|
|
|
|
মাত্র আট মাসেই বেহাল ৩ কোটির অতিথিশালা |
উত্তম সাহা • শিলচর |
সাত-আট মাসেই বেহাল চেহারা নিয়েছে তিন কোটি টাকায় নির্মিত আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অতিথিশালা। এ বছরের ২১ মার্চ রাজ্যপাল জানকীবল্লভ পট্টনায়ক এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু এর মধ্যেই অতিথিশালার সর্বত্র ছোট-বড় ফাটল। দরজা-জানালার কাঠে বাসা বেঁধেছে উইপোকা। ‘কাজ ভালই হয়েছে’বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে ৯০ শতাংশ টাকা নির্মাণকারী সংস্থা তথা আসাম পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনকে মিটিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন অভিযোগ উঠতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অধ্যাপক শঙ্কর ঘোষকে চেয়ারম্যান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপাচার্য সোমনাথ দাশগুপ্ত। সেই কমিটি গত কাল তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে।
তাতে বলা হয়েছে: যাচ্ছেতাই রং, ওয়াল প্লাস্টার স্থানে স্থানে প্রায় চৌচির, রিটেনিং ওয়াল যথাযথ ডিজাইনের নয়, যে মাপের রড ব্যবহার হয়েছে সেগুলি এমন দালানের জন্য সঠিক নয়, ছাদে ফাটল থাকায় জল পড়ার আশঙ্কা, দরজার প্লাইউড নিম্নমানের, বাথরুমের দরজাগুলো ওয়াটারপ্রুফ নয়, জানলার গ্রিল দুর্বল। এমনকী যে সিলিং ফ্যানগুলি লাগানো হয়েছে তাও অতি নিম্ন মানের। তাই কমিটির পরামর্শ, এখনই বিশেষজ্ঞ ডেকে পুরো বাড়িটি পরীক্ষা করা হোক। ভাঙা ও উইয়ে ধরা দরজা-জানালাগুলি দ্রুত বদলানো প্রয়োজন। বাথরুমে ওয়াটারপ্রুফ দরজার ব্যবস্থা করা হোক। কমিটি তাঁদের রিপোর্টে আরও অনেক পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু এত টাকা খরচ করে এমন কাজ হল কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সেলের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সীমান্ত পালের বক্তব্য, “দশ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতেই রয়ে গিয়েছে। নির্মাণ সংস্থা সব ঠিকঠাক করে দিলেই ওই টাকা পাবে। অন্য দিকে, পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পঙ্কজ পালের দাবি, যে সব সমস্যার কথা বলা হচ্ছে তা সবই ঠিকঠাক করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন হাজারো ফাটলের একটি নতুন বাড়িকে কী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ‘সার্টিফিকেট’ দিলেন? কেনই বা ৯০ শতাংশ অর্থ কর্পোরেশনকে দিয়ে দেওয়া হল? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছেন, ওই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, বাইরের দেশ থেকে অতিথিরা এলে যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই স্বচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন, সে জন্য অতিথিশালাটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে ন’টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি স্যুইট। আছে কনফারেন্স হল, ডাইনিং হল, কিচেন, স্টোররুম, ড্রাইভারদের থাকার ঘর, কেয়ারটেকাররে ঘর, অফিস তথা রিসেপশন। ২০১১ সালে এর কাজ শুরু করে আসাম পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে বাড়িটি তারা তুলে দেয় ২০১২-র ডিসেম্বরে। এ পর্যন্ত একদিনও ব্যবহার হয়নি এই অতিথিশালা। কুইন্স ইউনিভার্সিটির এক প্রতিনিধি দল আসছে। নতুন অতিথিশালায় অতিথিদের রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে গিয়েই সমস্যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এর পরই তদন্তের নির্দেশ দেন উপাচার্য। |
|
|
|
|
|