বর্ধমানের গোবিন্দভোগ বা উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি সরু সুগন্ধী চাল হিসেবে এই দুইয়ের খ্যাতি বহু দিনের। এ বার তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে দক্ষিণ দিনাজপুর তুলে ধরছে নিজস্ব ‘ব্র্যান্ড’ কাটারিভোগ চাল। তার জন্য চাষিদের সাহায্য করছেন জেলার কৃষি গবেষকরা।
বালুরঘাট ব্লকের মাঝিয়ান এলাকায় উত্তরবঙ্গ কৃষি বিদ্যালয়ের আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে কাটারিভোগের চাষ শুরু হয়েছে। এ বছর জেলায় ১২টি ফার্মার্স ক্লাবকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে। দফতর থেকে চাষিদের বিনামূল্যে বীজ এবং কারিগরি সহায়তা দিয়ে প্রতিটি ক্লাবের ১২০ জন চাষিকে কাটারিভোগ ধান চাষ করানো হয়েছে। মাঝিয়ান কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক গৌতম মণ্ডল বলেন, “জেলায় মোট ১০৫ বিঘা জমিতে বিশেষ নজরদারিতে জৈব সারের মাধ্যমে কাটারিভোগ চাষ হয়েছে। এই কেন্দ্রের ফার্মেও পরীক্ষামূলক ভাবে তিন বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফলনও শুরু হয়েছে।” ওই বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত বিশেষ যন্ত্রের (ইলেকট্রনিক নোজ) সাহায্যে ধানের গন্ধবিচারও করছেন গবেষকেরা।
গৌতমবাবু জানান, কাটারিভোগ চাল বিদেশে রফতানির লক্ষ্যেই এই বিশেষ উদ্যোগ। তুলাইপাঞ্জি কিংবা গোবিন্দভোগের মতো অত বেশি সুগন্ধী না হলেও সামান্য সরু কাটারিভোগের হালকা মিষ্টি সুবাস অন্য চালের থেকে আলাদা। স্বাদে-গন্ধে তা নজর কাড়বে বলেই দাবি গবেষকদের। তা ছাড়া অন্য সুগন্ধী চালের চেয়ে কাটারিভোগের দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। চাষও করেন শুধু দক্ষিণ দিনাজপুরের চাষিরাই। কাজেই বিপণনের বাজারে তুলাইপাঞ্জির মতো তারও একটা জেলাগত বিশেষত্ব তৈরি হতে পারে। |
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার অধীনে ধানের উৎপাদন থেকে প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণনের জন্য জেলা কৃষি বিপণন দফতরকে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, কাটারিভোগ চালের স্বাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে হোটেল, রেল ও বিমানবন্দরের ক্যান্টিনে তার ব্যবহার চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি উপ-অধিকর্তা লক্ষীকান্ত মান্ডি বলেন, “মূলত কুমারগঞ্জ ব্লকে কাটারিভোগ ধান চাষ হয়। এখনও জেলায় সব মিলিয়ে বছরে ৫০০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। উৎপাদন হয় মাত্র প্রায় ৫,০০০ কুইন্ট্যাল চাল। শৌখিন কৃষকেরা মূলত নিজেদের ব্যবহারের জন্যই ওই ধানের চাষ করেন।”
সেই শৌখিনতার স্বাদ দুনিয়াকে চাখাতেই এ বার ধানের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। চাষের এলাকা বাড়িয়ে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুরে আমন ধান চাষের এলাকা প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর। চাষিরা মূলত স্বর্ণ ধানের চাষই বেশি করেন। ধান চাষের উৎপাদন ও লাভের অনুপাতে দেখা যায়, স্বর্ণ ধানের চেয়ে কাটারিভোগ ধান চাষে লাভ প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর তুলাইপাঞ্জি চাল যেখানে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, কাটারিভোগের বাজারদর বড় জোর ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। তাই আগামী বছর দ্বিগুণ এলাকায় কাটারিভোগ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছে মাঝিয়ান কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
রাজ্যজয় করে বিদেশের বাজার ধরতে এখনও বেশ কিছুটা পথ হয়তো যেতে হবে। |