শব্দ-ঘাতকদের দ্রুত শাস্তি চেয়ে জনস্বার্থ-মামলা
ব্দ-দূষণের প্রতিবাদ করায় গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল এক প্রধান শিক্ষককে। দশ বছর আগের ঘটনাটিতে দুষ্কৃতীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ বার সেই দৃষ্টান্ত টেনেই পশ্চিমবঙ্গের অন্য সাত শব্দ-শহিদের আততায়ীদের অবিলম্বে শাস্তি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা করলেন পরিবেশকর্মীরা।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের আক্ষেপ, ১৯৯৭ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এ রাজ্যে শব্দ-দূষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরও সাত জন খুন হয়েছেন। অথচ ওই সব ঘটনায় এক জনেরও এখনও সাজা হয়নি। এমনকী, একটি ঘটনায় পুলিশ কোনও মামলাই রুজু করেনি। এ দিকে প্রশাসনের বিধি-নিষেধ, হুঁশিয়ারি হেলায় উড়িয়ে শব্দ-দানবের দাপাদাপি যেমন-কে-তেমন চলছে। প্রতিবাদীদের উপরে আক্রমণও যে বন্ধ হয়নি, হাতের সামনে রয়েছে তার একাধিক টাটকা উদাহরণ। যেমন গত কালীপুজোর রাতে (২ নভেম্বর) শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করায় উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে এক ব্যক্তিকে ইটে থেতলে, চপারে কুপিয়ে, শাবলের ঘা মেরে খুন করা হয়। একই রাতে খাস কলকাতার চারু মার্কেটে আক্রান্ত হন এক প্রতিবন্ধী যুবক। তাঁকে মারধর করে হুইলচেয়ারটিও ভেঙে দেওয়া হয়। দক্ষিণ কলকাতাতেই বহুতল থেকে রাস্তায় শব্দবাজি ছোড়ার প্রতিবাদ করে নিগৃহীত হন এক মহিলা ও তাঁর সঙ্গীরা।
এই পরিস্থিতিতে শব্দ-শহিদের খুনিদের দ্রুত শাস্তিবিধানের দাবিতে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। হাইকোর্টে জনস্বার্থ- মামলা দাখিল সেই লক্ষ্যে তাঁদের প্রথম পদক্ষেপ। গত ১৮ নভেম্বর ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ নামে চন্দননগরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বিভিন্ন পরিবেশ-সংগঠনের কেন্দ্রীয় ফোরাম ‘সবুজ মঞ্চ’-এর তরফে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। আবেদনকারীদের যুক্তি, আগের ঘটনাগুলোয় যারা দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না-হলে এই অত্যাচার বন্ধ হবে না।
এবং এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রধান হাতিয়ার দশ বছর আগে সেই প্রধান শিক্ষক খুনের মামলার রায়। পরিবেশ অ্যাকাডেমির সচিব তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন-আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের গ্রামে ওই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গুলি করে, কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল, কারণ তিনি জোরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেছিলেন। ঘটনার দু’বছরের মধ্যেই খুনিরা সাজা পায়।
ক্যানিংয়ের হিরগোড় গ্রামে সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল?
তথ্য বলছে, তারিখটা ছিল ২০০৩-এর ২৫ অক্টোবর। কালীপুজোর পরের রাত, ঘড়িতে তখন সাড়ে এগারোটা। স্থানীয় মিলনদ্বীপ ক্লাবের কিছু ছেলে কালীপুজোর মণ্ডপে তারস্বরে মাইক বাজাচ্ছিল। গৌড়দহ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিতকুমার নস্করের বাড়ি মণ্ডপের একশো গজের মধ্যে। রঞ্জিতবাবুর ভাই বিশ্বনাথবাবু ক্লাবে গিয়ে মাইক বন্ধ করতে বললে কয়েকটি ছেলের সঙ্গে তাঁর বচসা হয়। বিশ্বনাথবাবু প্রহৃত হন। তাতেও না-থেমে ক্লাবের কিছু ছেলে ওঁর বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব রঞ্জিতবাবু তাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছিলেন যে, মাইকের আওয়াজে তাঁরা ঘুমোতে পারছেন না। কিন্তু তা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে একটি ছেলে তাঁকে গুলি করে। গুলি ফস্কালে বাড়ির উঠোনে ঢুকে খুব কাছ থেকে ফের গুলি। রক্তাক্ত প্রৌঢ় শিক্ষক লুটিয়ে পড়ার পরেও দুষ্কৃতীরা তাঁকে চপার দিয়ে কোপাতে থাকে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রী পদ্মাদেবী ও ভাই বিশ্বনাথবাবু গুরুতর জখম হন।
রঞ্জিত নস্করের খুনিদের যাবজ্জীবন হওয়ার পরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তদানীন্তন চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “এই শাস্তি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।” বিশ্বজিৎবাবুও বলছেন, “শব্দ-দূষণের প্রতিবাদীকে হত্যার অপরাধে সাজার সম্ভবত এটাই আপাতত একমাত্র নজির।” প্রাক্তন পর্ষদ-কর্তার কথায়, “শব্দ-শহিদ মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। নচেৎ প্রতিবাদ করতে মানুষ ভয় পাবেন। এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ নেই। তাই জনস্বার্থ-মামলা করতে হয়েছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.