একা তৃণমূলের বোর্ড গড়া কঠিন
ড় জোর দুপুর ১২টা। আজ দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কার দখলে থাকবে মেদিনীপুর পুরসভা। কিন্তু এত অপেক্ষা সয় না। চায়ের কাপে তুফান তুলে তাই এখন জোর আলোচনা, তৃণমূল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুরসভার দখল নেবে কি না। চায়ের দোকান, মোড়, মহল্লা সরগরম মেদিনীপুর। মেদিনীপুর শহরে বামবিরোধী ভোট বরাবরই বেশি। তার উপর এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সাফল্য মেলায় তৃণমূল নিশ্চিত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই পুরবোর্ড গঠন করবে তৃণমূল। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষের মতে, “আমরা যদি ২০টি ওয়ার্ডও দখল করি তা হলে বিস্মিত হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ, মানুষ বামফ্রন্টকে আর চাইছে না। তাই পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের অভাবনীয় সাফল্য মিলেছিল। গ্রাম থেকে যদি মানুষ সিপিএমকে উত্‌খাত করতে পারে, তাহলে শহর থেকে নয় কেন? প্রচারে আমরা সব দলকেই পিছনে ফেলেছিলাম। ফলাফলেও তাই হবে। আমরাই এককভাবে বোর্ড গড়ব।”
তৃণমূলের এই দাবিকে অবশ্য নস্যাত্‌ করে দিচ্ছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস গতবার চারটি ওয়ার্ড দখল করেছিল। এ বার কংগ্রেসের আশা, ন্যূনতম একটি আসন বাড়বেই। এমনকী ২-৩টিও বাড়তে পারে। তৃণমূল নেতৃত্বও আড়ালে-আবডালে স্বীকার করে নিচ্ছেন কংগ্রেসের আসন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়াও রয়েছেন দুই অতি পরিচিত নির্দল। একজন হল বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল সুভাষময় ঘোষ। যাঁকে হারানো কঠিন। অন্য দিকে রয়েছেন বিশ্বেশ্বর নায়েক (অবাম হিসাবেই পরিচিত)। বিকাশ পরিষদের নাজিম আহমেদকেও হারানো কঠিন। বামফ্রন্টের দাবি, তাদের জোটের দু’টো আসন বাড়বে। অর্থাত্‌ গতবারের ৮টি আসন থেকে ২টি বাড়িয়ে পৌঁছে যাবে ১০-এ। জটিল অঙ্কে অনেক কেটে-ছেঁটেও ৭টি আসন মিলবেই।
যদি এই অঙ্কও ধরা হয়, অর্থাত্‌ বামফ্রন্ট জোট ১টি আসন হারাবে, এবং কংগ্রেস কোনও আসন বাড়াতে পারবে না, তা হলেও পুরবোর্ড ত্রিশঙ্কু হয়ে যায়। কারণ, সেক্ষেত্রে বামফ্রন্ট জোটের ৭, কংগ্রেসের ৪ ও ২ নির্দল মিলিয়ে ১৩টি পাচ্ছে বাম-বিকাশ পরিষদ-কংগ্রেস-নির্দলেরা। ২৫টি ওয়ার্ডের পুরসভায় ১৩টি আসন না পেলে কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি তথা এ বারের পুরভোটের প্রার্থী শম্ভু চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এ বার আমরা সম্মানজনক আসনই পাব। আশা করি, আসন বাড়বে কিন্তু কমবে না। ন্যূনতম ২টি আসন বাড়বেই।”
আর সিপিএমের মেদিনীপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক কীর্তি দে বক্সীর কথায়, “ভোটের আগে থেকেই অনেক অঙ্ক চলছে। মানুষ যে উন্নয়ন চেয়েছিল তা তাঁরা পাননি। সেই কারণেই এ বার আমাদের আসন বাড়বে। আমাদের জোট ও নির্দল মিলিয়ে ১০-১২টি আসন পাব।” বিকাশ পরিষদ নেতা নাজিম আহমেদও বলেন, “এ বার জোটের আসন বাড়বে। আমার বিকাশ পরিষদের আগে ১টি আসন ছিল, এ বার ২টি হবে বলে আমার আশা।”
বস্তুত, বেশ কিছু ওয়ার্ডের ফলাফল নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ধরা যাক ২ নম্বর ওয়ার্ডের কথা। যেখানে প্রয়াত তৃণমূল কাউন্সিলর দেবী চক্রবর্তীর ছেলে নির্মাল্য চক্রবর্তী এ বার প্রার্থী হয়েছেন। যে ওয়ার্ডে দীর্ঘ দিন ধরে দেবী চক্রবর্তীর হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করতেন ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি অসীম ধর, এ বার বিক্ষুব্ধ হয়ে তিনিই নির্দল প্রার্থী। অনেকের মতে, অসীমবাবুই নাকি জিতবেন। কেউ কেউ বলছেন, নির্দল হয়ে দলীয় প্রতীককে হারানো সহজ নয়। কিন্তু ভোট তো কাটবে। তখন কী হবে? দীর্ঘ দিন এই ওয়ার্ডে কংগ্রেস থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মান্তু আহমেদ তার সুফল তুলতেই পারেন। কিংবা বামফ্রন্টও সুযোগ নিতে পারে। একই ভাবে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল ভকতের কাঁটা হয়ে নির্দল দাঁড়িয়েছেন দীর্ঘ দিনের পুরনো কাউন্সিলর গণেশ ভকত। তিনি যদি কিছু ভোট কেটে নেন সেক্ষেত্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী উত্তম গোপের সুবিধে হয়ে যাবে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী শিপ্রা মণ্ডলের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা শিবু পানিগ্রাহীর স্ত্রী সীমা পানীগ্রাহী প্রার্থী হয়েছেন। সর্বত্রই আবার কংগ্রেসও প্রার্থী দিয়েছে।
বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই প্রার্থী রয়েছে বিজেপিরও। এ বার শহরে বিজেপির ভোট কিছুটা বাড়বে বলেই আশাবাদী বিজেপি নেতা তথা পুরভোটের প্রার্থী শুভজিত্‌ রায়। তাঁর কথায়, “এবার আমাদের ভোট অনেকটাই বাড়বে।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর পুরসভায় সিপিএমের ভোট ছিল ৩৮ শতাংশ। তৃণমূল হাওয়ায় হোক বা পুর নির্বাচন বলে হোক, সেই ভোট ব্যাঙ্কে যদি কিছুটাও ভাটা পড়ে তা হলে তা বড়জোর ৩৫ শতাংশে নামবে বলে সিপিএম মনে করছে। তর্কের খাতিরে আরও ৫ শতাংশ নামালেও তা ৩০ শতাংশ। তা হলে বাকি রইল ৭০ শতাংশ ভোট। যেখানে তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি ও একাধিক নির্দল প্রার্থী থাবা বসাবে। এক্ষেত্রে যে দল এলাকার মোট ভোটারের ৩০ শতাশের বেশি নিজেদের কব্জায় আনতে পারবে তিনিই নিশ্চিত জয়ী হবেন বলা যায়।
এখন প্রার্থীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সব মিলিয়ে ১১৫ জন। অর্থাত্‌ গড়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ জন করে প্রার্থী তো রয়েছেনই, কোনও কোনও ওয়ার্ডে ৫ থেকে ৭-৮ জনও রয়েছেন। ভোটের এই অঙ্কে সাধারণ নির্দল প্রার্থীরা ১০০-১৫০ ভোট কেটে নিলেও বিপাকে পড়তে হবে অনেক প্রার্থীকে। সেক্ষেত্রে অতি সামান্য ব্যবধানেই হয়তো হারতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে। এই অঙ্কে ভোটের আগের দিনেও নিজেদের জয় নিয়ে ধন্ধে প্রার্থীরা।
আজ পুরভোটের ফল



গণনাকেন্দ্র পরিদর্শনে মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত।—নিজস্ব চিত্র।
গণনা এক নজরে
মেদিনীপুর কলেজে।
৪টি হলঘরে গণনা। টেবিল ৩২টি।
ভোটকর্মী:
সকাল ৮টায়।
নিরাপত্তা:

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.