কলকাতা পুরসভার দু’টি ওয়ার্ডের দখল ফের তৃণমূলের হাতে থেকে গেলেও গত বিধানসভা নির্বাচনের হিসেবে ওই দু’টি ওয়ার্ডের একটিতে এক হাজারেরও বেশি ভোট বেড়েছে দলের। অন্যটিতে কমেছে প্রায় তিন হাজার ভোট। দু’টি ওয়ার্ডেই কিন্তু এ বার ভোটদানের শতকরা হার বিধানসভা নির্বাচনের থেকে কম।
এলাকার চরিত্র অনুযায়ী কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৯ শতাংশ। আর তার ঠিক উল্টো বড়বাজার এলাকার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার সিংহভাগ (প্রায় ৬৫ শতাংশ) ভোটার হিন্দিভাষী। সোমবার ভোটের ফলাফল অনুযায়ী তৃণমূলের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, সংখ্যালঘুদের সমর্থনের সিংহভাগ যে তৃণমূলের সঙ্গেই আছে, ফের তা প্রমাণিত। এই ব্যাখ্যায় রীতিমতো উৎসাহিত তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের আশা, পুরসভার উপনির্বাচনের এই ধারা আগামী লোকসভা নির্বাচনেও দলকে স্বস্তি দেবে।
যদিও বড়বাজারে তার বিপরীত ছবি মিলেছে। সেখানে বিজেপি অনেক ভোট বাড়িয়েছে। রাজনীতিক মহলের একাংশের ধারণা, এ রাজ্যে অবাঙালিদের ভোট কিছুটা হলেও এখন বিজেপি-র শিবিরে যেতে শুরু করেছে। বিজেপি নেত্রী তথা কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতের কথায়, “এটা তো নরেন্দ্র মোদী ফ্যাক্টর। যা এখন শুরু হয়েছে।” হিন্দিভাষী বলয়ে তৃণমূল এখনও যে পিছিয়ে রয়েছে, এই ওয়ার্ডের ভোটে তার কিছুটা আঁচ মিলেছে বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতা সন্তোষ পাঠক। তাঁর কথায়, “শাসন ক্ষমতায় না থাকলে এ বার তৃণমূল এখানে অসুবিধায় পড়ত।”
কলকাতা পুরসভার উত্তর প্রান্তে ১ নম্বর ওয়ার্ড। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মালা সাহা কংগ্রেসের জোটসঙ্গী থেকে ওই ওয়ার্ডে প্রায় ন’হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। সেই ব্যবধান এ বারের পুর উপনির্বাচনে আরও বাড়ল। ২০১০ সালের পুর-নির্বাচনে সেখানে ৩৮০০ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী ইলা দাম। তাঁর মৃত্যু হওয়ায় এ বার ওই আসনে উপনির্বাচন হয়। মোট ভোটার ৪৩ হাজার ৩৮৬ জন। এ বার সেখানে ১০ হাজার ৩৮ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী সীতা জয়সোয়ারা। দ্বিতীয় স্থানে সিপিএমের অঞ্জলি চৌধুরী। পেয়েছেন ছ’হাজারের কিছু বেশি ভোট। কংগ্রেস ও বিজেপি-র হাল বেশ খারাপ। ওই দুই দলের ঝুলিতে পড়েছে ১৩০০ ও ১১০০ ভোট। ওই ওয়ার্ডে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেন বলেন, “সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ সমর্থন করায় তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ২০১১ সালের ঐতিহাসিক লড়াইকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।”
অন্য দিকে, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে জোটসঙ্গী নিয়েই তৃণমূল প্রার্থী শশী পাঁজা এগিয়েছিলেন ৩৬৬২ ভোটে। মোট ভোটার ১৪ হাজার ১২০ জন। এ বার সেখানে পুর-নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ৬৪২। ভোট পড়েছে ৮০৬৬টি। কংগ্রেস একা লড়ে পেয়েছে ২৪০০। বিজেপি ১৪০০। স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দিভাষী ওয়ার্ডে বিজেপি-র এই বৃদ্ধি তৃণমূলের নজর এড়ায়নি। বিধায়ক শশী পাঁজা নিজেই তা স্বীকার করেছেন।
অন্য দিকে, মহেশতলা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে বিধানসভার ফলাফলের নিরিখে ভোটের শতাংশ বাড়িয়েছে তৃণমূল।
এই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী কাঞ্চন মণ্ডলের কাছে ৬৯৫ ভোটে পরাজিত হন সিপিএম প্রার্থী মাধবীলতা ঘোষাল। ত্রিমুখী লড়াইয়ে কংগ্রেসে প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৪০৩। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থী এই ওয়ার্ড থেকে ৩৬৫ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। |