বধূর দেহ উদ্ধারে গিয়ে জনতার ইটের ঘায়ে জখম হয়েছিলেন বনগাঁর এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত। কলকাতার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার পরে বুধবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। মঙ্গলবার রাতে তাঁর সঙ্গে নার্সিংহোমে দেখা করতে গিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
পুলিশের উপরে হামলায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই বনগাঁ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অভিজিৎ কাপুড়িয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয় আরও দু’জনকে। সোমবার বনগাঁর মুস্তাফিপাড়ায় পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় এই নিয়ে ধরা পড়ল ৮ জন। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। তৃণমূল ক্ষমতায় আছে বলেই দলের কেউ অন্যায় করলে তাঁকে আড়াল করা হবে না।”
সোমবার দুপুরে বনগাঁ থানায় এসে মৃন্ময় দত্ত নামে স্থানীয় এক যুবক দাবি করেন, গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে তিনি খুন করেছেন স্ত্রী নুপূরকে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই মৃন্ময়বাবুর বাড়ি, গোডাউনে ভাঙচুর চালায় জনতা। মৃন্ময়ের বাবা মলয়, মা মধুমিতা ও বোন মিমিকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাধা দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। রূপান্তরবাবু ছাড়াও জখম হন গাইঘাটার ওসি এবং আরও ১২ জন পুলিশকর্মী। আশপাশের কয়েকটি থানার পুলিশ হাজির ছিল আগেই। তবে বনগাঁর আইসি চন্দ্রশেখর দাস সরকারি কাজে অন্যত্র গিয়েছিলেন। জনতার আক্রমণের মুখে প্রাথমিক ভাবে পিছু হঠে পুলিশ। পরে হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় তারা। মৃন্ময় ও তার বাবা-মা-বোনকে পরে গ্রেফতার করা হয়।
ওই দিন পুলিশকে যে ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে, তাতে বিস্মিত বনগাঁবাসীর একাংশ। রূপান্তরবাবুর বিরুদ্ধে পুরনো কোনও আক্রোশই এই ঘটনাকে ত্বরান্বিত করেছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বছর খানেক আগে বনগাঁর এসডিপিও পদে যোগ দেন এই তরুণ অফিসার। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুরু থেকেই পাচারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করছিলেন তিনি। সে কারণে দুষ্কৃতীদের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। বনগাঁর (উত্তর) তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পুলিশের উপরে এমন হামলার ঘটনা এই এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি। উনি (রূপান্তর) পাচারকারী এবং দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন। পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় ঠিক কারা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল, তা আমরা দলীয় ভাবেও খতিয়ে দেখছি।”
অভিজিৎবাবুকে গ্রেফতারের পিছনে দলের একাংশের মদত আছে কিনা, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর গ্রেফতারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বনগাঁ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান দলের বেশ কিছু ছাত্রনেতা ও কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে অভিজিৎবাবু দাবি করেছেন, “গণ্ডগোল হচ্ছে জেনে পুলিশকে যাতে বাধার মুখে পড়তে না হয়, সে কারণেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জনতার ছোড়া ইটে আমি নিজেও জখম হয়েছি। গোলমালে কী ভাবে ইন্ধন জোগালাম, বুঝতে পারছি না।” তৃণমূলের বনগাঁ শহর সভাপতি শঙ্কর আঢ্যও বলেন, “পরিস্থিতি শান্ত করতে আমিই অভিজিৎবাবুকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছিলাম। উনি পুলিশকে সহযোগিতাই করেছেন।” অভিজিৎবাবুকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে কিনা, তা দলীয় ভাবে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। |