সহজেই মিলবে যাবতীয় নথি
সরকারি সম্পত্তির হিসেব জিপিএস-এ
জেলায় কতগুলি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে? অঙ্গনওয়াড়ির সংখ্যাই বা কত? কোন কেন্দ্র কোন ব্লকের কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অবস্থিত? সেখানে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের সুবিধে রয়েছে কি?
এই সব তথ্যই এ বার নথিভুক্ত হচ্ছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) পদ্ধতির মাধ্যমে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র সংক্রান্ত নানা তথ্য ইতিমধ্যে জিপিএসে নথিভুক্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ধীরে ধীরে সরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান— সব সব ধরনের সম্পত্তির হিসেবই জিপিএসে নথিভুক্ত করা হবে। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির কথায়, “প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে একনজরে যাবতীয় তথ্য পেতেই এই উদ্যোগ।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সব দফতরের যাবতীয় কাজের নথি সংগ্রহ করে তা জিপিএসে নথিভুক্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে। সবে কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য একটি কেন্দ্রও গড়া হয়েছে। সেখানে নতুন কাজের পাশাপাশি পুরনো সব ধরনের তথ্যও নথিভুক্ত করার কাজ চলছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত তথ্য জিপিএসে সংগ্রহ করার কাজ শুরু হতেই দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত ছবিটা সামনে আসছে। দেখা যাচ্ছে সব এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্কুল নেই। যেখানে নিয়মমাফিক ২ কিলোমিটারের মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল বা মাধ্যমিক শিক্ষা (এমএসকে) কেন্দ্র থাকার, সেখানে কোথাও রয়েছে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে, কোথাও সাড়ে ৫ কিলোমিটার। যেমন বিনপুর-২ ব্লকের চিরুগোড়া কুইলিপালে প্রাথমিক স্কুল থাকলে কিন্তু কোনও আপার প্রাইমারি বা এমএসকে নেই। সেখান থেকে এমএসকে-তে যেতে হলে ৩.৯৮ কিলোমিটার দুরে চড়কাপাহাড়িতে যেতে হবে। অথবা ৪.৫৫ কিলোমিটার দূরে বোষ্টমপুরে যেতে হবে!
জিপিএসে তথ্য সংগ্রহ হলে প্রশাসনের কাছে বাস্তব ছবিটা স্পষ্ট হবে। আর তার ফলে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ টাকা পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা। সাঁকরাইল ব্লকের বৈচা এমএসকে-র সম্প্রসারক অঞ্জন দে বলেন, “নতুন ক্লাসঘর তৈরির জন্য এক সময় হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল। সে জন্য টাকা পেয়েছি। কিন্তু এখনও পাঁচিল দেওয়ার টাকা পাইনি। সরকার নিজ উদ্যোগে সব নথি রাখলে আমাদের বারবার জানানোর প্রয়োজন হবে না। প্রশাসনও তথ্য মিলিয়ে প্রয়োজন যাচাই করতে পারবেন।” মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাড়ুয়া এমএসকের সম্প্রসারক সুজিত ঘোষেরও বক্তব্য, “এটা আমাদের পক্ষে ভীষণ ভাল হবে। আমার এমএসকে-তে কম্পিউটার চালুর জন্য ঘর করেছি। কিন্তু কম্পিউটার না পাওয়ায় তা কাজে লাগছে না। এ সব তথ্য প্রশাসনের কাছে থাকলে উন্নয়নের অর্থে জন্য বেশি ঘুরতে হবে না।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জিপিএসে যাবতীয় সম্পত্তির নথি থাকলে দু’টি সুবিধে হবে। প্রথমত, যাবতীয় নথির হদিস পাওয়া সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, জিপিএসে নথিভুক্তির পর যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হবে। ফলে, বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কেউ সেই নথি দেখতে পাবেন। এর ফলে কারচুপিও আটকানো যাবে। সরকারি নানা প্রকল্পে মাঝেমধ্যে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিশেষত একশো দিনের কাজ প্রকল্পে একই পুকুর একাধিক বার খনন বা সংস্কার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, খড়্গপুর-১ ব্লকের গোপালী মৌজায় একটি পুকুর একশো দিনের প্রকল্পে সংস্কার করা হয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে, ওই একই পুকুর ভূমি সংরক্ষণ দফতরের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়। পুকুরটি আবার উদ্যান পালন দফতরও সংস্কার করেছিল।
মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের প্রকল্পে নতুন করে পুকুর কাটা নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছিল। পুকুর কাটার পর যত দূরে মাটি ফেলার কথা ছিল তা ফেলা হয়নি। যে পরিমাণ মাটি কাটার কথা ছিল, তা-ও হয়নি। তদন্তে তা ধরা পড়ে। জিপিএসে তথ্য নথিভুক্ত হলে এই ধরনের কারচুপি ঠেকানো যাবে বলেই মনে করছে প্রশাসন। কারণ, একবার সংস্কার বা খননের পরই পুকুরের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ-সহ যাবতীয় নথি ওয়েবসাইটে চলে আসবে। ফলে, এই প্রকল্পের কাজ বারবার দেখিয়ে টাকা নয়ছয় আটকানো যাবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আরও বিশদে তথ্য সংগৃহীত হবে। একটি স্কুল কোন কোন প্রকল্পে কত বছরে ক’টি অতিরিক্ত ক্লাসঘর তৈরি করেছে, সেই ক্লাসঘর কী ভাবে তৈরি করা হয়েছে, ছবি-সহ নথি সংগৃহীত হবে। সম্প্রতি কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্লাসঘর তৈরির টাকায় অন্য কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল। জিপিএসে তথ্য সংগৃহীত হলে এমন ঘটনা আটকানো যাবে।
এ ভাবেই কোথায় সরকারি অফিস রয়েছে, ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি)-এ কোথায় কী কাজ হয়েছে, কোথায় সেতু নির্মাণ হয়েছে, কোন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ-পানীয় জল নেই, ছবি-সহ সব তথ্য রাখা হবে। জিপিএসে নথিভুক্ত হওয়ার পর মাউসে ক্লিক করলেই যাবতীয় তথ্য মিলবে। যে তথ্য জেলার প্রশাসনিক কর্তারা তো বটেই ওয়েবসাইটে দেওয়ার পর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকেরাও তা দেখতে পাবেন। আর তা থেকেই সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা বুঝতে পারবেন কোন খাতের টাকায় কী কী কাজ হচ্ছে। তার গুণগত মানই বা কী রকম। উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে উন্নয়নের কাজে স্বচ্ছতা ও গতি, দুই-ই বজায় থাকবে বলে আশা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.