অধিকাংশ এটিএমই অরক্ষিত, উঠছে প্রশ্ন
ক্ষী বিহীন এটিএম কাউন্টার। দিন রাত খোলা। এলাকা জনবহুল হোক বা নাই হোক। ওই সমস্ত এটিএম কাউন্টার এখন দুষ্কৃতীদের নজরে। সেখানে রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের দল হানা দিয়ে টাকা চুরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই জেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি তিন বার হানা দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ফের মঙ্গলবার গভীর রাতে নলহাটি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। এ দিনের ঘটনায় বুধবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বর মাসে মুরারই থানার চাতরা গ্রামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে প্রথম দুষ্কৃতীরা টাকা চুরির চেষ্টা করেছিল। এ বছর দু’বার সিউড়ি শহরে এটিএম কাউন্টারে চুরির চেষ্টা চালিয়েছিল তারা। এখনও পর্যন্ত জেলার যে কটি এটিএম কাউন্টারে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে, প্রত্যেকটিই ছিল রক্ষীবিহীন। এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, জেলার সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়ার মতো বড় বড় শহরগুলিতে ছাতার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার খোলা হলেও, রক্ষী থাকবে না কেন? পাহারা দেওয়ার লোক না থাকলে দুষ্কৃতী হানা বাড়বে না তো, কি কমবে! তাই বাসিন্দারা অবিলম্বে এটিএম কাউন্টারগুলিতে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রক্ষীবিহীন রামপুরহাটের ভাঁড়শালা মোড় ও সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এটিএম কাউন্টার।
মঙ্গলবার যে দু’টি এটিএম কাউন্টারে হামলা হয়েছে, তার একটি নলহাটির পার্বতীতলায় ভাড়া বাড়িতে রয়েছে। ওই বাড়ির মালিক ভাস্কর বীরবংশী বলেন, “রাত তখন ২টো হবে। কিছু একটা ভাঙার জোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। পরে জানালা খুলে দেখি এটিএমের ভিতরে ৪-৫ জন অপরিচিত যুবক ভাঙচুর করছে। চোর চোর চিৎকার করতেই পাশের বাড়ির লোকেরা জেগে যান। তার মধ্যেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। পরে থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে কাউন্টার বন্ধ করে দেয়।” অন্য এটিএম রয়েছে নলহাটি হাইস্কুলের কাছে। সেটি থানা থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে। সেটিও একটি ভাড়া বাড়িতে রয়েছে। তখন রাত কত হবে জানা নেই বলে জানিয়েছেন ওই বাড়ির মালিক অলোক সিংহ। জানা গিয়েছে, এই দু’টি এটিএম কাউন্টারে টাকা ভরা থেকে সমস্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে দু’টি বেসরকারি সংস্থা। একটি সংস্থার ম্যানেজার সুকান্ত দাস বলেন, “সাধারণত যেখানে কাউন্টার খোলা হয়, সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধকেরা রক্ষী ও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করবেন।”
পার্বতীতলার কাউন্টারটি এক মাস আগে খোলা হয়েছে। সেখানে এরকম ব্যবস্থা হয়নি। নলহাটি হাইস্কুল লাগোয়া কাউন্টারটি এক বছর আগে চালু হয়েছে। সেখানেও রক্ষীর ব্যবস্থা নেই। হাইস্কুল লাগোয়া কাউন্টারটি যে ব্যাঙ্কের, নলহাটিতে ওই ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। ময়ূরেশ্বর থানার কানাচি শাখা থেকে টাকা নিয়ে এসে একটি বেসরকারি সংস্থা ওই কাউন্টারে টাকা ভরে দিত। তপন মহলদার নামে ওই সংস্থার এক কর্মী জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টে নাগাদ টাকা ভরে দেওয়া হয়। এ বছর আগে খোলা হলেও কেন রক্ষী রাখা হয়নি? এ প্রসঙ্গে ওই ব্যাঙ্কের কানাচি শাখার প্রবন্ধক বিকাশ সিংহ বলেন, “এ ব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন। আমার কিছু বলার এক্তিয়ার নেই।”

মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতী হানার পরে নলহাটির
একটি এটিএমে তদন্তে এসেছেন ব্যাঙ্ক কর্তারা।
অন্য ব্যাঙ্কের নলহাটি শাখার প্রবন্ধক উত্তমকুমার রক্ষিত বলেন, “আমার অধীনে দু’টি এটিএম কাউন্টারে ৭ জন রক্ষী কাজ করেন। পার্বতীতলায় একটি সংস্থা বসিয়েছে। সেখানে কবে বসেছে বা সেখানে আমাদের ব্যাঙ্কের নামে এটিএম কাউন্টার আছে আমার জানা নেই। সুতরাং ওখানে আমি কেন রক্ষী নিয়োগ করব বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বসাতে যাব।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিউড়ি শাখার প্রবন্ধক জানান, সিউড়িতে তাঁদের ব্যাঙ্কের ১৭ টিএটিএম কাউন্টার আছে। কোথায় কোথায় রক্ষী আছে তা তিনি জানেন না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো বিভিন্ন সংস্থার কর্মীর সচিত্র প্রমাণপত্র দেখে টাকা ভরে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই বক্তব্য রামপুরহাট শাখা প্রবন্ধক তরূণ সাহারও।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বীরভূম রিজিওনের ম্যানেজার (এটিএম চ্যানেল) সঞ্জয় দত্ত অবশ্য বলেন, “রক্ষীর ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট শাখা প্রবন্ধককে করতে হবে, এরকম কোনও নির্দেশ নেই।” তবে জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “রক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টারগুলির নিরাপত্তার দায়িত্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। আমরা যেখানে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা দিতে পারছি না, সেখানে কী করে যত্রতত্র এটিএম কাউন্টারে সুরক্ষা দেওয়া যায়।”

বুধবার ছবিগুলি তুলেছেন অনির্বাণ সেন ও তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.