ভাঙাচোরা বাড়ি, নেই পানীয় জল ও সুষ্ঠু পরিষেবা
ঢোলটিকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে ক্ষোভ বাসিন্দাদের
দেওয়ালে বড় বড় ফাটল, ছাদ থেকে মাঝেমধ্যেই খসে পড়ে কংক্রিটের চাঙড়। বাড়ির ভগ্নদশার মতোই পরিষেবাতেও একই অবস্থা। তবু এ ভাবেই চলছে ঢোলটিকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে সুষ্ঠু পরিষেবা না পাওয়ায় তা নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রায়ই বিবাদ বাধে চিকিৎসক থেকে নার্স, কর্মীদের। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে বহুবার স্বাস্থ্য দফতরকে জানানোও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে রোগীদের পাশাপাশি অভিযোগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদেরও।
দক্ষিণ ২৪ পরনার ফলতা ব্লকের নপুকুরিয়া পঞ্চায়েতেরর ঢোলটিকারি গ্রামে প্রায় এক একর জমির উপরে ১৯৭২ সালে চালু হয় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দীর্ঘদিন কোনও সংস্কার হয়নি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের। স্থানীয় বাসিন্দারাও মনে করতে পারলেন না শেষ কবে ভবনের সংস্কার হয়েছে। ফলে সংস্কারের অভাবে ফাটল ধরেছে একতলা ভবনটির দেওয়ালে। যত্রতত্র খসে পড়ছে সিমেন্টের চাঙড়। নিত্য রোগীরা চিকিৎসার জন্য এলেও তাঁদের বা তাঁদের সঙ্গের লোকজনের জন্য পানীয় জলের কোনও নলকূপ নেই। নেই উপযুক্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা। আশপাশের মানুষের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে কোনও পাঁচিল না থাকায় এবং আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর ওই চত্বর দুষ্কৃতীদের আড্ডায় পরিণত হয়। ফলে তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন।
এ তো গেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল পরিকাঠামোর কথা। পরিষেবার দিক থেকেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের করুণ অবস্থা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মী বলতে রয়েছেন একজন নাস, এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও একজন অস্থায়ী কর্মী। নেই কোনও স্থানীয় চিকিৎসক। চিকিৎসক না এলে নিত্য প্রায় দেড়শো থেকে দু’শো রোগীর ভরসা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। ফলে সামান্য বিপজ্জনক অবস্থা দেখলেই পত্রপাঠ রোগীকে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় হরিশপুর, শ্বেতকেল্লা, শতল, হেমবেড়িয়া, মাকনা, কলসা, বনমালিপুর-সহ স্থানীয় ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের মানুষ অসুস্থ হলে অবলম্বন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রই। কিন্তু তারই এমন অবস্থা হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলে সকাল ৯টায়। চলে দুপুর ২টো পর্যন্ত। ফলে তার পরে কেউ অসুস্থ হলে বিপাকে পড়তে হয় তার পরিবারকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক দশকের পুরনো এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে একেবারেই নজর নেই প্রশাসনের। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও শয্যার ব্যবস্থা নেই। ভোট এলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর কথা বলেন। কিন্তু সে সব যে নেহাতই কথার কথা তা তাঁরা প্রতিদিনই টের পাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যার বন্দোবস্ত করা হলে তাঁদের আর রাতবিরেতে ছুটতে হয় না ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে।
ঢোলটিকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কিশোরীমোহন জানা বলেন, “ওষুধপত্র ঠিকঠাক থাকলেও পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নলকূপ না থাকায় প্রায় ১৫ মিনিট হেঁটে কলসা গ্রাম থেকে পানীয় জল আনতে হয়। কোনও কারণে চিকিৎসক না এলে রোগী দেখা থেকে তাঁদের ওষুধপত্র দেওয়া সবই সামলাতে হয়। এতে রোগীরা বা তাঁর বাড়ির লোকজনের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ধীমান নিয়োগী বলেন, “আমি দু’মাস আগে ফলতা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়েছি। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি আমাকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রও সামলাত হয়। চেষ্টা করি নিয়মিত আসার। কিন্তু একা সব সামলাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে।”
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও ফলতার বিধায়ক তৃণমূলের তমোনাশ ঘোষ বলেন, “ঢোলটিকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১০ শয্যার করা এবং সেখানে স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরে বলা হয়েছে। ভবন সংস্কারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফলতার বিএমওএইচ সুরজিৎ দাস বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য নতুন ভবন তৈরির কাজ চলছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা হবে।”
এখন যে অবস্থায়
• দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বাড়ির অবস্থা বিপজ্জনক।
• নেই কোনও স্থায়ী চিকিৎসক।
• নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা।
• চিকিৎসক না এলে রোগীদের ভরসা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।
• অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় চিকিৎসক, নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.