প্রাথমিক শিক্ষক বাছাইয়ের পরীক্ষা বা টেট-এর ফল এত শোচনীয় হল কেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তো উঠেছেই। সেই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে টেট-কারচুপিরও। কিছু না-লিখেও কেউ কেউ পাশ করে গিয়েছেন এবং উত্তর লিখেও অনেকে ফেল করেছেন বলে অভিযোগ। সরব বিধানসভাও। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ওই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
সোমবার বিধানসভায় বিরোধী শিবির থেকে টেট-এর ফলাফলে কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলা হয়। দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, অনেক জায়গা থেকেই অভিযোগ আসছে, সাদা খাতা জমা দিয়েও অনেক পরীক্ষার্থী পাশ করে গিয়েছেন। আবার যাঁরা উত্তর লিখেছেন, তাঁরা পাশ করেননি। এই সব অভিযোগের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যে-সব পরীক্ষার্থী খাতা দেখতে চাইবেন, তাঁদের অবশ্যই তা দেখানো হবে। তথ্যের অধিকার আইনের ভিত্তিতে আবেদন করলেই উত্তরপত্র দেখানোর ব্যবস্থা করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
টেট-এর ফল বেরিয়েছে শুক্রবার। ৩৪ হাজার ৫৫৯ প্রাথমিক শিক্ষক-পদের জন্য পরীক্ষায় বসেছিলেন ১৭ লক্ষ ৫১ হাজার পরীক্ষার্থী। পাশ করেছেন মাত্র ১৭ হাজার প্রার্থী। সাফল্যের হার ১.০৭ শতাংশ। যে-সব পদ এখনও খালি থেকে গিয়েছে, তা পূরণ করার জন্য ফের টেট-এর ব্যবস্থা করা হবে বলে ফল ঘোষণার দিনেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। এ দিন বিধানসভায় ফের সে-কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “১৭ হাজার সফল প্রার্থীর কাউন্সেলিং দ্রুত শেষ করা হবে। আশা করছি, রাজ্যে শিক্ষক-ছাত্র আনুপাতিক বৈষম্য অনেকটাই দূর করতে পারব।”
টেট-এর ফলাফল নিয়ে ব্রাত্যবাবু তাঁর আগেকার মন্তব্য এ দিন কিছুটা বদলে ফেলেছেন। ফল প্রকাশের দিন তিনি জানিয়েছিলেন, টেট-এর ফল যথেষ্ট ভাল হয়েছে। পরিস্থিতি আশাপ্রদ। কারণ, শূন্য আসনের ৫০ শতাংশই পূরণ করা গিয়েছে। সেই যুক্তিতে মন্ত্রী বলেছিলেন, “পাশের হার প্রায় ৫০ শতাংশ।” অঙ্কের হিসেব যেখানে বলছে পাশের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ, অর্ধেক পদ পূরণের সুবাদে সেটা কী ভাবে ৫০ শতাংশ হয়ে যেতে পারে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও বলেছিলেন, “পরীক্ষার্থীর সংখ্যার ভিত্তিতে ফল বিশ্লেষণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেমন মাত্র ১.০৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছেন। এটাই পরীক্ষার ফল। তাই শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা (৫০ শতাংশ পাশ) আমার বোধগম্য হচ্ছে না।” ফল ঘোষণার দিন মন্ত্রী যা-ই বলে থাকুন, এ দিন বিধানসভায় তিনি স্বীকার করে নেন, ওই পরীক্ষার ফল ভাল হয়নি।
এ কথা স্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রাত্যবাবু বলেন, “কেন্দ্র সর্বভারতীয় স্তরে যে-পরীক্ষা নিয়েছিল, তাতে পাশের হার ০.৭%।” তাঁর কথায়, “শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করা উচিত নয়। এখানে ফল অবশ্যই আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল। আমরা চাই, বুনিয়াদি শিক্ষা আরও শক্ত ভিতের উপরে দাঁড়াক।” |