নেই পরিকাঠামো। অমিল ন্যূনতম পরিষেবাও। সম্ভাবনা থাকলেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের মর্যাদা না-পেয়ে এখন হতাশায় ধুঁকছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের লাগোয়া কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা। ঝোপজঙ্গল ভরা গোটা চত্বর দেখে বোঝার উপায় নেই মেখলিগঞ্জ মহকুমার পুরনো এই সীমান্তবর্তী জনপদ সার্কভূক্ত ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের বাণিজ্য পথ। অথচ দেড় দশক ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ী বাসিন্দারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবি নিয়ে দিল্লি-কলকাতা দৌড়ঝাঁপ করছেন। কিছু না মেলায় তাঁরা এখন ক্ষুব্ধ। |
দেশের শেষ প্রান্ত‘জিরো পয়েন্ট’। তার ও পারে বাংলাদেশের বুড়িমারি। সেখানে অবশ্য ঝাঁ-চকচকে পরিবেশ। চোখ ধাঁধানো অত্যাধুনিক পরিকাঠামো। ওয়্যার হাউস, হিমঘর, সরকারি নানা দফতর সবই এক ছাদের তলায়। এ পারে ঠিক তার উল্টো ছবি। যাত্রীদের বিশ্রামের জায়গা নেই। দরমার বেড়া দেওয়া ঘরে চলছে টাকা ডলারে পাল্টে নেওয়ার কাজ। ওই সমস্ত ঘরে কোনও মতে মাথাগুঁজে বৃষ্টি ও ঠা-ঠা রোদ থেকে বাঁচতে হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৯ সাল থেকে ভারত ও ভুটানের পণ্যসামগ্রী চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসছে তুলো, পোশাক, ফলের রস, বিস্কুট, চিপস, চকোলেট ইত্যাদি। স্থানীয় এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মূলচাঁদ বুচা জানান, দৈনিক গড়ে একশো পণ্য বোঝাই ট্রাক ওই সীমান্ত দিয়ে চলাচল করে। শুধু পণ্যই নয় প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ পারাপার করেন সীমান্ত দিয়ে। অথচ দরমার বেড়া ও টিন দিয়ে তৈরি ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট বর্ষায় জলে ভাসে। এ দশা শুল্ক দফতরেরও। ভাঙাচোরা পুরনো দিনের ঘরবাড়ি নিয়েই কাজ চালাতে হয় পরিকাঠামোর দৈন্যদশা দেখে দফতরের কর্তারা হতাশা গোপন করেননি। যদিও সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন তাঁরা।
বছরের পর বছর এমন অব্যবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ চ্যাংরাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটির কর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন চ্যাংরাবান্ধাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের মর্যাদা দিয়ে কেন প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে না? সংস্থার সভাপতি সুনির্মল গুহ জানান, শুধু বাণিজ্য নয়, পরিকাঠামো গড়ে উঠলে সীমান্ত এলাকায় পর্যটন শিল্পে বিকাশ ঘটবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। সম্ভাবনা থাকলেও কেন উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না সেটা জনপ্রতিনিধিদের কাছেও স্পষ্ট নয়। মেখলিগঞ্জের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক পরেশ অধিকারী বলেন, “পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে কতবার যে আবেদন করেছি তা হিসেব করে বলা মুশকিল। লাভ কিছু হয়নি”
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টা প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক কবে কী করবে সেই ভরসায় না থেকে রাজ্য সরকার কিছু করেনি কেন? তাদের কী কোনও দায়িত্ব নেই? প্রশাসনের কর্তারা জানান, সীমান্তে জমির অভাব নেই। কিন্তু সেখানে কাজ করতে গেলে প্রতিবেশী দেশের অনুমতি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। কয়েক দফায় আলোচনার পরে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। বিডিও অনির্বাণ দত্ত বলেন, “জিরো পয়েন্টের কাছে জমি ব্যবহারের জট কেটেছে। সীমান্তে যাত্রী শেড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। খরচ হবে ৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।” |