|
|
|
|
তেজপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, দিল্লিতে গোয়া পুলিশ
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি ও পানজিম |
তহেলকা গোষ্ঠীর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে এফআইআর করল পুলিশ। গোয়ার এক হোটেলে নিজের পত্রিকারই তরুণী সাংবাদিককে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তেজপালের বিরুদ্ধে।
গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর জানিয়েছেন, পুলিশকে আইন মেনে কাজ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, তহেলকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক সোমা চৌধুরী তেজপালের বিরুদ্ধে তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। চাপের মুখে আজ প্রথম এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন তেজপাল। নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে সোমাদেবীকেও।
গোয়ার হোটেলের ঘটনা নিয়ে সোমা চৌধুরীকে ওই তরুণী সাংবাদিকের লেখা ই-মেল ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। নিজের পদ ছেড়ে ছ’মাসের জন্য সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তেজপাল। সোমা চৌধুরীকে লেখা ই-মেলে তিনি জানান, অভিযোগকারিণীর কাছ থেকে আগেই ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু কেবল তাতে কাজ হবে না। তাই ছ’মাসের জন্য তহেলকার সম্পাদক পদ ও অফিস থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই ই-মেলও ফাঁস হয়ে যায়।
প্রথমে সোমাদেবী দাবি করেন, ওই তরুণী যা চেয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু সেই যুক্তি মানতে চায়নি মহিলা কমিশন-সহ কোনও শিবিরই। তারা সাফ জানায়, তেজপাল ভগবান নন যে তিনি নিজের শাস্তি নিজে ঠিক করবেন। তাঁকে গ্রেফতার করার দাবি করে বিজেপি। তরুণী পুলিশে অভিযোগ না করলেও এই বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর।
পরে অবশ্য সোমাদেবী জানান, বিশাখা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশিকা মেনে এই অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলা অধিকার আন্দোলন কর্মী উর্বশী বুটালিয়া।
আজ গোয়া পুলিশ জানিয়েছে, তারা তদন্তের জন্য দিল্লিতে একটি দল পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পারিক্কর ও রাজ্য পুলিশের ডিজিপি কিষেণ কুমার দু’জনেরই দাবি, সোমা চৌধুরী তেজপালের বিরুদ্ধে তদন্তে বাধা দিচ্ছেন। তাঁর সহযোগিতা চেয়ে ই-মেল করেছিল পুলিশ। কিন্তু প্রত্যাশিত সাহায্য তারা পায়নি। এমনকী, ওই তরুণী সাংবাদিকের অভিযোগের প্রতিলিপিও তাদের দেননি সোমাদেবী। তবে অন্য সূত্র থেকে তেজপাল, সোমাদেবী ও অভিযোগকারিণীর সব ই-মেলই পুলিশের হাতে এসেছে।
রাজ্যর কাছ থেকে এই ঘটনা নিয়ে একটি রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে আজ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তেজপাল। তাঁর বক্তব্য, “আমার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পেশা ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের অনেক পরিচিত ব্যক্তি জড়িত থাকায় যন্ত্রণা বেড়েছে। অনেক সময়েই সম্মানরক্ষা করতে গেলে প্রকৃত সত্য জানানো যায় না। গত চার দিন ধরে আমি সম্মানরক্ষার জন্য সোমা চৌধুরী ও অভিযোগকারিণীর দাবি মেনে কাজ করেছি।.....আমি পুলিশ ও অন্য তদন্তকারীদের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করব। তাদের সব তথ্য জানাব। তহেলকার তদন্ত কমিটি ও পুলিশকে আমার অনুরোধ হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হোক। তা হলেই প্রকৃত সত্য জানা যাবে।”
অভিযোগকারিণী যা চেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি করে গত কাল বিপাকে পড়েছিলেন সোমাদেবী। আজ আবার তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় আরও অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি। তাই নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তহেলকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক। সোমাদেবীর দাবি, অভিযোগ পেয়েই তিনি তেজপালের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। তেজপাল ঘটনার অন্য রকম বিবরণ দেন। তা উড়িয়ে দিয়ে ওই তরুণীর কাছে তেজপালকে ক্ষমা চাইতে বলেন তিনি। কার্যত তাঁরই চাপে তেজপাল ছ’মাসের জন্য পদ ও অফিস থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
সোমাদেবীর দাবি, অভিযোগকারিণী চেয়েছিলেন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তেজপাল ক্ষমা চান। সেই পদক্ষেপ করতে তেজপালকে বাধ্য করা হয়েছে। পরের পদক্ষেপ স্থির করতে তিনি সময় চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সোমাদেবী। কিন্তু ই-মেল ফাঁস হওয়ার পালা শুরু হওয়ায় সেই সময় আর পাওয়া যায়নি।
তাঁর দাবি, অভিযোগকারিণী কখনওই ওই ই-মেল প্রকাশ করতে চাননি বলে তাঁর ধারণা। সোমাদেবী স্বীকার করেছেন, তেজপালের ই-মেলে তাঁর দেমাক প্রকাশ পেয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করতেই পারেন। কিন্তু অন্য কেউ কী ভাববেন তা ভাবার সময়ও পাননি তিনি। অভিযোগকারিণীর দাবি যাতে মানা হয়, সেটা দেখার উপরেই জোর দিয়েছিলেন তখন।
ওই তরুণী এখনও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, তারা প্রথমে তরুণীর সঙ্গে কথা বলবে। তেজপালকে জেরার জন্য ডাকা হতে পারে। আইনি মত নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে। |
পুরনো খবর: যৌন হেনস্থায় পুলিশি তদন্তের মুখে তেজপাল |
|
|
|
|
|