|
|
|
|
হানাবাড়ি হয়েছে বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত গ্রন্থাগার |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • করমাটাঁড় |
নিজের জিনিস সামলাতে হয় নিজেকেই। অন্য কেউ তা দেখে না!
ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ার করমাটাঁড়ে গেলে মনে পড়বে এ কথাটাই।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত গ্রন্থাগারের দায়িত্ব নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এখন তা কার্যত হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে। কিন্তু হেলদোল নেই প্রশাসনের। গ্রন্থাগারের কাছেই বিদ্যাসাগরের বাড়ি ‘নন্দন কানন’। জীবনের শেষ ১৫-২০ বছর সেখানেই থাকতেন। এক সময় জবর-দখল হলেও, বিহার-ঝাড়খণ্ডের বাঙালি সমাজের উদ্যোগে হাল ফেরে বাড়িটির।
করমাটাঁড় স্টেশনের (বর্তমান নাম বিদ্যাসাগর) পূর্ব দিকে জরাজীর্ণ দশায় পড়ে রয়েছে গ্রন্থাগারটি। স্টেশনের পশ্চিম দিকে সেজে উঠছে বিদ্যাসাগরের বাড়ি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আবেদন সত্ত্বেও গ্রন্থাগারটির সংরক্ষণে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রায় একশো বছর আগে কলকাতার কয়েকজনের উদ্যোগে গ্রন্থাগারটির পত্তন। পরে সেটিতে স্কুল তৈরি হয়। সত্তরের দশকে
সেটিকে অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। ১২-১৫ বছর পড়াশানো চলছিল সেখানে। তারপর আচমকাই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্তই পড়ে রয়েছে।” এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানে স্কুল বন্ধ করে অন্য জায়গায় স্কুল খুল সরকার। প্রশাসন চাইলে লাইব্রেরির স্কুলেই তা চালিয়ে যেতে পারত। |
|
করমাটাঁড়ের সেই গ্রন্থাগার। —নিজস্ব চিত্র। |
ভাঙা পাঁচিল, চারদিকে আগাছার জঙ্গলমধ্যে ইঁটের ‘পাঁজর’ নিয়ে দাঁড়িয়ে ‘বিদ্যাসাগর লাইব্রেরি’। দেখলে হানাবাড়িই মনে হয়। দেওয়াল থেকে সিমেন্টের প্রলেপ খসে গিয়েছে। জানালা-দরজা নেই। এক সময় যে এই বাড়িতে পড়াশোনা চলত, দেওয়ালের শ্বেত পাথরের ফলকগুলি থেকে তা স্পষ্ট। ওই গ্রন্থাগারের ‘ইতিহাস’ লেখা বিবর্ণ সে সব ফলকে।
সম্প্রতি, এ নিয়ে ঝাড়খণ্ড বিধানসভার অধ্যক্ষ শশাঙ্কশেখর ভোক্তার সঙ্গে দেখা করেন করমাটাঁড়ের বাঙালিরা। গ্রন্থাগারের সংস্কারের দাবি জানান তাঁরা। অধ্যক্ষের বিধানসভা কেন্দ্রেই রয়েছে কর্মটাঁড়। কথাবার্তার পর ভোক্তা বলেন, “এটি অত্যন্তই উদ্বেগের বিষয়।” ঝাড়খণ্ড বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি সিদ্ধার্থজ্যোতি রায়ের কথায়, “গ্রন্থাগারের মতো হাল যে বিদ্যাসাগরের বাড়িটির না-হয়, সে জন্য আমরাই সেটিকে আগ্লে রেখেছি। অনেকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে বাড়িটিকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। সেখানে কয়েকজন পড়ুয়াকে বাংলা ভাষায় লেখাপড়াও করানো হচ্ছে। সরকারের হাতে তুলে দিলে বাড়িটির হালও যে গ্রন্থাগারের মতো হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর কলকাতার মল্লিক বাড়ির লোকজন করমাটাঁড়ে ওই বাড়িটি কিনেছিলেন। পরে সেটির মালিক হন বিহারের বাঙালিরা। ওই সময় বিহারেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল জামতাড়া। রাজ্য ভাগ হওয়ার পর সেটি অধিগ্রহণ করেন ঝাড়খণ্ডের বাঙালিরা। বর্তমানে দু’টি রাজ্যেরই বাঙালি সমাজের প্রতিনিধিরা ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটি’ নামে সংগঠন গড়ে নন্দন-কাননের দেখাশোনা করছেন। বিদ্যাসাগর বালিকা মধ্য বিদ্যালয় নামে একটি স্কুলও চলে সেখানে। সম্প্রতি, সেখানে মহিলাদের সেলাই শেখানোর একটি স্কুলও চালু করা হয়। উদ্বোধন করেন দুমকার সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন। |
|
|
|
|
|