উত্তর দিনাজপুরের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ‘কিছু নেতানেত্রীকে সন্তুষ্ট’ করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, সেই কারণেই এই জেলার সার্বিক উন্নয়ন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই জেলার সদর শহর রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার বারবার বার্তা পাঠানোর পরেও এই অবস্থা চলছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের আধিকারিকদের সে কারণে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে রাজ্য সরকার এই জেলায় এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করে যাবতীয় উন্নয়নের তদারকি করার কথা ভাবতে বাধ্য হবে। |
এ দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে যান মালদহে। সেখানে প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকটি প্রকল্পের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে মালদহে মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজ ঢিমেতালে চলায় তাঁর উদ্বেগ ধরা পড়ে। মালদহ জেলায় শতকরা ১০০ জনের মধ্যে কেন এখনও ৭৬ জন বাড়িতেই প্রসব করান, সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে অফিসারদের প্রচার ও সচেতনতার কাজে গতি আনার নির্দেশ দেন। বিশেষত, মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে মাত্র ১৭ শতাংশ প্রসব হাসপাতালে করানো হয়। সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও সেখানে কেন ৮৩ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মাঝেমধ্যেই হইচই হয়। তা নিয়ে রাজ্যের পক্ষ থেকে একাধিকবার তদন্ত ও সমীক্ষা হয়েছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সেই তথ্যের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মালদহ জেলা প্রশাসনকে জানান, মা-শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আরও বেশি জনকে টেনে আনতে হবে। নাবালিকাদের বিয়ে রোখার কাজেও মালদহ জেলা প্রশাসনকে আরও জোর দিতে বলেন তিনি।
সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের প্রশাসনিক বৈঠকে ১০০ দিনের কাজ-সহ নানা প্রকল্পের পরিসংখ্যান সামনে রেখে গোড়া থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেখানে জলের অভাবে পাট পচাতে না পেরে বহু চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেখানে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে কেন পাট পচানোর ব্যবস্থা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কার্যত ভর্ৎসনাও করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যুক্তি দেওয়া হয়, পঞ্চায়েতের কাছ থেকে উপভোক্তাদের তালিকা এবং কী কাজ করা যেতে পারে সেই ব্যাপারে স্পষ্ট প্রস্তাব অনেক জায়গায় না পাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। যা শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পঞ্চায়েত যদি টালবাহানা করে, তা হলে জেলা প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। |
দু’টি জেলার বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব-সহ রাজ্যের প্রথম সারির অফিসারেরা। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নানা প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের একে একে প্রশ্ন করে নানা পরিসংখ্যান নেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে অবশ্য জেলা প্রশাসনের কর্তারা কেউই সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে ‘কিছু নেতানেত্রীকে সন্তুষ্ট করা’র যে অভিযোগ জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে এনেছেন, তা নিয়ে রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত সরাসরি কিছু বলতে চাননি। মোহিতবাবুর প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে যা বলেছেন তা আমাদের জানার কথা নয়। এটা জেলা প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপার। তা ছাড়া, উনি (মুখ্যমন্ত্রী) তো কারও নাম করেননি।” |
আজ কুশমন্ডিতে মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
আজ, বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন ৮টি ব্লকে ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩৭টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর আড়াইটেয় কুশমন্ডি হাইস্কুল মাঠে জনসভার পর তিনি বিকেল সাড়ে চারটেয় বিডিও-র কনফারেন্স রুমে জেলা প্রশাসনের আধিকরিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকে নিরাপত্তার জন্য আনা হয়েছে এক হাজার সশস্ত্র পুলিশ। এ দিন কুশমন্ডিতে প্রশাসনের তরফে পুলিশ কুকুর দিয়ে সভাস্থল পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রশাসনের নির্দেশে সভামঞ্চের আশপাশের জমির ধান কেটে নেন বাসিন্দারা। বুধবার সকাল থেকে বুনিয়াদপুর থেকে কুশমন্ডির দিকে যানবাহন চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে জেলা পুলিশ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “এক বছর ৩ মাস পর মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন। ওই সময়ে জেলায় পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ, পুরসভা দখলে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে মানুষ উৎসাহিত। জনসভায় লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হবে।” দিনের অনুষ্ঠানের পর মমতা রাতে কুশমন্ডিতে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। এর পর তাঁর মালদহে ফিরে যাওয়ার কথা। |