লাঠি-ঝাঁটা হাতে একের পর এক চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দিলেন আদিবাসী মহিলারা।
বুধবার সকালে গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের কানাইপুর গ্রামের আদিবাসী মহিলারা নিজেদের গ্রাম এবং সংলগ্ন মিশন মোড় এলাকায় এই অভিযান চালান। ঝাঁটা-লাঠি উঁচিয়ে শ’খানেক রণরঙ্গিনী মহিলার তাড়া খেয়ে পালায় বেআইনি চোলাই কারবারিরা। মদ খেয়ে মাতলামো করায় নিজের স্বামী বা ছেলেকেও মারতে কসুর করেননি তিতিবিরক্ত প্রমিলা বাহিনী। পরে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আরামবাগ-বালি দেওয়ানগঞ্জ রাস্তা ঘণ্টা খানেকের জন্য অবরোধ করেন তাঁরা। মদ বানানোর সরঞ্জাম রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। চোলাইয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানোর পুলিশি আশ্বাস মেলায় অবরোধ ওঠে। মদ তৈরির সরঞ্জাম হিসাবে স্থানীয় দোকানগুলি থেকে যাতে গুড় বিক্রি করা না হয়, সে জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছেন কবিতা টুডু, মাধবী টুডু, নায়িকা মাণ্ডি, চাঁপা টুডুর মতো মহিলারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বালি অঞ্চলের কানাইপুর ও মিশন মোড় এলাকায় প্রায় দেড়শো চোলাই মদের ঠেক আছে। স্থানীয় বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র পরিবারের। দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চলে। কিন্তু রোজগারের টাকার বেশির ভাগটাই বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা মদের পিছনে উড়িয়ে দেন বলে জানিয়েছেন মহিলারা। দিন-রাত ধরে চলে চোলাইয়ের কারবার। |
চোলাই বিক্রির সরঞ্জাম আটকে পথ অবরোধে সামিল প্রমিলা
বাহিনী। বুধবার গোঘাটে তোলা মোহন দাসের ছবি।
|
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, আবগারি দফতর ও পুলিশ বছরে এক-দু’বার বুড়িছোঁয়া অভিযান চালায়। চোলাইয়ের আড্ডাগুলি পুলিশ এসে ভেঙে দিলেও দু’দিন যেতে না যেতেই ফের সেগুলি গজিয়ে ওঠে।
এ দিন অভিযানে নেতৃত্বে থাকা মাধবী টুডুর অভিযোগ, “গায়ে-গতরে না খাটলে আমাদের এলাকার বেশির ভাগ মানুষেরই পেট চলে না। জমিজমা অনেকের নেই। আবার যাদের আছে, নেহাতই কম। কিন্তু এত পরিশ্রমের টাকা বেশিরভাগটাই চোলাই খেয়ে সাবাড় করে পুরুষমানুষগুলো।”
মহিলাদের অভিযোগ, একে তো সংসারে হাঁড়ির হাল। তার উপরে মদ খেয়ে বাড়িতে ফিরে অশান্তি বাধায় পুরুষেরা। বৌ-ছেলে-মেয়েকে মারধর করে। অসুখ-বিসুখে ভুগে অল্প বয়সে মারাও যায় অনেকে। নানা কারণে গত ৭ দিনে আরামবাগ হাসপাতালে ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত-পুলিশ কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে মহিলাদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, “বাধ্য হয়ে আমারা দল বেঁধে সব ভেঙে দিয়েছি। মদ কারবারিরা দৌড়ে না পালালে পেটাতাম।”
এ দিন স্ত্রী সন্ধ্যার হাতে মার খেয়েছেন স্বামী বছর পঞ্চাশের যুধিষ্ঠির মান্ডি। সকাল সকাল এ দিন তত ক্ষণে পেটে দু’পাত্তর পড়ে গিয়েছিল তাঁর। মার খেয়ে নেশা ছুটেছে। বললেন, “মারধর করে ঠিক কাজ করে নাই। তবে এমনিতে কাজটা ভুল কিছুও হয়নি।”
মহিলাদের ঐ উদ্যোগের প্রশংসা করে আবগারি দফতরের আরামবাগের ওসি রামকৃষ্ণ কর বলেন, “দিন দশেক আগেই কানাইপুর ও মিশন মোড়ে আমরা বেআইনি মদের ঠেক ভাঙচুর করে এসেছি। কিন্তু কাজের কাজ বিশেষ কিছু হয়নি। ওই মহিলাদের মতো স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের মানুষ উদ্যোগী হলে তবেই চোলাই পুরোপুরি উচ্ছেদ সম্ভব।”
আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় অবশ্য বলেন, “মহকুমায় ধারাবাহিক ভাবেই চোলাই উচ্ছেদে অভিযান হচ্ছে।” |