বিতর্কিত জমি দখলের অভিযানে সামিল হয়ে শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে গুলি খেয়ে প্রাণ গিয়েছে দুই বাউন্সারের। সেই বাড়ির চত্বরে লুকিয়ে থাকা বাউন্সারদের উপরে গুলি চালানোর জন্য প্রধান শিক্ষিকা মমতা অগ্রবালই নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে দাবি করেছে পুলিশ।
১১ নভেম্বর ভোরে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার ৯এ শর্ট স্ট্রিটে জমি দখলকে কেন্দ্র করে হামলা চালানো হয়। জমি দখলে বাধা দিতে গিয়ে গুলি চালান ওই বাড়ির চত্বরে থাকা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা। পরে গুলি চালান তাঁর দুই নিরাপত্তারক্ষীও। এই ঘটনায় নিহত হন দখলদারদের সঙ্গে আসা দুই বাউন্সার। মমতা-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জমি দখল করতে আসার অভিযোগে ধরা পড়েন পরাগ মজমুদার, পিনাকেশ দত্ত, রাজেশ দামানি তিন সম্পত্তির কারবারিও।
পুলিশি হাজত থেকে মমতাকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস আদালতে জানান, ১১ নভেম্বর হামলার সময় ঘরের ভিতর থেকে গুলি চালান মমতা। তাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হামলাকারীরা। তার পরে নিজের দুই রক্ষী শফিক আহমেদ ওরফে পাপ্পু এবং প্রমোদ সাউকে নিয়ে বাড়ির চত্বরে তল্লাশি চালান শিক্ষিকা। তাঁরা দেখতে পান, স্কুলের একটি ঘরে দখলদারদের সঙ্গে আসা কয়েক জন বাউন্সার লুকিয়ে আছেন। মমতা ওই বাউন্সারদের উপরে গুলি চালানোর জন্য পাপ্পু ও প্রমোদকে নির্দেশ দেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী। |
মমতার আইনজীবী সুশান্ত দত্ত অবশ্য বলেন, তাঁর মক্কেল আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশের নানা স্তরে তা জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মমতার জামিনের আবেদনও জানান সুশান্তবাবু।
বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ সেই আর্জি খারিজ করে মমতা, পাপ্পু ও প্রমোদকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলেই ওই তিন জনের টিআই বা শনাক্তকরণ প্যারেড হবে। জেলে গিয়ে জেরা করতে পারবেন তদন্তকারীরাও।
এ দিন আদালত-চত্বরে মমতার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিসা ওয়াড। মার্কিন নাগরিক মেলিসা জানান, শনিবার তিনি কলকাতায় এসেছেন। হুমকির কথা মমতা তাঁকে জানিয়েছিলেন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জেরেই এই ঘটনা। তিনি বলেন, “মমতা খুন করতে পারেন, এ কথা বিশ্বাস করি না। নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। ঘটনার আগের দিনেও হুমকি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছিল।”
মেলিসার সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর স্কুলের কয়েক জন বিদেশি পড়ুয়ার অভিভাবকও।
বেগুনি জাম্পার এবং থ্রি-কোয়ার্টার পরা মমতার মুখ ছিল থমথমে। তবে এজলাসে মেলিসা ও অন্য পরিচিতদের দেখে তাঁর মুখভঙ্গি কিছুটা বদলে যায়। মেলিসা উঠে গিয়ে কথা বলেন মমতার সঙ্গে। পুলিশের লক-আপে শারীরিক হাল কেমন, তা খোঁজ নেন বিদেশিনিরা। জানান, তাঁরা মমতার সঙ্গেই আছেন। মমতা তাঁদের অনুরোধ করেন, এর আগে তাঁর সঙ্গে কী কী ঘটেছে, তা যেন রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতি এবং প্রশাসনের শীর্ষ মহলে জানানো হয়। এক সুইডিশ পড়ুয়ার অভিভাবক, টোনা সেসিনারে বলেন, “বাচ্চাদের খুব খেয়াল রাখতেন উনি। স্কুল বন্ধ থাকায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা মমতার পাশে আছি।”
আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে ধৃত আট নিরাপত্তারক্ষীকেও এ দিন আদালতে তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে তিন জন তরুণীও ছিলেন। এক জন হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাঁকে আনা যায়নি। সরকারি আইনজীবী জানান, ধৃত রক্ষীরা জমি দখলের কথা জেনেই এসেছিলেন। চারটি দলে ভাগ হয়ে চারটি হোটেলে জড়ো হন তাঁরা। তবে তাঁদের আইনজীবীদের দাবি, সরকার পক্ষ এর আগেই এই নিরাপত্তারক্ষীদের নিরস্ত্র বলেছে। নিরস্ত্রেরা কী ভাবে হামলা চালাতে পারেন, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
আইনজীবীরা আর্জি জানান, ধৃত তিন তরুণীর মধ্যে দু’জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাই তাঁদের জামিন দেওয়া হোক। সেই আর্জি খারিজ করে পার্থ-সহ ন’জনকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সরকার পক্ষ আদালতে জানায়, পার্থ ও কেশব শাসমল নামে এক রক্ষী বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছেন। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।
|