আদ্রায় বৃহন্নলা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আর এক বৃহন্নলাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম রিনা খাতুন ওরফে রাজা খান। বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার কাঁকিনাড়ার গুপ্তিবাগান এলাকায়। মঙ্গলবার রাতে আদ্রা স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকে বছর চৌঁত্রিশের ওই বৃহন্নলাকে ধরেছে পুলিশ। বুধবার তাঁকে রঘুনাথপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক (এসিজেএম ) রোহন সিংহের এজলাসে হাজির করানো হলে ধৃতের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।
গত ১০ নভেম্বর সকালে আদ্রা রেলশহরের সাপ্তাহিক হাটের মধ্যেই এক দুস্কৃতী গুলি করে খুন করেছিল আদ্রার বাসিন্দা সুভাষ টুডু ওরফে চাঁদনি নামে এক বৃহন্নলাকে। খুনের কারণ হিসাবে পুলিশ প্রথম থেকেই বৃহন্নলাদের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের বিষয়ে জানিয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সেই সময়েই সামনে এসেছিল একদা আদ্রার বৃহন্নলাদের গোষ্ঠীর প্রধান রিনা ওরফে রাজা খানের নাম। ধৃত রিনা এলাকায় চাঁদনির বিরুদ্ধ গোষ্ঠী হিসাবেই পরিচিত। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “ধৃত বৃহন্নলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার বিষয়ে বিশদে জানার চেষ্টা হচ্ছে।” যদিও এ দিন রিনা দাবি করেন, তিনি ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে আদৌ জড়িত নন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সুভাষ আদ্রায় আসার আগে রিনাই এলাকায় বৃহন্নলাদের গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন। পরে এলাকা ছাড়া হতে হয় তাঁকে। জগদ্দল থানার কাঁকিনাড়া এলাকায় বড় হওয়া রিনা আদ্রা থেকে ওই এলাকাতেই ফিরে যান। কিন্তু, তাঁর বরাবরই নজর ছিল আদ্রার উপরে। পুলিশের দাবি, এলাকার দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ছিলেন রিনা। যদিও সুভাষের জন্য বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি। আগেও সুভাষের উপরে হামলা হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে রিনা জড়িত কি না, তা -ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার রাতে আসানসোল থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিজের এক বিশ্বস্ত সঙ্গীকে নিয়ে আদ্রায় ঢুকেছেন রিনা, এই মর্মে বিশেষ সূত্রে খবর পায় পুলিশ। আদ্রা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ এর পরেই রিনাকে গ্রেফতার করে। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আদ্রায় ঢোকার আগে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ায় রিনার মূল শাগরেদকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়নি। তবে, চাঁদনি খুনের ঘটনায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশ মনে করছে।
রিনা নামের বৃহন্নলাকে গ্রেফতারের পরে তাঁকে থানার কোন হাজতে রাখা হবে, তা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে বিপাকে পড়েছিল পুলিশ। রাতে আদ্রা তদন্ত কেন্দ্রের মধ্যে পুলিশ পাহারায় তাঁকে রাখা হয়। এ দিন আদালতে তোলার সময়েও একই সমস্যা। শেষে আদালতের পুরুষ বা মহিলা, কোনও লকআপেই তাঁকে না রেখে এক পুরুষ ও এক মহিলা পুলিশকর্মীর পাহারায় রিনাকে হাজতের বাইরে রাখা হয়।
বিচারক অবশ্য পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ওই সময়ে ধৃতের সঙ্গে এক মহিলা পুলিশ কর্মীকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, ঘটনা হল আদ্রা তদন্ত কেন্দ্রে মহিলা হাজত না থাকায় সমস্যায় পড়েছে পুলিশ। এসডিপিও বলেন, “বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী ধৃত বৃহন্নলার সঙ্গে মহিলা পুলিশকর্মীকে রাখা হচ্ছে। কী ভাবে, কোথায় ধৃতকে রাখা হবে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |