|
|
|
|
যৌন হেনস্থায় পুলিশি তদন্তের মুখে তেজপাল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তহেলকা সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোই যথেষ্ট নয়, যৌন হেনস্থার অপরাধ প্রমাণ হলে তরুণ তেজপালের কড়া শাস্তির দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশি তদন্ত শুরু করেছে গোয়ার বিজেপি সরকার। তবে অভিযোগকারিণী নিজে পুলিশকে এখনও কিছু বলেননি। বিষয়টি নিয়ে হইচইয়ের পরে প্রসার ভারতী পর্ষদ থেকে তেজপালকে সরানোর সুপারিশ করেছেন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি।
নিজের সংস্থারই এক তরুণী সাংবাদিককে এ মাসের গোড়ায় গোয়ায় এক অনুষ্ঠানে গিয়ে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে। এনডিএ আমলে প্রতিরক্ষা-কেলেঙ্কারি, ভারতীয় ক্রিকেটে ঘুষ-কাণ্ড-সহ একাধিক দুর্নীতির ঘটনা লুকনো ক্যামেরার মাধ্যমে ফাঁস করে রাতারাতি খ্যাতির শিখরে উঠে আসে তহেলকা এবং তার প্রতিষ্ঠাতা তরুণ তেজপাল। অতি সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক তরুণীর উপরে নজরদারি চালানোর অভিযোগ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। সেটি প্রকাশ্যে এনেছে যে সংস্থা, সেই কোবরাপোস্ট-এর মালিকানাও তহেলকা-গোষ্ঠীর। একের পর এক কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দেওয়া সেই তরুণ তেজপাল নিজেই যে এ ভাবে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাবেন, তা ভাবেননি কেউই।
ঠিক কী অভিযোগ তহেলকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে?
এ মাসের গোড়ায় গোয়ায় ‘থিঙ্ক ফেস্ট’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তহেলকা গোষ্ঠী। সেই অনুষ্ঠানের জন্যই গোয়ায় গিয়েছিলেন তেজপাল। গিয়েছিলেন ওই তরুণীও। সেখানেই পরপর দু’দিন হোটেলের লিফ্টের মধ্যে তেজপাল তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। পুরো বিষয়টি পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক সোমা চৌধুরীকে ই-মেলে জানান তিনি। চিঠিতে তরুণীর অভিযোগ, তেজপাল তাঁর বাবার বন্ধু এবং তিনি তেজপালের মেয়ের বন্ধু!
তরুণীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত কাল জবাব দেন তেজপাল। সোমা চৌধুরীকে লেখা ই-মেলে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি নিজের পদ থেকে ছ’মাসের জন্য সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মেল-এ তেজপাল লেখেন, “পরিস্থিতি বিচার করতে ভুল হওয়ায় এমন একটা ঘটনা হল, যাতে তহেলকার ঐতিহ্যে আঘাত লেগেছে। আমি অভিযোগকারিণীর কাছে ইতিমধ্যেই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু কেবল তাতে কাজ হবে না। তাই পত্রিকার সম্পাদক পদ ও তহেলকা অফিস থেকে ছ’মাসের জন্য অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।”
ওই তরুণী এবং তেজপালের চিঠি ফাঁস হতেই চাঞ্চল্য দেখা দেয়। প্রবল বিতর্কের জেরে সোমা চৌধুরী দাবি করেন, তেজপালের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে তাঁর বক্তব্য, “তেজপাল সরে দাঁড়িয়েছেন। ওই তরুণী কখনওই এটা চাননি। উনি যা চেয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে।” কিন্তু মহিলা কমিশন থেকে সাংবাদিক মহল কেউই এই দাবি মানতে নারাজ। অভিযোগকারিণীর বাবাও সাংবাদিক। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজধানীর সাংবাদিক মহলেও। চাপের মুখে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশিকা মেনে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন সোমা।
কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি তহেলকা গোষ্ঠী। মহিলা কমিশন ও সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন এডিটর্স গিল্ড প্রায় একই সুরে জানিয়েছে, তেজপালের কী শাস্তি হবে, তা তিনি ঠিক করতে পারেন না। মহিলা কমিশনের প্রধান মমতা শর্মার কথায়, “তেজপাল ভগবান নন যে তিনি নিজের শাস্তি নিজেই ঠিক করবেন!” কমিশনের আর এক সদস্য শামিমা শফিক জানান, এই বিষয়ে তাঁদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তৃতীয় এক পক্ষ। আইন অনুযায়ী, বিষয়টি নিয়ে তহেলকার অভ্যন্তরীণ কমিটি তদন্ত করবে। ওই কমিটির উপরে নজরদারি করবে কমিশন।
তবে এটুকুতেই আটকে থাকছে না গোটা ঘটনা। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় পুলিশকে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে এফআইআর করবে তারা। সূত্রের খবর, তেজপাল, অভিযোগকারিণী ও সোমা চৌধুরীর মধ্যে যে সব ই-মেল বিনিময় হয়েছে, তা পুলিশের হাতে এসেছে। সেগুলি পরীক্ষা করে পুলিশের ধারণা, তেজপালের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যেতে পারে। যে হোটেলে যৌন হেনস্থার ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজও গোয়া পুলিশ হাতে পেয়েছে।
তহেলকা প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আজ পুরোদমে আসরে নেমেছে বিজেপি। এনডিএ আমলে প্রতিরক্ষা কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছিল তহেলকা। সেই ঘটনায় বড় ধাক্কা খেয়েছিল এনডিএ সরকারের ভাবমূর্তি। বিজেপির সাম্প্রতিকতম অস্বস্তি বেঙ্গালুরুর তরুণীর উপরে নজরদারির ঘটনা ফাঁসও তেজপালের কোবরাপোস্টের কীর্তি! অনেকেই মনে করেন, এ সব কারণে বিজেপির সঙ্গে তহেলকার সম্পর্ক খুব খারাপ। আজ তেজপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার নির্ধারিত সময় দু’ঘণ্টা এগিয়ে আনে তারা। দলের মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখির অভিযোগ, তেজপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ চাপা দিচ্ছে সংবাদমাধ্যম। তাঁর মতে, তেজপাল দোষ স্বীকার করেছেন। আর তহেলকা কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছ’মাসের জন্য প্রমোদভ্রমণে পাঠিয়ে দিয়েছেন! ওঁকে গ্রেফতার করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলিও।
তেজপালকে নিয়ে বিতর্ক বেধেছে কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের অন্দরেও। কংগ্রেস সূত্রে খবর, সম্প্রতি তাঁকে প্রসার ভারতীর সঙ্গে যুক্ত করতে উদ্যোগী হন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি। তার বিরোধিতা করেছিলেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। কিন্তু গত মঙ্গলবার প্রসার পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হন তেজপাল। আজ তাঁকে পর্ষদ থেকে সরানোর সুপারিশ করেছেন উপরাষ্ট্রপতি। |
|
|
|
|
|