বামশূন্য বোর্ড হবে কি, বাজি ঝাড়গ্রামে
সাত সকালে মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রৌঢ়ের প্রশ্ন, “১৭-০ করে অরণ্যশহরের লালমাটিতে সবুজ ঘাসফুল ফুটবে তো? বড্ড চিন্তা হচ্ছে।” প্রশ্নকর্তা তৃণমূলের এক বরিষ্ঠ নেতা। এই আশঙ্কার পিছনে সঙ্গত কারণ রয়েছে। ফল ঘোষণার আগে রবিবার প্রতিপক্ষ বামেরা অঙ্ক কষে জানিয়েছেন, বিনা যুদ্ধে মাটির দখল হচ্ছে না। আজ লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
কমপক্ষে ৮টি আসনে বামপ্রার্থীরা খুব ভাল ফল করবেন, এমনটাই জানাচ্ছেন শহর বামফ্রন্টের আহ্বায়ক শিবনাথ গুহ। বামেদের অঙ্কের ঠেলায় তৃণমূল শিবিরের রক্তচাপ বাড়ছে। তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, টানা তিন দশক পুরবোর্ডের ক্ষমতায় থাকা বামেরা এবার সরছেই। ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের উত্তরসূরি তথা দলের পুরপ্রধান পদপ্রার্থী দুর্গেশ মল্লদেব নির্বাচনের দিন ভোটদানের হার দেখে দৃশ্যতই উত্‌ফুল্ল হয়ে জানিয়েছিলেন, বামশূন্য করে সব ক’টি আসনই তাঁরা দখল করবেন। তৃণমূলের দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, ঝাড়গ্রামকে বর্ধমান বানানোর জন্য শীর্ষনেতৃত্বের তরফে চাপ ছিল। সেই কারণে এবার অরণ্যশহরে প্রচার-ঝড় তোলা হয়। দলের অন্দরে একাধিক গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে উপদলীয় চক্রান্তের অভিযোগ করেছিলেন। সেই কারণে প্রচারে এসে বারে-বারেই একতার বার্তা দেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীরা। জঙ্গলমহলে রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য শেষ মুহূর্তে তাঁকে দিয়েও পদযাত্রা ও প্রচারসভা করানো হয়। ঝাড়গ্রাম পুরসভা ১৭-০ করে দখলের ডাক দিয়েছিলেন শুভেন্দুবাবুও।
পুরভোটের ফল আজ
আজই জানা যাবে কার দখলে যাবে এই ভবন।—ফাইল চিত্র।

দুর্গেশ মল্লদেব
জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক

কিন্তু এত কিছুর পরেও বামশূন্য করে পুরবোর্ড দখল করা যাবে কি-না তা নিয়ে দলের অন্দরেই কার্যত বাজি ও পাল্টা বাজি ধরছেন তৃণমূল কর্মীরা। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূলই পুরবোর্ডের ক্ষমতা দখল করতে চলেছে। দীর্ঘদিন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে আসা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে বামপ্রার্থীরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। ১০, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাম ও তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ‘জব্বর লড়াই’ হবে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী বিদায়ী পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বিপক্ষে রয়েছেন তৃণমূলের পেশায় ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম সিংহ। এই ওয়ার্ডে গোঁজ প্রার্থী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল শিবির। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী দুর্গেশবাবুর সঙ্গে সিপিএম প্রার্থী সৌমেন মাহাতোর লড়াইটা জবরদস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা আনন্দমোহন পণ্ডাদের সঙ্গে বাম প্রার্থীদের সমানে-সমানে টক্কর হবে।
এই সব হিসেব-নিকেশকে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দুগের্শবাবু। তাঁর কথায়, “বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম তথা বামেরা সাফ হয়ে গিয়েছে। ওদের কোনও হিসেবই মেলেনি। এবার ঝাড়গ্রাম শহরেও ওরা ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে।” শহর বামফ্রন্টের আহ্বায়ক শিবনাথ গুহ’র পাল্টা বক্তব্য, “আমরা লড়াইয়ে আছি। কমপক্ষে ৮টি আসনে আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে।” এই আকাশকুসুম ভাবনার উত্‌স কোথায়? ঝাড়গ্রামের বিদায়ী পুরপ্রধান তথা সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক প্রদীপ সরকারের জবাব, “বুথস্তরের কর্মীদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ৮টি ওয়ার্ডে (১, ২, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৬ ও ১৮) আমরা জয়ের আশা করছি। এ ছাড়া ১২, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা জোর লড়াই দেব।”
তথ্য বলছে, ২০০৮ সালের পুরভোটে বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৬ শতাংশ। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে অরণ্যশহরে বামেদের ভোটের হার কমে হয় ৫৩ শতাংশ। গত বিধানসভা ভোটে অরণ্যশহরেও বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমে হারটা কমে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। বামেদের যুক্তি, গত আড়াই বছরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। তাই এ বার ভোট-প্রচারে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা বারে বারে অরণ্যশহরে ছুটে এসেছেন। বড়সড় পদযাত্রা ও সভা করেছে তৃণমূল। কিন্তু বামেরা বাড়ি বাড়ি প্রচারের উপর জোর দেন। বামেদের দাবি, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু এবং বস্তি এলাকার ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রদীপবাবুরা আরও দাবি করছেন, “বাম প্রার্থীদের সকলেই গণ-সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সেই সুবাদে বামপ্রার্থীদের জনসংযোগের ক্ষেত্রটিও বেশি।”
বামেরা ভোটের ফল নিয়ে অঙ্ক কষে আগাম দাবি করছেন বটে, কিন্তু তাঁরাও স্বস্তিতে নেই। শাসক দল ও প্রশাসনের একাংশ ভোটের ফলে গোলমাল করে দিতে পারে বলে রবিবার রাত থেকেই বাম শিবিরে গুঞ্জন উঠেছে। প্রদীপবাবুর আশঙ্কা, “শেষ মুহূর্তে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হতে পারে। এ দিন মেদিনীপুর থেকে কালো কাঁচ বন্ধ কয়েকটা গাড়ি শহরে এসেছিল। রাজ কলেজের দোতলায় যে ঘরটিতে সিল-করা ভোটযন্ত্রগুলি তালাবন্দি হয়ে রয়েছে, সেই স্ট্রং রুমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়। এ ব্যাপারে আমরা নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।” সিপিএমের আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার রাতে কমিশনের নিয়মানুযায়ী এক সিপিএম কর্মীকে স্ট্রং রুমের বাইরে পাহারায় থাকার অনুমতি দিয়েছেন পুর-রিটার্নিং অফিসার। তৃণমূলের একাংশের ১৭-০ দাবির প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “আমি গণত্‌কার নই। তবে গত আড়াই বছরে জঙ্গলমহলের উন্নয়ন ও শান্তি দেখে অরণ্যশহরের মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমরা ভাল ফলের আশা করছি।”
সোমবার ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের গণনা কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ১৭টি ওয়ার্ডের ভোট গণনা শুরু হবে। সকাল ১১টার মধ্যেই জানা যাবে অরণ্যশহরের মাটির দখল কারা নিল। ততক্ষণ দুই শিবিরেই টানটান উদ্বেগ আর আশঙ্কা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.