দেহ নেওয়া নিয়ে মেডিক্যালে ঘেরাও চিকিৎসকদের
রোগীর মৃতদেহ নেওয়াকে কেন্দ্র করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডের মধ্যেই ৪ ঘণ্টা ধরে মৃতের পরিবারের লোকদের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের গোলমালে পরিষেবা ব্যাহত হল। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলাদের মেডিসিন বিভাগে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটেছে। এ দিন বেলা ১২ টা নাগাদ তিনবাতি এলাকার বাসিন্দা অনন্ত দাস তাঁর স্ত্রী শিখা দেবীর মৃতদেহ আনতে গেলে গোলমালের সূত্রপাত হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, রোগিণীকে মৃত অবস্থায় গত কাল রাতে হাসপাতালে আনা হয়। এই ক্ষেত্রে নিয়ম অনুসারে ময়নাতদন্তের পরই মৃতদেহ নিতে হবে। অথচ পরিবারের লোকেরা দেরি না করে এখনই মৃতদেহ নিতে চায়। তা নিয়ে ওয়ার্ডে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা কাটিকাটি শুরু হয়। রোগীর পরিবারের পরিচিতরা কয়েকজন সে সময় জুনিয়র চিকিৎসকদের ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকরেরা মৃতদেহ আটকে দিলে গোলমাল বাধে। তাঁরা প্রথমে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি তোলেন। পরে ক্ষমা চাইতে বলেন।
ওয়ার্ডের মধ্যে মৃতের পরিচিত অন্তত ২০ জন বহিরাগত এবং একদল জুনিয়র চিকিৎসক জড়ো হয়ে কথা কাটাকাটি চলতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। ওয়ার্ডে পৌঁছন হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস, অধ্যক্ষ অনুপ রায়। তাঁদের সামনেই গোলমাল চলতে থাকে। অসুস্থ রোগীদের একাংশ গোলমালের চিকিৎকার সহ্য করতে না পেরে শয্যা ছেড়ে উঠে ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে সমস্যা মেটাতে আলোচনা করতে বলেন। শেষ পর্যন্ত বেলা ৪টা নাগাদ অভিযুক্তকে ডেকে এনে ক্ষমা চাওয়ানো হলে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছাড়েন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। পুলিশ ৩ জনকে ধরেছে। নিঃশর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া না হলে মৃতদেহ নেবেন না বলে অর পর পাল্টা চাপ দেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। পরে ময়নাতদন্ত করে সন্ধ্যা নাগাদ তারা মৃতদেহ নিয়ে যান।
হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “ওয়ার্ডের মধ্যে এভাবে গোলমাল করা কাম্য নয়। তাতে অন্য রোগীদের সমস্যা হয়। এ সব ব্যাপারে আমরা সবসময়ই চাই ওয়ার্ডের বাইরে দফতরে নিয়ে এসে আলোচনা করতে। এ দিন তা সম্ভব হয়নি।” সুপার জানান, যাদের পরিবারের লোক মারা গিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা অবশ্যই আছে। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসকদের হায়ে হাত তোলা অন্যায়। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বারবার চিকিৎসকদের গায়ে হাত তুলে পার পাওয়া যে যাবে না পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় সে ব্যাপারে একটা বার্তা যাবে।
মৃতার পরিবার সূত্রে জানানো হয়, মঙ্গলবার রাত ৯ টা নাগাদ বাড়িতে চা খেয়ে রান্না করতে যাচ্ছিলেন শিখাদেবী। সে সময় শরীর অসুস্থ বোধ করেন। মাথায় ঘুরে তিনি পড়ে যান। তাকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্বামী অনন্তবাবুর দাবি, “শিখার মৃতদেহ নিতে দেরি হচ্ছিল। আমরা তাড়াতাড়ি করার জন্য বললে জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানান ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ ছাড়া হবে। তাতে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু অকারণে দেরি করা হচ্ছিল। কথা কাটাকাটির সময় কে গায়ে হাত তুলেছে বলতে পারব না।”
এ দিন ওই ওয়ার্ডে কাজ করছিলেন, তুষার সরকার, প্রদীপ বিশ্বাস, পঙ্কজ মণ্ডল, কৌস্তব ভৌমিকের মতো জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তুষারবাবু বলেন, “আগেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর লোকদের হাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের মারধর খেতে হয়েছে। এ দিন ওয়ার্ডে কোনও সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন না। জুনিয়র চিকিৎসকদের সব সামলাতে হচ্ছিল। ময়নাতদন্ত না করিয়ে মৃতদেহ নিতে চাইছিল পরিবারের লোকেরা। তাদের নিষেধ করলে কয়েকজন দেখে নেব বলে গায়ে হাত তোলেন। কর্তৃপক্ষ যথাযত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করলে কাজ করা মুশকিল হবে।” এ দিন ঘটনার পর রোগীর স্বামী এবং অন্যান্য কয়েকজন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেও জুনিয়র চিকিৎসকরা মেনে নেননি। যে ব্যক্তি জুনিয়র চিকিৎসকদের গায়ে হাত দিয়েছেন তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন। রোগীর লোকেরা প্রথমে তাকে না আনলেও পরে ডেকে আনেন। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি দীনেশ রজক বলেন, “আমি ক্ষমা চাইছি। মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়। তাড়াতাড়ি দেহ নেওয়ার কথা জানানোর সময় ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মাত্র।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.