|
|
|
|
মাওবাদী পর্বে স্বজনহারা রিনা-অর্চনারা আঁধারেই |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেনজির মৃত্যুর পরে কেটেছে দু’বছর। পরিবর্তনের পরে সরকারের নানা প্রকল্প আর যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি আমজনতার একটা বড় অংশের স্মৃতিতে প্রায় আবছা করে দিয়েছে জঙ্গলমহলে মাওবাদী নাশকতার অধ্যায়। কিন্তু ২০১১-র আগের সেই সময়টা এখনও ভুলতে পারেন না লালগড়ের অর্চনা প্রতিহার কিংবা ঝাড়গ্রামের রিনা গিরি। জঙ্গলমহলের সেই সন্ত্রাস-পর্বে রিনা-অর্চনার মতো অনেকেই প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। কেউ নিহত, কেউ বা এখনও নিখোঁজ।
রিনা গিরি
|
অর্চনা প্রতিহার
|
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধের মধ্যে পুলিশকর্মীদের খাবার বিক্রি করায় মাওবাদীরা গুলি করে মেরেছিল লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি চকের বরুণ প্রতিহারকে। রাস্তার ধারে টিনের ছাউনি দেওয়া হতশ্রী মাটির বাড়িতে কোনও মতে বেঁচে আছেন তাঁর স্ত্রী অর্চনা প্রতিহার। ক্ষতিপূরণের কানাকড়িও পাননি। অর্চনাদেবী বলেন, “পুলিশকে খাবার দেওয়ার জন্যই তো আমার স্বামীকে প্রাণ দিতে হল। অথচ চার বছর পরেও কিছুই পেলাম না। কী ভাবে যে ছেলেমেয়েকে বড় করব!”
ঝাড়গ্রামের আগুইবনি গ্রামের অজিত গিরি স্থানীয় বিরিহাঁড়ি বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে ভূগোলের পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন। ২০১০ সালের এক বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হন তিনি। সন্দেহ, মাওবাদীরাই অজিতকে অপহরণ করে। আজও তিনি নিখোঁজ। অজিতবাবুর স্ত্রী রিনাদেবী তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। ক্ষতিপূরণ বা চাকরি, জোটেনি কিছুই। রিনাদেবীর কথায়, “আমার স্বামী সিপিএম সমর্থক ছিলেন। কোন অপরাধে তাঁর এই দশা হল, জানি না।” অর্চনাদেবীর মতো তাঁরও দুশ্চিন্তা, কী ভাবে মেয়েকে মানুষ করবেন।
২০০৯ থেকে ২০১১ সন্ত্রাসের জঙ্গলমহলে একটা সময় শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির মাওবাদী-জনগণের কমিটির দিকে। কয়েকটি ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সিপিএমেরও। মাওবাদী সন্দেহে ধৃতদের জেরা করে কয়েকজনের দেহাবশেষ মিললেও অধিকাংশেরই খোঁজ মেলেনি। যেমন সাবির মোল্লা ও কাঞ্চন গরাই। ২০০৯-এ লালগড় থেকে নিখোঁজ হন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের এই দুই কনস্টেবল। ঘটনার কয়েক দিন আগে লালগড়ের ধরমপুর ক্যাম্পে তাঁদের ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল। বছর দু’য়েক আগে ধরমপুরের জঙ্গল-এলাকা থেকে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সাবির ও কাঞ্চনের পরিজনদের রক্তের নমুনাও নেওয়া হয়। কিন্তু দেহাবশেষ আদৌ সাবির ও কাঞ্চনের কি না তা জানতে পারেননি পরিজনরা। মাসে মাসে দুই পুলিশকর্মীর বেতন পরিবারের সদস্যদের হাতে যাওয়ায় আর্থিক অনটন হয়তো নেই। কিন্তু মানসিক যন্ত্রণা? সাবিরের স্ত্রী জাহানারা বেওয়া বলেন, “আমরা জানতে চাই সাবির আর কাঞ্চনের কী হয়েছে। এই মানসিক যন্ত্রণা আর ভোগ করতে পারছি না।’’
বেলপাহাড়ির ওড়লি গ্রামের ‘প্রাক্তন মাওবাদী’ উদয় মাহাতোরও তিন বছর হল কোনও খোঁজ নেই। মূলস্রোতে ফিরতে চেয়ে এই যুবক গ্রামে উন্নয়নমূলক নানা কাজ শুরু করেছিলেন। গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য ‘স্বপ্নপুরী’ নামে আবাসিক শিক্ষা-কেন্দ্র চালু করেছিলেন উদয়। ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চাকাডোবা থেকে ওড়লি ফেরার পথে নিখোঁজ
হন তিনি। তিন বছর ঘুরে গেলেও খোঁজ মেলেনি উদয়ের। আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত যদিও বলেন, “নিখোঁজদের সন্ধানে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়। এ ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক সবই করা হচ্ছে।” আর রিনা, অর্চনাদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া প্রসঙ্গে আইজি-র বক্তব্য, “বেশির ভাগই ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছেন। যাঁরা পাননি তাঁদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
|
পুরনো খবর: কিষেণজি নেই, হিংসাও না, জঙ্গলমহলে তবু মাওবাদী |
|
|
|
|
|