এটিএমে টাকা ভরার গাড়ি ‘লুঠ’, হয়রান পুলিশ
বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফোনটি পেয়েই চমকে উঠেছিলেন লালবাজারের গোয়েন্দা-কর্তা। খবর এসেছে, তারাতলার কাছে এটিএম-এর টাকা ভর্তি গাড়ি লুঠ হয়ে গিয়েছে! তড়িঘড়ি ডাকাতি-দমন শাখায় ফোন ঘোরালেন তিনি। মিনিট খানেকের মধ্যেই গোয়েন্দা বিভাগের বাড়িতে যেন হুলস্থূল পড়ে গেল।
গত বুধবারই বেঙ্গালুরুতে এটিএমের ভিতরে মহিলা ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে কুপিয়ে লুঠ করার পর থেকে এই শহরে এটিএমগুলির নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ সতর্ক হয়েছে কলকাতা পুলিশ। ব্যাঙ্ককর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এটিএম কাউন্টারের ভিতরেও নিরাপত্তা বাড়াতে কয়েক দফা প্রস্তাব দিয়েছেন লালবাজারের শীর্ষ-কর্তারা। তার সাত দিনের মাথায় কলকাতায় এমন ঘটনা! কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ সূত্রের খবর, বিকেল পাঁচটা নাগাদ তারাতলার মোড় দিয়ে একটি এটিএম-এর টাকা ভরার গাড়ি যাচ্ছিল। চালক ছাড়াও তাতে ছিলেন টাকা ভরার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার দু’জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী এবং দু’জন অফিসার। মোড়ের কাছেই দুই ব্যক্তি সেই গাড়ি আটকান। গাড়ির বেশ কিছু কাগজপত্র দেখতে চান তাঁরা। তা দেখাতে না-পারায় গাড়ি থেকে অফিসারদের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অভিযোগ, আচমকাই গাড়িতে উঠে চালককে নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান তাঁরা। এর পরেই টাকা ভরার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সদর দফতরে ফোন করে বিষয়টি জানান অফিসারেরা। সদর দফতর থেকে লালবাজার কন্ট্রোলে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, গাড়ির জরুরি কাগজপত্র না-থাকা সত্ত্বেও এটিএমে টাকা ভরার মতো কাজ নিয়ে কোনও সংস্থার গাড়ি রাস্তায় বেরোয় কী করে। রাস্তায় বেরোনো গাড়িটির বৈধ নথিপত্র কেন ছিল না, এই প্রশ্নের জবাবে সংস্থার তরফ থেকে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে গাড়িটিকে ধরা হয়েছে এ দিন, সেটির ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা তাঁদের দেখতে হবে।
ওই সংস্থার নিরাপত্তা আধিকারিক প্রলয়কিঙ্কর রায় জানান, রাস্তায় গাড়ি আটকানো দু’জন খাকি উর্দি পরে ছিলেন। গাড়ির ভিতরের রক্ষীরা তাঁদের দু’জনের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেও তাঁরা তা দেখাননি। উল্টে ধমক দিয়ে গাড়িচালক ও নিরাপত্তারক্ষী-সহ গাড়ি নিয়ে চলে যান ওই দু’জন।
পুলিশ সূত্রের খবর, কন্ট্রোলে খবর আসতেই আর কালক্ষেপ করা হয়নি। সঙ্গে সঙ্গেই এটিএম-এর ওই গাড়িটির নম্বর দিয়ে বেহালা এলাকার সব থানাকে সতর্ক করা হয়। খবর দেওয়া হয় রাস্তায় টহলদার ওয়্যারলেস ভ্যানকেও। এলাকা জুড়ে শুরু হয় জোর তল্লাশি।
তৎপরতা ছিল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগেও। খবর পেতেই ডাকাতি-দমন শাখার অফিসারদের একটি দল তৈরি করে ফেলা হয়। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় অন্য বিভাগের বাছাই করা অফিসারদেরও। লালবাজার সূত্রের খবর, খবর পাওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যেই একটি দল রওনা দিয়েছিল ঘটনাস্থলের দিকে। কিন্তু পথে যেতে যেতেই খবর মেলে, জোকার কাছে গাড়িটি আটক করা হয়েছে। তবে ডাকাত নয়, গাড়ির ভিতরে ছিলেন মোটর ভেহিকল্স দফতরের অফিসারেরা! এটা শুনেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন লালবাজারের কর্তারা।
কী ঘটেছিল?
লালবাজার জানিয়েছে, ওই এলাকায় মোটর ভেহিকল্স দফতরের দু’জন ইনস্পেক্টর বিভিন্ন গাড়ি তল্লাশি করছিলেন। আর পাঁচটা গাড়ির মতো এটিএম-এর গাড়িটিকেও দাঁড় করানো হয়েছিল। তল্লাশির সময় জানা যায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই ওই গাড়িটির। এর পরেই গাড়িটি আটক করেন ওই অফিসারেরা। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পারেননি ওই সংস্থার এটিএম অফিসারেরা। প্রলয়বাবু বলছেন, “লুঠের খবর শুনেই ভয় পেয়েছিলাম। তাই পুলিশকে জানাতে দেরি করিনি। গাড়িতে দু’জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাঁরা বাধা দেননি, কারণ নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ির পিছনে টাকার পাহারায় বসেছিলেন। তা ছাড়া, কোনও বড় ধরনের ওই টাকায় হাত না দিলে গুলি চালানোর নিয়ম নেই রক্ষীদের।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মোটর ভেহিকল্স দফতরের জোকা অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল গাড়িটিকে। সে সময় টহলদার পুলিশের চোখে পড়ে গাড়িটি। গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বিষয়টি জানা যায়। গোয়েন্দা-বিভাগের এক কর্তার কথায়, “এটিএম-এর টাকা ভরার একটি গাড়িতে কয়েক কোটি টাকা থাকে। ওই গাড়ি লুঠের কথা শুনে প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম।” পুরো ঘটনা জানার পরেই খবর দেওয়া হয় এটিএম-এ টাকা ভরার দায়িত্বে থাকা সংস্থার সদর দফতরেও।
তবে কাগজপত্র না নিয়ে গাড়িটি বেরিয়েছিল কেন, সে প্রশ্নও তুলেছে পুলিশের একাংশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল তারাতলা থানার অধীনে হওয়ায় সন্ধ্যাতেই ওই থানার ওসি-সহ কয়েক জন অফিসার জোকায় যান। গাড়িটির কাগজপত্র না থাকায় মোটর ভেহিকল্স দফতরের অফিসারেরা গাড়িটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গাড়িটি আটক করেও রেখেছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, দু’পক্ষের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির ফলেই টাকা-সহ গাড়ি লুঠের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি খবর দিয়ে ভাল কাজই করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিরাপত্তা আধিকারিক বলছেন, অনেক সময় পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করে। কিন্তু এমন তল্লাশির অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.