|
|
|
|
আন্দামান তছনছ করে অতি প্রবল হয়ে উঠছে লহর
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জন্মের ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না-পেরোতেই শক্তি বেড়ে গেল নবজাতকের!
ঘূর্ণিঝড় থেকে লহর এখন পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এখানেই শেষ নয়। আজ, মঙ্গলবার সে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। তার দাপটে টালমাটাল আন্দামান। তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল ঝড় চলছে সেখানে। তবে লহরকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আপাতত ভয় নেই বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
কী হারে দাপট বাড়ছে লহরের?
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝড়ের তীব্রতায় লহর ছুঁয়ে ফেলতে পারে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় পিলিনকেও। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগে পিলিন হানা দিয়েছিল ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলে। লহরের গতিবেগও তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে শক্তি বাড়িয়েই চলেছে সে। তাই সোমবার অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
লহরের অভিমুখ অন্ধ্রের দিকেই। কিন্তু তার প্রথম ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে আন্দামানকে। রবিবার রাত থেকেই আন্দামান জুড়ে বৃষ্টি এবং প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় চলছে। সোমবার সকালে বেড়েছে ঝড়ের দাপট। আন্দামানের বিভিন্ন দ্বীপের মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ। ওড়েনি বিমানও। বিদ্যুৎ নেই বিভিন্ন জায়গায়। টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত। রাতে ঝড় কিছুটা কমলেও বৃষ্টির বিরাম নেই। তবে ঝড় যতই অন্ধ্রের দিকে এগোবে, আন্দামানে দুর্যোগ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহবিদেরা জানান, লহরের উৎপত্তি আন্দামান সাগরে (দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর)। রবিরার জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে। এখনও সে আন্দামান সাগরের উপরে থাকায় তার প্রথম আঘাতটা পড়েছে ওই দ্বীপপুঞ্জের উপরেই। গোটা দ্বীপভূমি বিপর্যস্ত। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ারগামী তিনটি উড়ানই বাতিল করতে হয়েছে। সেখানে আটকে পড়েছেন বেশ কিছু পর্যটক। যে-সব পর্যটক অন্যান্য দ্বীপে গিয়েছেন, তাঁরা কার্যত ঘরবন্দি বলে জানাচ্ছে আন্দামান প্রশাসন।
লহরের অভ্যন্তরে বায়ুপ্রবাহের লক্ষণ দেখে আবহবিদেরা জানান, আন্দামান থেকে অন্ধ্রে পৌঁছতে তার সময় লাগবে তিন দিন। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ সে আঘাত করতে পারে অন্ধ্রের মছলিপত্তনম উপকূলে। যে-পথ দিয়ে সে যাবে, সেখানে বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। ব্যাপক ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়তে পারে তামিলনাড়ুও। তবে পশ্চিমবঙ্গে শুধু আকাশ মেঘলা হবে। বাধা পড়বে শীতের পথে। ঝড় অন্ধ্রের দিকে এগোতে গিয়ে অভিমুখ বদলে ফেললে অবশ্য অন্য কথা।
আন্দামানে কেমন দাপট লহরের?
হাওয়া অফিসের খবর, রবিবার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত পোর্ট ব্লেয়ারে ২১২.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। আন্দামানে বেড়াতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের অফিসার সৌগত চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন মায়া বন্দরে। রবিবার রাতে আবহাওয়া এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, ফোনে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। সোমবার বিকেলের পরে টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। রাতে সৌগতবাবু জানান, রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ঝড় শুরু হয়। রাত যত বেড়েছে, ঝড়ের দাপটও বেড়েছে। উথালপাতাল ঝড় চলে সোমবার ভোরেও। তিনি বলেন, “ভোরে উঠে শুনি, চার দিকে সোঁ সোঁ শব্দ। নারকেল গাছগুলো এতটাই নুয়ে পড়ছে যে, মনে হচ্ছে, গোড়া-সুদ্ধ উপড়ে গিয়ে পড়বে সমুদ্র। সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ। আমরা একটু উঁচুতে বাংলোয় রয়েছি। ফেরি বন্ধ। কী ভাবে পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছব, সেটাই চিন্তা।”
জুন থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ১২টি গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। কিন্তু লহর ছাড়া তার কোনওটিই আন্দামানকে সে-ভাবে স্পর্শ করেনি। লহরের বেলায় ব্যতিক্রম হল কেন?
আবহবিদেরা জানান, অন্যান্য ঝড়ের ক্ষেত্রে আন্দামান সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ তামিনলাড়ু বা অন্ধ্রের দিকে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু লহরের ক্ষেত্রে আন্দামান সাগরে বায়ুপ্রবাহ এমন ছিল যে, নিম্নচাপটি উৎপত্তিস্থলেই প্রথমে ঘূর্ণিঝড়ে এবং পরে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেয়।
লহরের ভবিষ্যৎ কী?
মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, “মঙ্গলবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে লহর। এ-পর্যন্ত তার অভিমুখ অন্ধ্রের দিকেই।” পুজোর সময় পিলিন আছড়ে পড়েছিল অন্ধ্রের শ্রীকাকুলামে (কলিঙ্গপত্তনম ওই জেলার অন্তর্ভুক্ত)। কয়েক দিন আগে হেলেন আছড়ে পড়ে মছলিপত্তনমে। এ বার লহরের সম্ভাব্য গতি ওই দিকেই বলে বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, রবিবার রাত থেকেই লহর কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছিল। আন্দামানে তাণ্ডব চালিয়ে এ দিন দুপুরে পোর্ট ব্লেয়ার অতিক্রম করে সে। তার পরেই থমকে যায় লহর। বাড়তে থাকে তার শক্তি। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, থমকে যাওয়ার ফলেই দ্রুত শক্তি বাড়ছে ওই ঘূর্ণিঝড়ের। যত ক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে, বাড়তেই থাকবে তার শক্তি। উপগ্রহ-চিত্রে আবহবিদেরা দেখেছেন, আন্দামানের কাছে সাগরে প্রচুর জলীয় বাষ্প রয়েছে। সেটা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। |
পুরনো খবর: দু’মাসে তিন বার, আবার ঘনাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় |
|
|
|
|
|