মুখ্যমন্ত্রী জেলায় থাকাকালীন এক সিপিএম নেতা খুনের ঘটনায় বুধবার তেতে উঠল উত্তর দিনাজপুর।
চোপড়া থানা এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের নাজির আহমেদ (৫০) খুনে নাম জড়াল তৃণমূল নেতা সাইন আখতারের নাম। দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। আগুন লাগানো, বাস-গাড়ি ভাঙচুর, জাতীয় সড়কে ঘণ্টা ছ’য়েক অবরোধ, পুলিশ-দমকলের উপরে হামলার ঘটনাও ঘটে। খুনের প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার চোপড়ায় ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম। অভিযোগ মানেননি সাইন আখতার বা তৃণমূল নেতৃত্ব।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ লাঠি চালানোয় জনা পনেরো আহত হন। পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর কথা মানেনি। জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির জন্য ঘটনাচক্রে এ দিন দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত জেলায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চোপড়া অবশ্য তেতে ওঠে তার অনেক আগেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, চোপড়া পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নাজির আহমেদ খুন হন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঝাড়বাড়ি মোড়ে।
ঘটনার সময়ে আশা-কর্মী মমতাজ পারভিনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। সে সময় পিছনে এসে দাঁড়ায় একটি মোটরবাইক। মমতাজের দাবি, মুখে কাপড় বাঁধা এক দুষ্কৃতী কাছ থেকে গুলি চালায়। গলায় গুলি লেগে রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে পড়ে যান তিনি। নাজিরকে আরও একটি গুলি করে মোটরবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় আততায়ী। দলুয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা নাজিরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সমবায়ে কাজ করতেন নাজির। গত পঞ্চায়েত ভোটে চোপড়া-ঝাড়বাড়ি আসনেই হারান সাইনকে। তবে সাইন তখন কংগ্রেসে ছিলেন। ভোটে হেরে যোগ দেন তৃণমূলে। নিহত সিপিএম নেতার ছেলে সোহেল আহমেদের অভিযোগ, “ভোটে হারার বদলা নিতেই সাইন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সুবীর বিশ্বাস জানান সাইন-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ হয়েছে।
পরে বিক্ষোভের জেরে চোপরায় ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের সামনে বেড়ায় আগুন লাগানো হয়। জ্বলন্ত বেড়া ফেলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের দু’টি বাসে ভাঙচুর চলে। সাইন আখতারের এক আত্মীয়ের বাড়ির একাংশ ও গাড়িতে আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ। অবরোধ তুলতে গেলে ঢিল-ইট বৃষ্টির মুখে পড়ে পুলিশ। হামলার মুখে পড়েন দমকলকর্মীরাও। সাইন অবশ্য বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে সিপিএম। সোমবার থেকে রায়গঞ্জে আছি মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে।” উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই।” |