সল্টলেকে ১৩ নম্বরে এই প্রথম তৃণমূল, সঙ্গে দলীয় দ্বন্দ্বও
বিধানসভার নিরিখে ভোটদানের হার ও জয়ের ব্যবধান, দুই-ই কমেছে। তবে এই প্রথম পুরভোটে সল্টলেকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সিপিএমের থেকে ছিনিয়ে নিল তৃণমূল।
কিন্তু জেতার পরেই জয়ের এই ব্যবধান কমার জন্য দলের একাংশের অন্তর্ঘাতকেই দায়ী করে অভিযোগ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। আর এর জেরেই ফের প্রকাশ্যে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কার্যত যাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল, সেই সল্টলেকের বিধায়ক সুজিত বসু মুখ না খুললেও দলের তরফে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অন্তর্ঘাতের তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছেন।
সল্টলেকের ১৩ নম্বর ওয়াডে উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫১ ভোটে হারিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী সৌম্যজিৎ রাহাকে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে দু’দলের ব্যবধান ছিল ৯৩৫।
কেন কমলো জয়ের ব্যবধান? পাল্টা অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ডে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। এর জন্য বিরোধীদের কৃতিত্ব দিতে নারাজ সব্যসাচীবাবুর অভিযোগ, দলের অন্তর্ঘাতই এর জন্য দায়ী। তিনি বলেন, “যিনি ভেবেছিলেন এই ওয়ার্ডে নির্বাচনের দায়িত্ব পাবেন, তিনি অন্তর্ঘাত করবেন জেনেই দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল।” দলের একাংশের অভিযোগ, দলেরই এক অংশ বাড়ি বাড়ি ফোন করে বিরোধীদের ভোট দিতে উৎসাহ দিয়েছে।
সল্টলেকে ভোটের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পরে তৃণমূলের বিজয় মিছিল। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে।
কারও নাম না করলেও অভিযোগের তির কার্যত বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর দিকে। কারণ, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে নির্বাচন হলেও তাঁকে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে দলীয় সূত্রের খবর। অভিযোগ শুনে সুজিতবাবু বলেন, “কোনও মন্তব্য করব না।”
যদিও নির্বাচনের দিনে সংঘর্ষের ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সুজিতবাবু। বিশেষত বহিরাগত জড়ো করা, বুথ দখলের মতো অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “ভোটও কম পড়ল। ব্যবধানও কমেছে। তবে ও ভাবে অশান্তির প্রয়োজন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রের পক্ষে। সেই মতোই চলি। কেন ব্যবধান কমলো, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”
তবে সব্যসাচীবাবুর তোলা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ নস্যাৎ করে শাসক দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “ও সব কিছুই হয়নি। কোনও অন্তর্ঘাত হয়নি। পুরসভা নির্বাচনে বিধানসভার তুলনায় কম ভোটই পড়ে।”
২০১১ সালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের গীতা বিশ্বাস মারা যাওয়ায় এ বার সেখানে উপনির্বাচন হয়। সোমবার ফলাফলে দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১৪৪৬ এবং সিপিএম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১১৯৫। কংগ্রেসকে (৭৭টি ভোট) অনেকটাই পিছনে ফেলে বিজেপি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচনে পেয়েছে ৩০৩টি ভোট।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের (সে সময়ে বুথের বিন্যাস আলাদা ছিল) ভোটদানের হার ছিল ৬৫ শতাংশেরও বেশি। সেখানে পুর-নির্বাচনে ১৬ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। অথচ ভোটারের সংখ্যাও কিছু বেড়েছে। কিন্তু পুর-নির্বাচনে ব্যবধান কমেছে প্রায় ৬৮৪ ভোট।
শুধু কম ভোটই নয়, এ বারের পুর-নির্বাচনে দিনভর সংঘর্ষে বিরোধী দলের একাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। শাসক দলের বিরুদ্ধে বাইরে থেকে দুষ্কৃতী জড়ো করা, বুথ দখলের অভিযোগ সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। বিশেষত, এফসি, এফডি ও এফই ব্লকের বুথগুলিতে। সেখানে একটি বুথে সমান সমান ও একটিতে সামান্য কিছু ভোটে সিপিএম জিতলেও বাকি সবক’টি বুথেই জিতেছে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, বহিরাগতদের জড়ো করে নির্বাচনের আগেই আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করেছিল শাসক দল। যে কারণে ভোটের হারও গেল কমে। উপরন্তু ভোটের দিনে নিষ্ক্রিয় পুলিশের সামনে বল্গাহীন হামলা চালিয়ে কার্যত ভোট লুঠ করেছে তৃণমূল।
বাম নেতৃত্বের দাবি, শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়েও ফলাফল নতুন করে উৎসাহ তৈরি করবে। পাশাপাশি বিজেপি-ও গত বিধানসভার নিরিখে ভোট বাড়িয়েছে, যেখানে কংগ্রেস অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। বিজেপি-র এই ভোটবৃদ্ধিও তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.