মাত্র দু’বছর আগে রাজারহাট-গোপালপুর বিধাননসভা নির্বাচনে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৯৫৮ ভোটের ব্যবধানে সিপিএমকে হারিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৩ সালে এই ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জয়ের সেই ব্যবধান কমে দাঁড়াল ৩৩। এই উপনির্বাচনে লক্ষণীয়, বিজেপি-র ভোট বৃদ্ধি। ২০১১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল। বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, এই ওয়ার্ডে ভোটদানের হার ও তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দুই-ই কমেছে।
এই উপনির্বাচনে এই ওয়ার্ডে তৃণমূল পেয়েছে ১২৮৪টি ভোট, সিপিএম পেয়েছে ১২৫১টি ভোট এবং বিজেপি পেয়েছে ৫৬৮টি ভোট। কংগ্রেস পেয়েছে ৪০৫টি ভোট। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট হয় জ্যাংড়া হাইস্কুল, জনকল্যাণ সমিতি ও হিন্দু বিদ্যাপীঠে। বুথ ভিত্তিক ফলাফল নিলে দেখা যাবে, জনকল্যাণ সমিতির দু’টি বুথে তৃণমূল ও সিপিএম-কে পিছনে ফেলে এগিয়েছে বিজেপি। সেখানকার একটি বুথে তৃণমূল পেয়েছে ৯৪টি ভোট, সিপিএম ১২৪টি। সে জায়গায় ১৮২টি ভোট পেয়েছে বিজেপি। জনকল্যাণ সিমিতর আর একটি বুথে তৃণমূল ১৪৭, সিপিএম পেয়েছে ১০৯টি ভোট। আর বিজেপি পেয়েছে ১৪৯টি। হিন্দু বিদ্যাপীঠ ও জ্যাংড়া হাইস্কুলে তৃণমূল ও সিপিএম-এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ওই দু’টি বুথে বিজেপি তেমন দাঁত ফোটাতে না পারলেও এ বার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সার্বিক ভাবে বিজেপির ফল ভাল। এই উপনির্বাচনে সিপিএম ও তৃণমূলের বেশ কিছু ভোট বিজেপি কেটেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে যেখানে ৪১৭৯টি ভোট পড়েছিল, সেখানে এ বার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩২১৫টি। ভোট দানের হার কম হওয়ায় তৃণমূলের ভোট কমেছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে এই ওয়ার্ডে প্রায় ৭০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছিল, সেখানে এই উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৩ শতাংশের কাছাকাছি। |
বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় উপনির্বাচনে এই ওয়ার্ডে যে বিজেপি ভাল ফল করেছে, তা একটি পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাবে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পেয়েছিল ২৪৮৩টি ভোট, সিপিএম পায় ১৫২৫টি এবং বিজেপি পায় ১১৬টি ভোট। এ বার সেই জায়গায় বিজেপি পেয়েছে ৫৬৮টি ভোট।
তবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না বেঁধে লড়ায় ভোট কমেছে বলে মনে করে না তৃণমূল। তাদের মতে, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কিছু আবাসনে অবাঙালিরা বসবাস করেন। এই অবাঙালি ভোটের একটি ভাল অংশ বিজেপির ভোটবাক্স ভরিয়েছে বলে মত অনেকের। এলাকার সাংসদ সৌগত রায় ওই ওয়ার্ডে বিজেপির প্রভাব কিছুটা আছে বলে মেনে নিলেও তাঁর মতে, ওই ওয়ার্ড সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তিনি বলেন, “ওই ওয়ার্ডে সিপিএমের জায়গা খুব শক্ত। আমরা সব শক্তি দিয়ে লড়েছিলাম। তাই জিততে পেরেছি।” তিনি আরও বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে এই নির্বাচনের তুলনা করা সব সময়ে ঠিক নয়। বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে ভোট পড়ে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ, সেখানে এই উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৩ শতাংশের মতো। কম ভোট পড়লে তার ফলাফলেও প্রভাব পড়ে। মাত্র ছ’মাস পরেই তো এই পুরসভায় পূর্ণাঙ্গ ভোটের সময় এসে যাবে।”
এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু অবশ্য বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে এর তুলনা করব না। এই জয়ে গণতন্ত্র রক্ষা হয়েছে। সমস্ত বিরোধী শক্তি যৌথ ভাবে আক্রমণ করেছিল। এই জয়কে স্বাগত জানাচ্ছি।” রাজারহাট-গোপালপুরের পুর-চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির ভোট কিছু বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা বিধানসভা ভোটে যত শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম প্রায় সেই শতাংশ ভোট ধরে রাখতে পেরেছি। দু’বছরের এই পরিবর্তনের ঝড়ে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের কিন্তু আমরা হারাইনি। বরং তৃণমূলের ভোট শতাংশের হিসেবে অনেক কমেছে। তবু কেন অল্পের জন্য হেরে গেলাম, পর্যালোচনা করব।” বিজেপির এক নেতা পীযুষ কানোরিয়া জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচন না হলে তাঁদের ফল আরও ভাল হত। |