠান শেষের পরেও অনেকের ঘোর কাটছিল না।
|
সই বিলোচ্ছেন ছন্দা গায়েন। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি। |
কোনামালি পেস্টারঝাড় এলাকার এক প্রাথমিকে র পড়ুয়া রানা মজুমদার, প্রিয়ঙ্কা বিশ্বাস বলে, “দিদিটা সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে উঠেছিল! কী সাহস!” নাটাবাড়ি হাইস্কুলের শ্রাবণী সরকার, কুমারেশ দাসদের কথায়, “রোমহর্ষক ব্যাপার।” যা শুনে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক আমিনুল আহসান জানিয়েছেন, ছন্দার সাফল্যের কাহিনি পড়ুয়াদের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার কথাই ভেবেই অনুষ্ঠান করা হয়েছে। হাতিপোতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিবিরে থেকে এভারেস্ট বিজয়িনী ওদের মনোবল বাড়িয়েছেন।
বাঙালি তরুণী ছন্দা এভারেস্টের সর্ব্বোচ্চ চূড়ার পাশাপাশি বিশ্বের আরও এক অন্যতম সর্ব্বোচ পর্বত শৃঙ্গ লোৎসে জয় করেছেন মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে। দু’দুটি পর্বত শৃঙ্গ জয়ের নজির বিশ্বে কারও নেই। পড়ুয়াদের সামনে এদিন সেই ‘লড়াইয়ের’ কাহিনী বলেন ছন্দা। এভারেস্ট থেকে কেমন দেখাচ্ছিল নীচের পৃথিবীটা? তাঁর কথায়, “মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। আর উঁচু পাহাড়গুলি যেন একেকটা ছোট্ট টিলা।” যে কাহিনী শুনে যেত অন্য জগতে চলে গিয়েছিল পড়ুয়ারা।
ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কার প্রাপক স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে স্মারক উপহার ও ৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
বড়শোলমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুফানগঞ্জ পুরসভা ৩ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দিনহাটার ওকরা বাড়ি আলাবক্স হাইস্কুল ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পায়। অনুষ্ঠানে কোচবিহার সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া, জেলা শাসক মোহন গাঁধীর উপস্থিত ছিলেন। জেলাশাসক বলেন, “সত্যিই এভারেস্ট বিজয়িনীর উপস্থিতি একটা বাড়তি পাওনা।” |