|
|
|
|
দেশে লগ্নির লক্ষ্মী ফেরাতে ভরসা দুই বাঙালিই |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
বিনিয়োগকারীদের ভরসা ফিরে পেতে এখন দুই বাঙালিই ভরসা মনমোহন-সরকারের।
প্রথম জন, রাজস্ব সচিব সুমিত বসু। সব ঠিকঠাক চললে আগামী মাসেই যাঁর বসার কথা অর্থ সচিবের চেয়ারে। অন্য জন, অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা পার্থসারথি সোম। সম্প্রতি যাঁকে কর ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব সঁপেছেন পি চিদম্বরম। অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরানোর লক্ষ্যে লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নেমেছেন দু’জনে।
একেই বৃদ্ধি তলানিতে। মূল্যবৃদ্ধি মাত্রাছাড়া। তার উপর ভোডাফোন-বিতর্কের জেরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের (বিশেষত বিদেশি) মধ্যে। ভারতে টাকা ঢালার বিষয়ে কিছুটা আস্থা খুইয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আস্থা না-ফিরলে নতুন লগ্নি আসবে না। তাই তৈরি হবে না কাজের সুযোগও। ফলে লোকসভা ভোটের আগে অর্থনীতি চাঙ্গা করাও কঠিন হবে।
শুধু তা-ই নয়। গরিব-গুর্বোদের জন্য জনমুখী প্রকল্প চালু করতেও বাড়তি আয় প্রয়োজন। তার জন্য কর বাবদ আয় বাড়াতেই হবে। ফলে সব দিক থেকেই কর ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ।
তাই ক্ষমতার অলিন্দে চোখে পড়ার মতো গুরুত্ব বেড়েছে দুই বাঙালির। তাঁরা নিয়মিত শিল্পমহল, বণিকসভার সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। চেষ্টা করছেন কর সংক্রান্ত সংশয়, আতঙ্ক দূর করার।
রাজস্ব সচিব হিসেবে সুমিতবাবুর কাঁধে কর আদায়ের ভার।
চিদম্বরমের নির্দেশ, রাজস্ব আয় বাড়াতেই হবে। নইলে খরচের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে না। ঘাটতি
বাড়বে। কিন্তু তা বলে যেন শিল্পমহলের মধ্যে আতঙ্ক না-ছড়ায়। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে শিল্পকে সুমিতবাবুর বার্তা, “রাজস্ব আদায় হবে আইন মেনে। আস্থা রাখুন। দিনের শেষে পারস্পরিক বিশ্বাসটাই জরুরি।”
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জমানায় কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন এনে ভোডাফোনের মতো বিভিন্ন পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনে কর বসানোর চেষ্টা করেছিল অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন
বিদেশি লগ্নিকারীরা। সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব বর্তায় পার্থসারথিবাবুর উপর। তাঁর বক্তব্য, কর ব্যবস্থা সরল হলে বৃদ্ধির হারও বাড়বে। প্রত্যক্ষ কর বিধি (ডিটিসি) ও পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হলে অনিশ্চয়তা আরও কেটে যাবে বলে তাঁর দাবি।
এ প্রসঙ্গে সুমিতবাবুর আশ্বাস, “ডিটিসি বিল নিয়ে কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব তা সংসদে পেশ করা হবে।” অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, তা করা হতে পারে শীতকালীন অধিবেশনেই। প্রতক্ষ্য কর বিধিতে বছরে ১০ কোটির বেশি আয় করা ব্যক্তিদের উপর ৩৫% হারে আয়কর বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। সরকারের মধ্যেই এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। কিন্তু পার্থসারথিবাবুর যুক্তি, “হার বেশি হলে কর ফাঁকির প্রবণতা বাড়ে ঠিকই। কিন্তু বিশ্বের মাপকাঠিতে আমাদের করের সর্বাধিক হার যথেষ্ট কম।” আর জিএসটি নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, “এটি এখন একই সঙ্গে অর্থনীতি ও রাজনীতির বিষয়।”
তাই দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে এখন কর-ব্যবস্থা সংস্কারের লড়াই চালাচ্ছেন নর্থ ব্লকের দুই বাঙালি। চেষ্টা করছেন, বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আমদানির। পদ্ধতি সরল করতে আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের। করদাতার সঙ্গে সরকারের বিরোধ মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অন্যান্য দেশের ব্যবস্থা। লাভের অঙ্ক বাড়াতে সুবিধা দেওয়ার বদলে বন্দোবস্ত করা হচ্ছে লগ্নির জন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার।
পার্থসারথিবাবুর আশ্বাস, কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কারেরই সুপারিশ করবে তারা। তাঁর আশ্বাস, “অনিশ্চয়তা অনেকটাই কমেছে। বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতকে কিছুটা হলেও নির্ভরযোগ্য গন্তব্য বলে মনে করছেন।” আর সুমিতবাবুর দাবি, “শিল্প সহায়ক কর-কাঠামো ও দক্ষ কর-প্রশাসন তৈরিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই চেষ্টা চলবেই।” |
|
|
|
|
|