সম্পাদকীয় ২...
স্বাগত পরিবর্তন
কাজের সময়ে স্লোগানসহ আন্দোলন করা যে সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত নহে, এই কথাটি অনেকের নিকটই বিস্ময়কর ঠেকিতে পারে। বাম আমলের অভিজ্ঞতা আছে, এমন মানুষদের তো বটেই। কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদকের যেমন ঠেকিয়াছে। তিনি বলিয়াছেন, রাজ্য সরকার কর্মীদের অধিকার হরণের চেষ্টা করিতেছে। এহেন অভিযোগের সূত্রপাত একটি বিজ্ঞপ্তিতে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হইয়াছে, নবান্ন চত্বরে কোনও কর্মী সংগঠন কোনও রকম মিছিল-মিটিং বা অবস্থান আন্দোলন করিতে পারিবে না। স্বাভাবিক মনে এই বিজ্ঞপ্তিটি অতি সাধারণ এবং যুক্তিযুক্ত বলিয়াই বোধ হইবে। কিন্তু অভ্যাস অতি বিষম বস্তু। চৌত্রিশ বৎসরের অভ্যাস হইলে তো কথাই নাই। কমিটির সম্পাদক মহাশয় জানাইয়াছেন, সরকার যাহাই বলুক, তাঁহারা আন্দোলন চালাইয়া যাইবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন কতখানি কঠোর হইতে পারে, কী ভাবে কর্মীদের অযৌক্তিক অবাধ্যতার মোকাবিলা করিতে পারে, তাহা ভবিষ্যৎ বলিবে। পারিলে, পশ্চিমবঙ্গের মঙ্গল। না পারিলে, চৌত্রিশ বৎসরই অনন্ত হইবে।
কাজের সময় নষ্ট করিয়া আন্দোলন করিবার ব্যাধিটি পুরাতন এবং তদানীন্তন শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক মদতপুষ্ট। এই অনাচার বন্ধ করিবার একমাত্র উপায় কঠোর হওয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হইতেছেন। তাঁহার এই সিদ্ধান্তটিকে যদি গত কয়েক দিনের আর কিছু সিদ্ধান্ত, যেমন প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা, কর্মীদের কাজে মন দিতে বলা ইত্যাদির সহিত মিলাইয়া দেখা যায়, তবে একটি সুনির্দিষ্ট গতিপথের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। রাজ্যের প্রধান প্রশাসক তাঁহার প্রশাসনকে একটি প্রাথমিক কথা স্মরণ করাইয়া দিতে চাহিতেছেন তাঁহারা কাজ করিবেন, এই মর্মেই মাসের গোড়ায় তাঁহারা বেতন পাইয়া থাকেন। কাজে ফাঁকি দেওয়ার যতগুলি পথ কর্মীরা চিনিতেন, মুখ্যমন্ত্রী সেগুলি বন্ধ করিতে উদ্যত হইয়াছেন। তাঁহার এই চেষ্টা কত দিন জারি থাকিবে, কতখানি ফলপ্রসূ হইবে, সেই প্রশ্নগুলি জরুরি। কিন্তু তাঁহার মনোভাবটি স্পষ্ট এবং প্রশংসনীয়। প্রশাসন নামক অচলায়তনটির স্থিতিজাড্য ভাঙিতে চাহিলে বিপরীতমুখী ধাক্কা আসিবেই, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত থাকিতে পারেন। সেই ধাক্কা সামলাইবার একমাত্র পথ কঠোরতা। অন্যায়ের সঙ্গে কোনও রূপ আপস নহে। সরকারি চাকুরি মানে যে কাজ না করিয়াও বেতন পাইবার নিশ্চয়তা নহে, এই কথাটি দ্ব্যর্থহীন ভাবে বুঝাইয়া দিতে হইবে।
তবে, শুধু নবান্নেই এই নিয়ম চালু হইবে কেন, অন্যত্র কেন নহে, এই প্রশ্নটি উঠিবেই। তাহার একটি সাময়িক উত্তর আছে। যেহেতু অন্য সরকারি ভবনগুলিতে আন্দোলন নামক অনাচারের ধারাটি বহু দিন ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে, এক বারে তাহা থামানো কঠিন। নবান্ন যেহেতু নূতন ভবন, ফলে এখানে কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ হইবে। এবং, একটি সরকারি কেন্দ্রে যদি নূতন নিয়মটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তবে ভবিষ্যতে অন্যত্র তাহা করিতে কম বাধার সম্মুখীন হইতে হইবে। স্বল্পমেয়াদে যুক্তিটি মানিয়া লইতে আপত্তি নাই। তবে, নবান্ন হইতে শুরু করিয়া প্রক্রিয়াটি যাহাতে নবান্নেই থামিয়া না যায়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। এবং, সর্বত্র এই নিয়ম যাহাতে মান্য হয়, তাহা মুখ্যমন্ত্রীকেই দেখিতে হইবে। এই প্রশাসনে তিনিই সর্বশক্তিমান। ফলে, যে কোনও সংস্কারেই তাঁহার ভূমিকাই প্রধানতম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.