|
|
|
|
ভিডিও ক্যামেরা কই, মীরার ফোনে শোরগোল
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একটি ফোন। আর তাতেই মেদিনীপুরে পুরভোটের দিন শোরগোল পড়ে গেল প্রশাসনে। ফোনটি করেছিলেন খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
নির্দেশ ছিল, প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভিডিও ক্যামেরা থাকবে। যাতে গোলমাল হলেই সেই ছবি ধরা পড়ে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি বুথ ছিল বিএড কলেজ ক্যাম্পাসে। ৪টি বুথের একটির প্রিসাইডিং অফিসার তিমিরবরণ মাইতির কাছে ভোটগ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরে একটি ফোন আসে। ফোন করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক। জানতে চান, বুথে কতজন এজেন্ট রয়েছেন, কতজন ভোট দিয়েছেন, লাইনে ক’জন আছেন ইত্যাদি। বুথের সামনে ভিডিও ক্যামেরা রয়েছে কিনা, তা-ও জানতে চান। তিমিরবাবু জানান, ‘ছিল। তবে, এখন নেই।’ এরপরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ফোন করেন মহকুমাশাসক (সদর) তথা পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার অমিতাভ দত্তকে। জানতে চান, ‘কেন ওই বুথের সামনে ভিডিও ক্যামেরা নেই?’ এরপরই শোরগোল পড়ে যায় প্রশাসনের অন্দরে। পরে খোঁজ নিয়ে মহকুমাশাসক (সদর) কমিশনারকে জানান, ‘ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেও ভিডিও ক্যামেরা রয়েছে।’ এরপর ভিডিও ক্লিপিংস্ চেয়ে পাঠান মীরাদেবী। আগে থেকেই তৎপরতা ছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ফোন আসার পর প্রশাসন যেন আরও একটু তৎপর হয়। সেই তৎপরতার রেশ ছিল ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। |
|
শহরে ভোটের সাজ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
এমন কিছু উত্তেজনা আর বিক্ষিপ্ত গোলমাল ছাড়া শুক্রবার নির্বিঘ্নেই মিটল মেদিনীপুর পুরসভা নির্বাচন। গোলমালের খবর পেলেই দ্রুত পৌঁছে গিয়েছেন পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বে থাকা এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা। পৌঁছে গিয়েছে বাড়তি পুলিশ বাহিনীও। ফলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। মেদিনীপুরে ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। মহকুমাশাসক (সদর) তথা পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার অমিতাভ দত্তরও বক্তব্য, “নির্বাচন নির্বিঘ্নেই হয়েছে।”
ভোট যে মোটের উপর শান্তিতেই হয়েছে, মানছেন বিরোধীরাও। সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক কীর্তি দে বক্সী বলেন, “গত সাত-আট দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চাপা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। কত হুমকি, কত শাসানি। তবে শহরবাসী কোনও কিছুর পরোয়া করেনি।” কংগ্রেসের শহর সভাপতি সৌমেন খানও মানছেন, “সন্ত্রাস উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়েছেন।” বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসের বক্তব্য, “যাবতীয় সন্ত্রাস উপেক্ষা করে মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন।” সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগই অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যা বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হয়েছে। সিপিএম-কংগ্রেস সন্ত্রাস-সন্ত্রাস বলে চেঁচাচ্ছিল। কিন্তু মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন। আমরা বিপুল জয় পাব।”
মহাতাবপুর, পাহাড়িপুর, কবরডাঙা, বিধাননগর-সহ কয়েকটি এলাকায় এ দিন বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়। মহাতাবপুরের একটি বুথে কংগ্রেস কর্মীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তৃণমূলের বক্তব্য, ইভিএমে হাত চিহ্নের পাশে কালি লাগানো হয়েছিল। অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়। পাহাড়িপুরে কংগ্রেস-তৃণমূল, দু’দলের কর্মীরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন। কবরডাঙায় ভোটের লাইন ধীর গতিতে এগোনো নিয়ে সমস্যা শুরু হয়। বিধাননগরে সিপিএম ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্য বচসা বাধে। দুপুরে পোস্ট অফিস রোডের সামনে থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী উত্তম গোপের নির্বাচনী এজেন্ট কুন্দন গোপকে আটক করে পুলিশ। ভোট মিটতেই অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, নির্বাচনী এজেন্ট প্রার্থীদের প্রভাবিত করছিলেন। অভিযোগ মানেনি সিপিএম নেতৃত্ব।
এ দিন প্রতি বুথে ২ জন করে সশস্ত্র পুলিশ ও ২ জন করে লাঠিধারী পুলিশকর্মী ছিলেন। পাশাপাশি, প্রতিটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন একজন করে এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। সকাল থেকেই এলাকা পরিদর্শনে বেরোন দুই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক। ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ থেকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন নিত্যানন্দ মণ্ডল।
মেদিনীপুরবাসী এখন সোমবারের অপেক্ষায়। ওই দিনই ভোগণনা। |
পুরনো খবর: বুথে ভিডিও ক্যামেরা, নিরাপত্তায় মোড়া শহর |
|
|
|
|
|