বন্দুক নিয়ে শর্ট স্ট্রিটের ৯এ নম্বর বাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তিন চক্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দু’সপ্তাহ পরেও অন্যতম অভিযুক্ত, সোনারপুরের বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্ণধার অরূপ দেবনাথ এখনও ফেরার। গোয়েন্দাদের দাবি, হামলা চালানোর জন্য তাঁকেই টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং তিনিই আগের দিন সন্ধ্যা থেকে ২১ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১১ নভেম্বর ভোরে তাদের সেখানে পাঠান। গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, অরূপ ভিন্ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁকে গ্রেফতার করাই এখন পুলিশের লক্ষ্য। অরূপকে ধরা গেলে ষড়যন্ত্রের আরও তথ্য মিলবে বলে গোয়েন্দাদের আশা।
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে গুলি চালিয়ে দু’জনকে খুন এবং বিতর্কিত জমিতে বহিরাগতদের হামলা এই দু’টি পৃথক মামলায় ধৃত ১২ জনকে আজ, সোমবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হবে। ধৃতদের মধ্যে আছেন বিতর্কিত জমিতে বাচ্চাদের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা অগ্রবাল। ১১ তারিখে বাড়ির ভিতর থেকে তিনিও গুলি চালিয়েছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
ঘটনার ১৪ দিন পরেও অরূপকে ধরা গেল না কেন?
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “অরূপের বাড়িতে এবং তিনি আশ্রয় নিতে পারেন, এমন কয়েকটি জায়গায় আমরা একাধিক বার হানা দিয়েছি। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি তো বিখ্যাত বা কুখ্যাত কেউ নন। এই ধরনের লোক কোথাও লুকিয়ে থাকলে চট করে হদিস পাওয়া মুশকিল। আমরা আশাবাদী, শীঘ্রই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারব।”
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্পত্তির কারবারি পিনাকেশ দত্ত এবং তাঁর আইনজীবী বন্ধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাজ হাসিলের পরে অরূপকে কত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ওই ব্যক্তি ধরা না-পড়া পর্যন্ত তা পরিষ্কার হচ্ছে না। হামলার জন্য অরূপ ২১ জন তরুণ-তরুণী জোগাড় করে দিতে রাজি হলেন কেন, সেটাও প্রশ্ন। বিতর্কিত জমিতে হামলার বিষয়ে যে-মামলা হয়েছে, অরূপ হাতে না-আসায় তার তদন্তে এগোতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান গোয়েন্দারা।
অন্যতম অভিযুক্ত রতনলাল নাহাটার ঘনিষ্ঠ এক যুবক এবং ব্যাঙ্কের হয়ে কাজ করা ব্যারাকপুরের এক ‘রিকভারি এজেন্ট’কেও খুঁজছে পুলিশ। ওই রিকভারি এজেন্ট গত ১৫ সেপ্টেম্বর শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিতে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত।
তদন্তকারীদের দাবি, হামলা চালিয়ে ওই জমি দখলের জন্য পরাগই প্রায় দেড় কোটি টাকা ঢেলেছিলেন। ধৃত পরাগ অবশ্য তা স্বীকার করেননি। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “পরাগই যে পিনাকেশকে টাকা দিয়েছিলেন, সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। ওটা পরাগেরই টাকা। কিন্তু পরাগের পিছনে আর কোনও মাথা আছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না।”
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের তদন্তের সূত্রেই গোয়েন্দারা জেনেছেন, শুধু ওই জমি নয়, শহরের অন্যান্য জায়গাতেও ছলে-বলে-কৌশলে বিতর্কিত জমির দখল নিতেন পরাগ। এক সময় তিনি ও নাহাটা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতেন। পুলিশি সূত্রের খবর, ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে পারিবারিক বিবাদ চলছে, এমন জমি খুঁজে বার করে কম টাকায় কিনে নিতেন সম্পত্তির কারবারি পরাগ ও নাহাটা। কী ভাবে দখল নিতেন সেই সব জমির?
পুলিশ জেনেছে, পরাগ ও নাহাটা আইনি জটিলতার ভয় দেখিয়ে কোনও এক পক্ষের থেকে কম দামে বিতর্কিত জমি কিনে নিতেন। পরে অন্য পক্ষকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে বা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে উচ্ছেদ করে দখল নিয়ে নিতেন সেই জমির। তদন্তকারীরা জানান, পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ করেই শহরে একের পর এক জমি জোর করে কব্জায় আনতে জমি-বাড়ির ওই কারবারিরা। বস্তুত, কলকাতা পুলিশের নিচু তলা থেকে শীর্ষ স্তরের একাংশের সঙ্গে সম্পত্তির কারবারিদের যোগাযোগ থাকায় বছর তিনেক আগে লেক থানা ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার সাহস পাননি কোনও প্রতারিত জমি-মালিকই।
নাহাটা সুস্থ থাকার সময় পুলিশের উপরে তাঁর ব্যাপক প্রভাব ছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। তাঁর এতটাই দাপট ছিল যে, প্রবীর ঘোষ নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১০ সালে শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও কিছু দিন পরেই সব কিছু ধামাচাপা পড়ে যায়! |