সরকারি প্রকল্পের কাজে নানা ঘাটতির জন্য ফের উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার রায়গঞ্জে কর্ণজোড়ায় ওই জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের সময়েও মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় তাঁদের সতর্ক করেছিলেন। বুধবার প্রথমে রায়গঞ্জে প্রকাশ্য সরকারি সভার পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডিতে প্রশাসনিক বৈঠক ১০০ দিনের কাজ থেকে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে এখনও নানা ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। দুই দিনাজপুরের জেলা প্রশাসনকেই তারপরে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “কাজ ফেলে রাখা চলবে না। তা বরদাস্ত করা হবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ কাজে বাধা দিলেও তা সহ্য করব না। কাজ করব না, করতে দেব না এটা চলতে পারে না। তবে কেউ সহযোগিতা করলে পুরোপুরি পুরোপুরি সহায়তা করা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, ধুঁকতে থাকা রায়গঞ্জ স্পিনিং মিলের পুনর্জীবনের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রকে ওই মিলে পরিদর্শনে পাঠান। পরে তিনি বলেন, “এই মিলের পুনরুজ্জীবনের জন্য উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। ওই মিলের কারও চাকরি যাবে না।” |
উত্তরবঙ্গের সব জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে তাঁরা বাড়তি জোর দিয়েছেন বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মালদহ-বালুরঘাট-কোচবিহার বিমানবন্দর তৈরি নিয়ে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। বাগডোগরা বিমানবন্দরে ট্যাক্স হলিডে করা হয়েছে। আমরা চাই বাগডোগরা থেকে আরও বেশি বিমান চলাচল করুক। মালদহ-বালুরঘাট কপ্টার পরিষেবা চালুর চেষ্টা চলছে। আমরা ঠিক করেছি সে জন্য সরকার ৪০ ঘণ্টার উড়ানের ভর্তুকি দেবে। সরকারের থাকবে ১০ ঘণ্টা, বাকি ৩০ ঘণ্টা থাকবে সাধারণ মানুষের জন্য।” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আগামী ২০ জানুয়ারি শিলিগুড়ির অদূরে ফুলবাড়িতে রাজ্য প্রশাসনের সচিবালয়ের উত্তরবঙ্গ শাখার উদ্বোধন হতে চলেছে।
তবে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল দশা কবে দূর করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও। তিনি বলেন, “বেহাল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক আমরা যতটা সম্ভব সারাচ্ছি। এটা কেন্দ্রের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের করা উচিত। কিন্তু ওঁরা তা ঠিক মতো করছেন না বলে সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও রাস্তা চওড়া করার জন্য জমি পেতেও জটিলতা হচ্ছে। ওই জাতীয় সড়কের হাল তাড়াতাড়ি ফেরানোর জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।”
বিকেলে রায়গঞ্জ থেকে কুশমন্ডি গিয়ে বিডিও অফিসে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। কুমারগঞ্জ ও হিলিতে ১০ দিনের কাজে ঢিলেমির পরিসংখ্যান সামনে রেখে অফিসারদের সতর্ক করে দেন তিনি। দক্ষিণ দিনাজপুরে এনবিএসটিসির একাধিক রুটে বাস চালানো বন্ধ কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন। যত দ্রুত সম্ভব ওই সব রুটে বাস চালানোর নির্দেশও দেন তিনি। তপন ও গঙ্গারামপুরে নদীবাতি পানীয় জল প্রকল্পের কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ৪৩৫ কোটি টাকা চাওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। বুনিয়াদপুরে পুরসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর জন্যও প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির অভিযোগ, “উন্নয়ন নিয়ে ওঁরাই রাজনীতি করেন বলে এতদিন রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হল না। মুখ্যমন্ত্রী যে সমস্ত উন্নয়নের কথা বলছেন, সেগুলি বেশির ভাগই কেন্দ্রের প্রকল্প। এ দিন তা সামনে রেখে রায়গঞ্জে সভা করে সস্তার রাজনীতি করে গেলেন।” প্রসঙ্গত, প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে একটিও কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী!
|