ফের একটা ওয়ান ডে সিরিজ জয়। এই নিয়ে টানা ছ’টা।
বুধবার গ্রিন পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেটে জয়ের সঙ্গে নিজেদেরই গড়া রেকর্ডটা ছুঁয়ে ফেলল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, ২০০৮-’০৯-এও ভারত টানা ছ’টা ওয়ান ডে সিরিজ জিতেছিল। প্রশ্ন হল, দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতে কি নতুন একটা রেকর্ড গড়তে পারবে ভারত?
ওখানে যুদ্ধটা সমানে সমানে। এই সিরিজের চেয়ে ওখানে লড়াইটা যে অনেক হাড্ডাহাড্ডি হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। কিন্তু তাও বলব, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু ওয়ান ডে দল হিসেবে মোটেই খারাপ নয়। সে জন্যই ভারত একটা ভাল প্রস্তুতি সিরিজ সেরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছে, যেখানে আগে ওয়ান ডে সিরিজই খেলতে হবে।
ওয়ান ডে সিরিজে ক্যারিবিয়ানরা কিন্তু বেশ ভাল খেলেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ই তার প্রমাণ। কিন্তু উল্টো দিকের দলটা যে ভারত। এক নম্বরের সঙ্গে সাত নম্বর দলের লড়াইটা যে একেবারে সমানে সমানে হবে, তা আশা করা উচিত নয়।
বুধবার কানপুরে ক্যারিবিয়ানদের হারতে হল ভারতীয়দের অসাধারণ বোলিংয়ের কাছে। ওদের আর কুড়ি রান করতে দিলেই ভারত হয়তো রান তাড়া করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ত। সেটাই হতে দিল না শামি, ভুবি, অশ্বিনরা। গ্রিন পার্কের উইকেট ব্যাট করার পক্ষে খুব একটা সুবিধাজনক না হওয়া সত্ত্বেও পাওয়েল-স্যামুয়েলসের ১১৭-র পার্টনারশিপ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। তবে রানরেটটা তেমন ভাল ছিল না, এটাই যা রক্ষে। এই পার্টনারশিপের জবাব, যুবরাজ ও শিখরের ১২৯ রানের জুটি। সিরিজ জয়ের পাশাপাশি যুবরাজের রানে ফেরাও নিশ্চয়ই ধোনিকে অনেকটা স্বস্তি দেবে। |
চেনা যুবরাজের ঝলক। ছবি: পিটিআই। |
দক্ষিণ আফ্রিকাগামী ভারতীয় দলে বেশির ভাগ সদস্যই সিনিয়র দলের সঙ্গে প্রথম ওখানে যাচ্ছে। তাই ওখানে খেলার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে, তাদের ফর্মে থাকা খুব জরুরি। যুবরাজের ফর্মে ফেরাটা তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এমনিতে যুবি আগের চেয়ে নিজেকে পাল্টে ফেলেছে। উইকেটে টিকে থেকে ব্যাট করার প্রবণতা ওর মধ্যে এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ, ও যে ক্রিকেট জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে, তা বুঝতে পেরেছে যুবি। আগের মতো সেই বেপরোয়া ভাবটা ওর মধ্যে এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। আগের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত, পরিণত। এ দিনও কোনও ভুল শট খেলতে দেখলাম না ওকে। স্টেইন, ফিলান্ডার, মর্কেলদের বিরুদ্ধে এই যুবিকেই তো দরকার।
এই সিরিজের আর একটা প্রাপ্তি মহম্মদ শামির পারফরম্যান্স। কয়েক মাস আগে ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল ও। ওখানকার আবহাওয়া, উইকেট সম্পর্কে ধারণা নিয়ে ফিরেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট, ওয়ান ডে সিরিজের পারফরম্যান্স ওর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। এগুলো ওখানে ভীষণ কাজে লাগবে। ঠিকঠাক সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে শামির দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ‘সুপারহিট’ হওয়ারই কথা। রোহিত-শিখরের ওপেনিং জুটিও এখন ‘সেট’ হয়ে গিয়েছে। সুরেশ রায়না রানে ফিরছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অনেকগুলো প্লাস পয়েন্ট নিয়ে যাচ্ছে ভারত। যেগুলো এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকেই পাওয়া গেল।
তা হলে কি শুধুই ফুল? ধোনির সামনে কি কোনও কাঁটা নেই?
অবশ্যই আছে। যে সমস্যা সঙ্গে নিয়েই জো’বার্গের বিমানে উঠবে ধোনিরা, তা হল ডেথ ওভার বোলিং। এই সমস্যাটা কিন্তু থেকেই গিয়েছে। মাথায় রাখতে হবে যে, ওয়ান ডে-তে বিশ্বের সেরা পাঁচ ও ছ’নম্বর ব্যাটসম্যান কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা দলেই রয়েছে। এবি ডে’ভিলিয়ার্স এবং ডেভিড মিলার কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে বড়সড় আতঙ্ক। এই আতঙ্ক কাটাতে হলে ভারতীয় বোলারদের শেষ দিকে ভাল বল করতেই হবে। যেটা বুধবার পোর্ট এলিজাবেথে পাকিস্তান বোলারদের করতে দেখলাম।
বুধবার হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতাতে না পারলেও কয়েক দিন আগেই শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচ নম্বরে নেমে ১১৫-র অপরাজিত ইনিংস খেলেছে এবি। ওদের রুখতে হলে ডেথ বোলিংটা ঠিকঠাক হওয়া খুব দরকার। বাকিটুকু যেমন চলছে, তেমন চললে স্টেইনদের দেশে গিয়ে ভালই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে ধোনিরা।
|