দমকলকেন্দ্র সরছে, সায় নেই চুঁচুড়াবাসীর
বার জমি না পেয়ে হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়া থেকেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দমকল কেন্দ্র। স্বাধীনতার আগে থেকেই ভাড়া বাড়িতে চলে আসা এই কেন্দ্রটিকে স্থায়ী জায়গা দিতে ডান-বাম কোনও পক্ষই উদ্যোগী হয়নি। অগত্যা কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহারের অযোগ্য ওই ভাড়াবাড়ি থেকে সরে যাচ্ছে কেন্দ্রটি। রাজ্য দমকল ও জরুরি পরিষেবা দফতর সূত্রের খবর, চন্দননগর বা ভদ্রেশ্বরে ওই কেন্দ্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ওই দুই জায়গাতেই অবশ্য দমকল কেন্দ্র রয়েছে।
রাজ্য দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “বর্তমান ভবনটি অন্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়েই অন্য জায়গায় কেন্দ্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জমি পেলে চুঁচুড়াতেই নিজস্ব ভবন তৈরি করা সম্ভব হত।” জেলাশাসক মনমীত নন্দার বক্তব্য, “এই মূহূর্তে দমকলের নতুন কেন্দ্র গড়ার মতো খাস জমি চুঁচুড়ায় পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জমি পাওয়া গেলে নতুন ভবন গড়ে দেওয়া হবে। আপাতত কর্মীদের বিপদ থেকে রেহাই পেতে কেন্দ্রটি অন্যত্র সরানো ছাড়া গত্যন্তর নেই।”
এই হাল হয়েছিল দমকলকেন্দ্রের। ছবি: তাপস ঘোষ।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪৩ সালে চুঁচুড়ার পিপুলপাতিতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে দমকল কেন্দ্র চালু হয়। সেই থেকে ওখানেই কার্যালয়টি চলে আসছে। বেশ কয়েক বছর ধরে অবশ্য বাড়িটি জীর্ণ হয়ে পড়ে। ছাদ থেকে চাঙর খসে পড়ে। বর্ষায় দেওয়াল চুঁইয়ে জলে ভেসে যায় ঘর। বিপজ্জনক এই বাড়িতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় দমকলকর্মীদের। দীর্ঘদিন ধরেই শহরে দমকলের নিজস্ব একটি ভবন তৈরির দাবি ওঠে। এ ব্যাপারে পুরসভা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হয়। যদিও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষ পর্যন্ত কয়েক দিন আগে রাজ্য দমকল বিভাগের তরফে নির্দেশ পাঠানো হয় যে, কেন্দ্রটি অন্য শহরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। জেলা সদর থেকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় সরে যেতে বসায় শহরের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
যে শহরে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বর্ধমানের ডিভিশনাল কমিশনার-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন রয়েছে, সেখান থেকে দমকল কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আদৌ কতটা যুক্তিপূর্ণ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুধু সরকারি ভবনই নয়, চুঁচুড়া বা লাগোয়া এলাকায় অনেক কল-কারখানাও আছে। দমকলকেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজন রয়েছে বলেই তো, এত বছর ধরে দমকলকেন্দ্রটি এখানে রয়েছে।
এই অবস্থায় এই শহরের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষ চিন্তিত। চুঁচুড়ার পাশাপাশি বলাগড়, পাণ্ডুয়া, বৈচি, গুড়াপ-সহ নানা জায়গায় আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ছুটে যেতে হয় এই কেন্দ্রের দমকলকর্মীদের। কিন্তু কেন্দ্র স্থানান্তরিত হলে ওই সব এলাকায় পৌঁছতে অনেকটা বাড়তি সময় লাগবে। পাণ্ডুয়ার বাসিন্দা বিমল সাহারায় বলেন, “এমনিতে চুঁচুড়া থেকে পাণ্ডুয়ার দূরত্বই অনেক। একাধিক রেলগেট টপকে আসতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চুঁচুড়ায় দমকলের একটি নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য ইতিপূর্বে একাধিকবার নড়াচড়া হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বিপজ্জনক ভবনে দিনের পর দিন ঝুঁকি বেড়েছে দমকলকর্মীদের। কিন্তু নতুন ভবন তৈরির বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক কিছুই হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দমকলকর্মী বলেন, “পিপুলপাতির বাড়িটির যা অবস্থা, তাতে এখানে থাকাই দুষ্কর। যে কোনও সময় মাথায় ছাদ ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু এটাও ঘটনা, জেলা সদর থেকে কেন্দ্র সরিয়ে নিলে সমস্যা হতে পারে।” হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমন একটি জরুরি পরিষেবা কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ায় শহরের ক্ষতির হতেই পারে। কিন্তু বর্তমান ভবনটির যা অবস্থা তাতে দমকলকর্মীদের স্বার্থে বিষয়টি মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.