বুথে ভিড় সামলাতে হিমশিম পুলিশ
মেঘলা হেমন্তের সকালে দুই সেনাপতির কপালেই বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখে-মুখে প্রবল উদ্বেগের ছাপটা আড়াল হচ্ছে না ঠোঁটের কোণের পরিচিত হাসিতে। প্রথমজন টানা পনেরো বছর পুরসভায় রাজ্যপাট চালিয়েছেন। এ বার চতুর্থবার ভোটের ময়দানে লড়াইটা যে রীতিমতো কঠিন তা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন বিদায়ী পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। দ্বিতীয় জন তৃণমূলের ‘পুরপ্রধান’ পদপ্রার্থী দুর্গেশ মল্লদেব। মুখে নিরঙ্কুশ জয়ের কথা বললেও ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের এই উত্তরপুরুষের কপালে ঘাম-বিন্দু। দিনের শেষে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে শুনে অবশ্য একটু আশ্বস্ত দেখায়। বিপুল এই ভোটের সিংহভাগই তৃণমূলের অনুকূলে যাবে বলে স্থির বিশ্বাস তাঁর।
আর সেই আত্মবিশ্বাসের কাছে প্রদীপবাবুর মাথায় ঘিয়ে রঙের ‘স্পোর্টিং ক্যাপ’টা বড্ড বেশি প্রতীকী। অরণ্যশহরের ক্ষমতা দখলের যুদ্ধই বটে! এ দিন সক্কাল-সক্কাল ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোড়াধরা সমবায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বুথে ভোট দিতে যান প্রদীপবাবু। ভোটদানের সময় কিছুতেই নিজের ছবি তুলতে দিলেন না সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের।
দুর্গেশ মল্লদেব (বাঁ দিকে)। ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রদীপ সরকার।
বুথের বাইরে আসতেই অবশ্য ক্যামেরা-বন্দি হয়ে গেলেন তিনি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একবার কেবল বললেন, “কেন আর ছবি তুলছেন?” তাঁর ওয়ার্ডে মোট তিনটি বুথ। দু’টো বুথ কাছাকাছি। তৃতীয়টা কিছুটা দূরে। প্রদীপবাবু অসহায় ভাবে বললেন, “এখানে দু’টো বুথের উপর নজর রাখছি। নেতাজি আদর্শ স্কুলের বুথের সামনে তৃণমূল জমায়েত করেছে শুনছি। কিন্তু এই দু’টো বুথ ছেড়ে ওখানে যেতে পারছি না। তাহলেই এখানে দু’টো বুথে ওরা গোলমাল পাকাতে পারে।”
প্রদীপবাবু যখন আশঙ্কার কথা বলছেন, তখন ১৪ নম্বর ওয়ার্ড চষে বেড়াচ্ছেন দুর্গেশবাবু। সকালে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেকেআই স্কুল বুথে ভোট শুরুর সময়েই বিপত্তি। ইভিএম মেশিন বিগড়ে যাওয়ায় লাইনে দাঁড়ানো ভোটারেরা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। উদ্বিগ্ন রাজপুরুষ বার বার ফোনে ধরছেন রিটার্নিং অফিসারকে। বার তিনেক ইভিএম বদলানোর পরে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ কেকেআই বুথে শুরু হল ভোটগ্রহণ। নিশ্চিন্ত হয়ে দুর্গেশবাবু জানিয়ে দিলেন, “এই প্রথমবার পুরভোটে ঝাড়গ্রাম শহরের ভোটারেরা নির্ভয়ে নিজের ভোটটা দিতে পারছেন। যদিও দু’একটি জায়গায় বামেরা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। তবুও ১৭-০ করে আমরা পুরবোর্ড দখল করছিই।” তিনি নিজে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। সকাল এগারোটা নাগাদ ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজ রূপান্তরিত বুনিয়াদি বিদ্যালয় বুথে ভোট দিয়েই ফের নিজের ওয়ার্ডের দিকে ছুটলেন দুর্গেশবাবু।
সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভালুকখুলিয়া জিএসএফ প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে তখন অর্ধেক ভোটার ভোট দিয়ে ফেলেছেন। এক সময়ে সিপিএমের খাসতালুকে এবার বুথ ক্যাম্পই করতে পারেনি বামেরা। তবে বুথে সিপিএম প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। ভোট দিয়ে বেরিয়ে ফুল ব্যবসায়ী তাপস বারিক, গৃহবধূ কাজল মাহাতোরা বললেন, “শহরে থেকেও আমাদের ওয়ার্ডটির হাল গ্রামের চেয়েও খারাপ। এ বার তাই পরিবর্তন চাই।”
‘পরিবর্তন চাই’ বলেই কী ভোটদানের হার বেশি? বস্তুত এ দিন সকাল সাতটার আগে থেকেই বুথে-বুথে ভোটারদের সংখ্যা চোখের পড়ার মতো ছিল। সকাল ১১টায় ভোটের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। দুপুর ১টার পর ভোটের হার বেড়ে হয় ৬৫ শতাংশ। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বামদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে লম্বা লাইন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় ট্যাক্স কনসালটেন্ট তপোব্রত চক্রবর্তী কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকলেও ভোট দেওয়ার জন্য সকালের ট্রেনে চলে এসেছেন শহরে। তাঁর কথায়, “এবারের ভোটটা অন্য রকম। তাই নষ্ট করলাম না।”
চাইলেও অবশ্য ভোট ‘নষ্ট’ করতে দিচ্ছেন না তৃণমূল কর্মীরা। বিকেল ৩টে নাগাদ ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথের সামনে তৃণমূল প্রার্থী লক্ষ্মী সরেনের স্বামী শুকলাল সরেন ফোনে এক কর্মীকে বললেন, “সুভাষ হালদারের বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। পুরসভায় একটা ভোট নষ্ট হওয়াটা ঠিক নয়।” ভোটপর্ব সাঙ্গ হওয়ার পর ওই বুথে চার জনকে ভোট দেওয়ানোর জন্য দাবি জানাতে থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল কমীদের অভিযোগ, প্রিসাইডিং অফিসার তিনটে বাজার পাঁচ মিনিট আগে ভোটপর্ব শেষ করে দেন। তাই চার জন ভোট দিতে পারেননি। পুলিশ এসে বিক্ষোভ সামাল দেয়।
এ দিকে, বিকেল গড়াতেই বাম শিবিরে হতাশা গ্রাস করতে শুরু করে। অধিকাংশ বুথ থেকে পোলিং এজেন্টেরা বেরিয়ে যান। শহর বামফ্রন্টের আহ্বায়ক শিবনাথ গুহ বলেন, “বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস ও চাপের মধ্যে আমাদের কর্মীরা ভোটের কাজ করেছেন। দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদে ভোট শান্তিতেই হয়েছে। তবে দুপুরের পর আমাদের অধিকাংশ বুথ ক্যাম্প থেকে বাম কর্মীদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ভোটের ফল নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরবিএম বুথে ভোট দিয়ে বেরিয়ে হেভিওয়েট মন্ত্রী-ভোটার সুকুমার হাঁসদা অবশ্য বলে দিচ্ছেন, “পুরবোর্ড আমরাই দখল করব।” ভোটের ফল কী ১৭-০ হবে? সুকুমারবাবুর জবাব, “সেটা সোমবারই জানা যাবে।”
অপেক্ষা এখন সোমবারের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.