শর্ট স্ট্রিটের ৯এ নম্বর বাড়িতে হামলার অন্যতম প্রধান চক্রী পিনাকেশ দত্ত বলে অভিযোগ। সেই পিনাকেশই ওই বাড়িতে থাকা স্কুলের ভিতর থেকে নাগাড়ে তাঁদের লক্ষ করে গুলি ছোড়া হচ্ছে দেখে ভয় পেয়ে গাড়িতে চেপে কোলাঘাটে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর ভাড়া করা গাড়ির চালক জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি। শর্ট স্ট্রিটে হামলার মামলায় ওই গাড়িচালককে সাক্ষী করতে চলেছে লালবাজার।
গোয়েন্দারা জানান, যে-গাড়িতে চেপে পিনাকেশ ১১ নভেম্বর ভোরে শর্ট স্ট্রিটে যান, সেই গাড়ির চালক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই চালক জানান, বাউন্সার ও নিরাপত্তারক্ষীদের কয়েক জন ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়ির লোহার দরজা টপকে ভিতরে ঢোকেন এবং সেখানকার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা অগ্রবালের এক কেয়ারটেকারকে কাবু করে লোহার দরজার তালা খুলে দেন। তখন ৪০-৫০ জনের একটি দল লাঠি, লোহার রড নিয়ে ভিতরে ঢোকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির ভিতর থেকে গুলি ছোড়া শুরু হয়। তা দেখে পিনাকেশ চালককে বলেন, “ভাগো, ভাগো।” নিমেষে গাড়িতে চেপে এলাকা ছাড়েন চালক ও পিনাকেশ।
ওই বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত পিনাকেশ গোয়েন্দাদের কাছে তাঁর জবানবন্দি দিয়েছেন। গোয়েন্দারা বুধবার ওই অভিযুক্তকে কলকাতার মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠের আদালতে তোলেন। বিচারক তাঁকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের কাছে কী জবানবন্দি দিয়ে কী বলেছেন পিনাকেশ?
গোয়েন্দাদের দাবি, পিনাকেশ বলেছেন, রতনলাল নাহাটা ও মমতা অগ্রবালকে ৯এ শর্ট স্ট্রিট থেকে উচ্ছেদ করার জন্য তাঁকে বরাত দিয়েছিলেন রাজেশ দামানি। রাজেশও এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, জমি-বাড়ির কারবারি এবং এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত পরাগ মজমুদারের সঙ্গে পিনাকেশের আলাপ করিয়ে দেন রাজেশই। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, উচ্ছেদের জন্য বাউন্সার ও নিরাপত্তারক্ষী জোগাড় করেন পিনাকেশ। তার জন্য নিরাপত্তা সংস্থার মালিক অরূপ দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। গোয়েন্দাদের দাবি, অরূপকে তিনি দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে পিনাকেশ জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।
গোয়েন্দারা জানান, পিনাকেশ জেরায় বলেছেন, ১০ নভেম্বর জোড়াবাগানের একটি ভ্রমণ সংস্থার কাছ থেকে তিনি একটি গাড়ি ভাড়া করেন। তাতে চেপেই তিনি ১১ নভেম্বর ভোরে ৯এ শর্ট স্ট্রিটে যান। তদন্তকারীদের দাবি, গাড়ি নেওয়ার সময় ভ্রমণ সংস্থার দেওয়া একটি রসিদে সই করেছিলেন পিনাকেশ। সেই রসিদ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তাঁদের দাবি, ই এম বাইপাসের ধারে চারটি হোটেলের কয়েকটি ঘর ভাড়া নিয়ে বাউন্সার ও নিরাপত্তারক্ষীদের এক রাতের জন্য রেখেছিলেন পিনাকেশ। সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস এ দিন আদালতে জানান, পিনাকেশ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছেন। তাঁর হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা দরকার। তা ছাড়া ওই অভিযুক্তের টিআই (টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন) বা শনাক্তকরণ প্যারেড করানোর প্রয়োজন রয়েছে। সেই জন্য তাঁকে জেল-হাজতে রাখা দরকার। বিচারক জানান, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অনির্বাণ রায় ওই অভিযুক্তের গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করবেন।
|