পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর মামলার শুনানির সময়ে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গও টানলেন।
শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় ২০১০-এ এক অভিযুক্তের মৃত্যু নিয়ে বুধবার মামলার শুনানির সময় বিচারপতির মন্তব্য, “সভ্য দেশে পুলিশি হেফাজতে কারও মৃত্যু হয় না। এ রাজ্যে প্রতিদিন পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে।” তাঁর সংযোজন, “এখানে রাজনৈতিক দল পুলিশকে ব্যবহার করে। যে কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হওয়ার পরেই সরকার তৈরি হয়। সরকারের উচিত আরও দায়িত্বশীল হওয়া।”
২০১০-এর ২৭ নভেম্বর গৌতম পাল নামে এক ব্যক্তিকে মোটরবাইক চুরির অভিযোগে প্রধাননগর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। ২৯ নভেম্বর পুলিশ লক-আপে প্রধাননগরেরই বাসিন্দা ওই যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ দাবি করে, গৌতম আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় বিক্ষোভ দেখান। এলাকায় পথ অবরোধও করা হয়। গৌতমকে পিটিয়ে মারা হয়েছে এই অভিযোগে প্রধাননগর থানায় এফআইআর করে তাঁর পরিবার। চাপের মুখে প্রধাননগর থানার সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বদলি করে দেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, গৌতমবাবুর পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ২০১১ সালে মামলার তদন্ত-ভার সিআইডি-কে দেওয়া হয়। চার্জশিটে সিআইডি-ও দাবি করে, গৌতম কোনও ভাবে আত্মহত্যা করেছেন।
গৌতমের দাদা জিতেনবাবু চলতি বছরে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। বুধবার সেই মামলার ‘ভিডিও ফুটেজ’ দেখে হাইকোর্ট। এই বিষয়ে সমস্ত নথিপত্র আজ, বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে জমা দিতে বলেছেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। “পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ঘটছে না। তার ফলে পুলিশের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে”, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যে আমলের ঘটনা সেই সময়ে শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ‘মামলাটি বিচারাধীন’ বলে মন্তব্য করতে চাননি। ২০১০-এ বিরোধী দলে থাকা এখন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পরে তার প্রতিলিপি জোগাড় করা হবে। তা খুঁটিয়ে দেখা হবে। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” দার্জিলিং জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ভাল করে তদন্তের জন্যই মামলাটি সিআইডি-র হাতে দেওয়া হয়। যে অফিসারদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গেই বদলি করা হয়েছিল, যাতে তদন্ত প্রভাবিত করার সুযোগ না থাকে। হাইকোর্ট যে নির্দেশ দেবে, তা মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
|