হেলেন-হানা শেষ, নতুন নিম্নচাপেও থমকাবে শীত
গাম বার্তা দিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই জোর বেড়েছিল বৃষ্টির। বেলা দু’টো নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনমের কাছে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড়, হেলেন। মৌসম ভবন জানায়, আছড়ে পড়ার সময় মছলিপত্তনম এলাকায় ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়েছে। অন্ধ্র প্রশাসন সূত্রের খবর, ঝড়ে অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাগরে আটকে পড়েছেন ৩০ জন মৎস্যজীবী। ভারী বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।
বুধবার বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়ার পর থেকে ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধি করছিল এই ঘূর্ণিঝড়টি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত উপগ্রহ-চিত্র দেখে আবহবিদেরা জানিয়েছিলেন, ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড় নিয়ে অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়বে হেলেন। কিন্তু এ দিন আছড়ে পড়ার সময় অনেক কম শক্তিশালী ঝড় হয়েছে। আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, হেলেন উপকূলের কাছাকাছি আসতেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। তার জেরেই কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়েছিল তার। এ দিন সন্ধ্যায় আরও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে হেলেন। আগামী দিন দুয়েক অন্ধ্রে বৃষ্টি চলবে বলে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস।
দুর্গাপুজোর অষ্টমীর রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে আছড়ে পড়েছিল অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়, পিলিন। খুব বেশি লোক মারা না গেলেও প্রচুর সম্পত্তি নষ্ট হয়েছিল। অন্ধ্রপ্রদেশ প্রশাসন সূত্রের খবর, পিলিনের ক্ষয়ক্ষতি এখনও পূরণ করা যায়নি। তার উপরে এ দিন হেলেনের হানায় ফের বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছ পড়ে বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। তবে আগাম সতর্কতা থাকায় নীচু এলাকা থেকে প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ায় জীবনহানি তেমন হয়নি বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি।

হেলেনের বলি...শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশে। ছবি: এএফপি।
অন্ধ্রপ্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় বিশাখাপত্তনম, গুন্টুর, প্রকাশম এবং কৃষ্ণা-গোদাবরী সংলগ্ন এলাকায় সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি এ দিন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অন্য অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। কৃষ্ণা জেলায় বিশেষ কন্ট্রোল রুমও খুলেছে স্থানীয় প্রশাসন। সাগরে আটকে পড়া মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করতে রওনা দিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ। ওই মৎস্যজীবীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগরে গিয়েছিলেন বলে প্রশাসনের দাবি।
অন্ধ্রপ্রদেশে আছড়ে পড়লেও বাংলাতে কিন্তু প্রভাব ফেলেছে হেলেন। আবহবিদেরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার গতিপথ বাধা পেয়েছে এবং তা আরও কিছু দিন চলবে। হেলেন তো দুর্বল হয়েছে, তা হলে এখনও শীতের পথে বাধা কেন?
মৌসম ভবন জানিয়েছে, দক্ষিণ আন্দামান সাগরে নতুন একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। তার জেরেই আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার গতি বাধা পাবে। উত্তরবঙ্গেও কোনও কোনও এলাকায় শীত থমকাতে পারে। দক্ষিণবঙ্গে হাল্কা ঠান্ডা থাকলেও এই বাধার জেরে পাকাপাকি ভাবে শীত পড়তে পড়তে নভেম্বর মাস পেরিয়ে যাবে বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “হেলেনের প্রভাবে শনিবারও আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। তার পর দু’-এক দিন তাপমাত্রা একটু কমলেও এখনই পাকাপাকি ভাবে শীত পড়বে না।” দিন দুয়েক পর থেকে ফের রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে বলেও আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খাতায়-কলমে এটা স্বাভাবিক হলেও শীতের আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকাটাই দস্তুর বলে আবহবিদেরা জানান। কবে থেকে কাঁপুনি ধরাবে উত্তুরে হাওয়া?
ডিসেম্বরের আগে তেমন আশা দেখছেন না আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, পাকাপাকি ভাবে শীত পড়ার বিষয়টি নির্ভর করছে আন্দামান সাগরে থাকা সদ্যোজাত নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতির উপরে। মৌসম ভবন এ দিন জানিয়েছে, আজ, শনিবার থেকে নিম্নচাপটি শক্তি বাড়াতে শুরু করবে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী বলেন, “শক্তি বাড়ানোর পরে নিম্নচাপটি কোন দিকে এগোবে, তার উপরে বাংলার শীত-ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, নিম্নচাপটি যদি ওড়িশা-বাংলা উপকূল লাগোয়া এলাকার দিকে সরে আসে, তা হলে শীত আসার পথে বড় বাধা সৃষ্টি হবে। আবার সেটি তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে সরে গেলে উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা তাড়াতাড়ি কেটে যেতে পারে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.