|
|
|
|
দু’মাসে তিন বার, আবার ঘনাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়
কুন্তক চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
পরপর দু’মাসে তিনটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়! পিলিন, হেলেনের পর বঙ্গোপসাগর বেয়ে এ বার আসছে ‘লহর’। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, উপর্যুপরি ঘূর্ণিঝড়-হানার এমন নজির গত প্রায় তিন দশকে নেই।
ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়ে আজ, সোমবার রাতেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে লহর। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেটি অন্ধ্রের মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের মাঝামাঝি কোনও জায়গায় আছড়ে পড়বে বলে আবহবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। আগের দু’টি ঘূর্ণিঝড়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অন্ধ্র। এ বার লহরের চোখরাঙানিরও লক্ষ্য সে-ই। বারবার কেন অন্ধ্রই ঝড়ের কবলে পড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীদের বেশি ভাবাচ্ছে অক্টোবর-নভেম্বরে পরপর তিন ঘূর্ণিঝড়ের হানা। এই ঘটনা কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য ঘেঁটে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এর আগে পরপর দু’মাসে তিনটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এ বার তারই পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা। |
|
‘লহর’ নামকরণ করেছে ভারত। এর আগে ‘পিলিন’-এর নাম রেখেছিল তাইল্যান্ড, আর ‘হেলেন’ নাম বাংলাদেশের। রবিবারের উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিজ্ঞানীরা জানান, আন্দামান সাগরে (দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর) জন্ম লহরের। এই মুহূর্তে পোর্ট ব্লেয়ারের কাছে রয়েছে সে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অন্ধ্রের উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ওই এলাকায় ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে এ ভাবে ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে কেন?
এর জন্য সমুদ্রতলের উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন আবহবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, সমুদ্রতলের উষ্ণতা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় পারিপার্শ্বিক বায়ুপ্রবাহের ধরন, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ইত্যাদির মতো কিছু বিষয়। অন্য এক দল আবহবিজ্ঞানী অবশ্য বলছেন, সবিস্তার গবেষণা না-করে সমুদ্রতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে এ ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি সম্পর্ক টানা উচিত হবে না।
এ বছর বর্ষাকালে পরের পর নিম্নচাপের ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন ভারতীয় উপকূলকে। তার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপরেও। সেখানেও দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য কিন্তু অন্ধ্র। তবে বর্ষার নিম্নচাপকে গুরুত্ব দিতে নারাজ আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, এমন হয়েই থাকে। ওই সময় ঘূর্ণিঝড়ও স্বাভাবিক। কিন্তু বর্ষা চলে যাওয়ার পরে এমন ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ সত্যিই বিরল।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ইতিবৃত্ত সম্পর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, “সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বেড়েছে।” তাঁর সঙ্গে একমত কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (জলবায়ুবিদ্যা) বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ছে কি না, তা জানা জরুরি। আইপিসিসি (পরিবেশ ও জলবায়ু গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিলেও নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারেনি।”
সুগতবাবুর বক্তব্য, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। ইদানীং প্রায় সব ঘূর্ণিঝড়েই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যের প্রমাণ মেলে অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে তাকালেই। পুজোর সময় পিলিন আছড়ে পড়েছিল উত্তর অন্ধ্রের শ্রীকাকুলামে। দু’দিন আগে মছলিপত্তনমে হানা দেয় হেলেন। সপ্তাহ না ঘুরতেই আসছে লহর, শ্রীকাকুলাম জেলার কলিঙ্গপত্তনমের কাছাকাছি আছড়ে পড়তে পারে সে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “পরপর এমন ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসে নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে পড়ে। উর্বরতা নষ্ট হয়। ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতি হয় মাঠের ফসলেরও।”
ঘূর্ণিঝড়গুলি অন্ধ্রপ্রদেশেই বা আছড়ে পড়ছে কেন?
বিশ্বজিৎবাবুর ব্যাখ্যা, এর পিছনে রয়েছে বায়ুপ্রবাহের টান। এই সময়ে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে শুকনো ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে। তা দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া জলীয় বাষ্প-সহ ঘূর্ণিঝড়কে নিজের দিকে টানে। দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে সেই ঘূর্ণিঝড় উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে এলে অন্ধ্র উপকূলই সামনে পড়বে। তবে এই গতিপথ বদলেও যেতে পারে। এই আবহবিজ্ঞানী বলেন, “বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে আচমকা পরিবর্তন ঘটলে ঘূর্ণিঝড় বাঁক নিয়ে চলে যেতে পারে মায়ানমারের দিকেও।”
|
পুরনো খবর: হেলেন-হানা শেষ, নতুন নিম্নচাপেও থমকাবে শীত |
|
|
|
|
|