বিরোধী শূন্যই থাকবে, না ঘাসফুল ফুটবে বহরমপুরের মাটিতে। এই প্রশ্নের নানা উত্তরে রবিবারের বহরমপুর থাকল সরগরম।
নিজের নিজের সম্মান রক্ষার জন্য বহরমপুর পুরভোটের ফলের দিকে তাই তাকিয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং জেলা তৃণমূলের নির্বাহী সভাপতি হুমায়ুন কবীরও। ‘বহরমপুর পুরভোটের ফল রাজ্য কংগ্রেসকে পথ দেখাবে’ বলে গত ২৮ অক্টোবর বহরমপুরে প্রতিবাদ সভায় এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান। ‘বহরমপুর পুরভোটের ফল রাজ্য কংগ্রেসকে অক্সিজেন দেবে’-অধীরবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছে। তাই ‘দাদা’ দায়িত্ব পালন করতে পারলে প্রদেশ নেতৃত্বের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠবেন। অন্য দিকে, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ‘ভাই’-এর নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় তৈরি হবে তৃণমূলের অন্দরে। তাই অধীরবাবু ও হুমায়ুনের কাছে বহরমপুর পুরভোট অগ্নিপরীক্ষাও।
ভোটের ফল প্রকাশের ২৪ ঘন্টা আগে বিরোধীদের কথা, গত তিন বারের মতো বিরোধী শূন্য পুরবোর্ড গঠন করতে পারলেই জেলা কংগ্রেস সভাপতি দৃষ্টান্ত তৈরি করবেন। অধীরবাবুর সাফ কথা, “দুর্বৃত্তদের হাত থেকে শহরকে বাঁচাতে বহরমপুরের মানুষের কাছে কংগ্রেসের ২৮ জন প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। আশা করছি বিরোধী শূন্য পুরবোর্ডই গড়বে কংগ্রেস। আমি বোর্ডের বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হব।”
গত ২২ নভেম্বর বহরমপুরের ২৮টি ওয়ার্ডের ১৪৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। পুরবোর্ড গঠনকে ঘিরে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যতটা কৌতূহল রয়েছে, সেই তুলনায় কিন্তু তাঁরা ভোটে সামিল হননি বলেও অভিযোগ। গত বারের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ ভোট এ বার কম পড়েছে। এ বার মোট ভোটার ছিলেন ১ লক্ষ ১২ হাজার ৯২৭ জন। ভোট পড়েছে ৮৯৭৩৭টি।
পুরভোটে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে৯৩.১১%। আর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের পদ্মা হাউসিং পুলিশ আবাসন ১৪২ নম্বর ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে৫৩.৪৭%। তবে ১৪৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ছ’টিতে। ওই ছ’টি কেন্দ্র হল২ নম্বর ওয়ার্ডের মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৯৩.১১%, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৯১.৭২%, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দাবাদ পুরসভা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৯০.৩৪%, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কলোরব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৯০.০৭%, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নরেন্দ্রনাথ শিক্ষা নিকেতন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৯১.০২%, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসিটিসি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৯০.৪৮%। কয়েকটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের পিছনে ঠেলে দিয়েছে মহিলা ভোটাররা। যেমন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অম্বেডকর পল্লির জিএসএফপি স্কুল ৯৬ নম্বর ভোটগ্রণ কেন্দ্রে ৮৫১ জনের মধ্যে ৩৪৫ জন পুরুষ ও ৫০৬ জন মহিলা ভোট দিয়েছেন।
তবে পুরভোটে যে সমস্ত ওয়ার্ডের ফলাফলের দিকে আগ্রহ সাধারণ নাগরিকদের, সেই ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট পড়েছে ৩৭৬০টি, ৪ নম্বরে ৪৯০২, ৫ নম্বরে ৩৮০৪, ৯ নম্বরে ৩৪২৬, ১০ নম্বরে ৩৭০২, ১৭ নম্বরে ৪০৮৭, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৪১৭টি ভোট পড়েছে।
তৃণমূলের হুমায়ুন কবীরের দাবি, “কোনও ভাবে বিরোধী শূন্য বোর্ড হবে না। ৩-৫টি আসনে জিতছি।” সিপিএমের মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যেরও দাবি, “পুরবোর্ড বিরোধী শূন্য হবে না। ৩-৫টি আসনে আমরা লড়াই দিয়েছি। জয়ের আশাও করছি।” |