বৃহস্পতিবার রাত থেকে ছেলের আর ফোন আসেনি। মিজোরামের জঙ্গলে কাজ করতে যাওয়া ছেলেকে নিয়ে তাই উদ্বেগ ছিলই। কিন্তু সেই জঙ্গলে ছেলের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবরটা আসার পরে আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না ইন্দাসের মণ্ডল পরিবারের সদস্যেরা।
দিল্লির একটি সংস্থার কর্মী হিসেবে মিজোরামের তুইপুইবাড়ির জঙ্গলে মোবাইল টাওয়ার সারানোর কাজ করতে গিয়েছিলেন ইন্দাসের দীপ মণ্ডল। শুক্রবার জঙ্গলে ঢোকার পর থেকে তিনি ও গাড়ির চালকের সন্ধান আর মিলছে না। পরিবারের কাছে পরে সংস্থা সূত্রে খবর এসেছে, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে শেষ তাঁদের সঙ্গে দীপের যোগাযোগ হয়েছিল। তার পর থেকে কোনও খবর নেই। রবিবার ওই জঙ্গলে ঢুকে খালি গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু দীপ ও গাড়িটির চালকের সন্ধান মেলেনি। এই খবর পাওয়ার পর থেকে উৎকণ্ঠা বেড়ে গিয়েছে মণ্ডল বাড়িতে। বুধবার দীপের পিসতুতো দাদা অর্ণব মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে যান ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে। সেখানে তাঁরা দীপকে উদ্ধার করে নিয়ে আনার জন্য লিখিত আর্জি জমা দিয়েছেন। অর্ণব বলেন, “ভাই কী অবস্থায়, কোথায় রয়েছে বুঝতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আর্জি তিনি ব্যক্তিভাবে ভাইকে উদ্ধারে উদ্যোগ নেন।”
দীপের বাবা নিখিল মণ্ডল এখনও ছেলের খবর স্ত্রী অঞ্জনাদেবীকে জানাননি। দাদার খবর না পেয়ে মুষড়ে পড়েছেন দীপের একমাত্র বোন মধুমন্তী ওরফে রিমা। ইন্দাস কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মধুমন্তী বলেন, “একদিন অন্তর দাদা আমাকে ফোন করত। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ দাদা ফোন করে বলেছিল, পরের দিন মিজোরামে যাব। সেখানে দিন চারেকের কাজ রয়েছে। গুয়াহাটিতে ফিরে আমাকে ফোন করবে বলেছিল।” মধুমন্তী জানান, এর পর থেকে তাঁরা আর দীপের ফোন পাননি। রবিবার তিনি নিজে দীপের মোবাইল নম্বরে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ হয়নি। এরপর তিনি এক পিসতুতো দাদাকে ফোন করে দীপের খবর নেওয়ার জন্য বলেন। পরে তাঁদের এক আত্মীয় খবর দেন, দীপের কোম্পানি থেকে জানা গিয়েছে, মিজোরামের জঙ্গল থেকে তাঁরা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন।
কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছেন দীপ? এই প্রশ্নই এখন সারা দিন ভাবাচ্ছে তাঁর পরিবারের লোকেদের। দীপের কাকা বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “কী ভাবে এমনটা ঘটল তাই আমরা বুঝতে পারছি না। ওকে কেউ আটকে রেখেছে কি না তাও জানতে পারছি না। এর ফলে আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।” বোন মধুমন্তী বলেন, “দাদাকে খুঁজে বের করার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েছি। দাদা সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে আসুক, এটাই আমরা চাইছি।”
পরিবার সূত্রের খবর, গত বছর ইন্দাস কলেজ থেকে বিএ পাশ করে দীপ কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এক দাদার কাছে কাজ শিখে টেলিকম সংস্থায় যোগ দেয়। দুর্গাপুজোর আগে তিনি দিল্লির সংস্থা টেলিকম নেটওয়ার্ক সলিউশনের কলকাতার অফিসে কাজে যোগ দেন। পুজোর সময় বাড়িতে এসেছিলেন। পরে ওই সংস্থা তাঁকে গুয়াহাটিতে যেতে বলে। ভাইফোঁটার দিন গত ৫ নভেম্বর দুপুরে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে দীপ গুয়াহাটিতে রওনা দেন। গত শুক্রবার সেখান থেকে তিনি মিজোরামের মামিট জেলায় যান।
চাষাবাদের সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি প্যাথলজি ল্যাবে কাজ করেন নিখিলবাবু। তাঁর কথায়, “বাড়ির অবস্থা ভালো নয় বুঝেই দীপ ওই কাজে যোগ দিয়েছে। গুয়াহাটি যেতে আমরা ওকে বারণ করেছিলাম। কিন্তু শীঘ্রই ফিরে আসবে বলে গিয়েছে। কিন্তু এমনটা যে হবে কে জানত? ছেলের নিখোঁজের খবর শুনে আমার স্ত্রী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বেন। তাই আমরা তাঁকে কিছু জানাইনি এখনও।”
এলাকার বিধায়ক গুরুপদ মেটে ইতিমধ্যে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানিয়েছেন। গুরুপদবাবু বলেন, “ওই যুবকের খোঁজ পাওয়ার জন্য আমরা সর্বতো ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মিজোরাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশকুমার বলেন, “দীপ মণ্ডলের কোনও হদিশ এ দিন পর্যন্ত মিজোরাম পুলিশ দিতে পারেনি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই জেলার এসপি -র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। খবর পেলেই ওর বাড়ির লোকদের জানানো হবে।” |