তৃণমূলের ক্যাম্পে ‘অচেনা’ দীপক, ছুটির মেজাজে মৃগেন
‘ভাল আছেন?’ ‘আছি, তোমরা?’
সকাল দশটা। চার্চ স্কুলে ভোট দিয়ে বেরিয়ে দলের জেলা সম্পাদক তথা ‘একদা’ দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা দীপক সরকার সস্ত্রীক ঢুঁ মারলেন তৃণমূলের ক্যাম্পে। তারপরই তৈরি হল বিরল সৌজন্যের আবহ। কয়েক জন তৃণমূল কর্মী উঠে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভালো আছেন?’ হাসিমুখে দীপকবাবু বললেন, ‘আছি। তোমরা?’ কিছুক্ষণ কথা। তারপর পা বাড়ালেন সিপিএমের ক্যাম্পের দিকে।
নির্বিঘ্নে শেষ হওয়া পুরভোটের দিনে দৃশ্যতই একেবারে অন্য মেজাজে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক। কথা বলেছেন কংগ্রেস প্রার্থী সুদেষ্ণা নন্দীর সঙ্গে। আগে কখনও ভোটের দিন দীপকবাবুকে এ ভাবে দেখা গিয়েছে? না। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গেও কথা বললেন? সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলছিলেন, “না বলার কী আছে? এলাকার কয়েক জন পরিচিতের সঙ্গে দেখা হল, তাই।”
কংগ্রেস প্রার্থী সুদেষ্ণা নন্দীর সঙ্গে আলাপচারিতায় দীপক সরকার (বাঁ দিকে)।
ভোট দিতে সপরিবার বিধায়ক মৃগেন মাইতি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন দীপকবাবুর সঙ্গেই ভোট দিতে আসেন স্ত্রী সুনন্দা সরকার, পুত্র সুদীপ্ত সরকার, পুত্রবধূ সুজয়া সরকার। ভোট দেওয়ার পর দলের ক্যাম্পের সামনে কিছুক্ষণ থেকে দীপকবাবু সোজা চলে যান মীরবাজারে, সিপিএমের জেলা অফিসে। সাড়ে দশটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত জেলা অফিসেই ছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যে খোঁজ নিয়েছে ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুর পুরভোটের পরিস্থিতির। কখনও তাঁর কাছে দলের কর্মী খবর নিয়ে এসেছেন, ‘মেদিনীপুরের একটি ওয়ার্ডে পুলিশ তো প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকেই বুথ ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছে না? এ ভাবে ভোট হয় না কি?’ জেলা সম্পাদক তখন ওই কর্মীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘এটা মাথা গরম করার সময় নয়। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে।’ কখনও অন্য এক কর্মী তাঁর কাছে খবর নিয়ে এসেছেন, ‘ঝাড়গ্রামের একটি বুথে তৃণমূলের লোকজন গোলমাল করার চেষ্টা করছে। বলছে, ওই বুথে না কি আমাদের দলের কর্মীরা কিছু ছাপ্পা ভোট মেরেছে।’ যা শুনে দীপকবাবু বলেছেন, ‘ঝাড়গ্রামের মতো এলাকায় আমাদের কর্মীরা ছাপ্পা ভোট মেরেছে! ভাবা যায়! আসলে, এ সবই ভোট বানচালের চেষ্টা।’
দিনটা একটু অন্য ভাবে কেটেছে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতিরও। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচার কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। চষে ফেলেছেন একের পর এক ওয়ার্ড। কখনও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গী ছিলেন। কখনও বা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। বৃহস্পতিবারও গভীর রাতে বাড়িতে পৌঁছন। ফলে, শুক্রবার সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। দুপুর বারোটা নাগাদ স্ত্রী সুজাতাদেবীকে নিয়ে পৌঁছন বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন ক্যাম্পাসে। ভোট দিয়ে ফের বাড়ি। সকাল থেকেই অবশ্য দলীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ঘনঘন তাঁর মোবাইল বেজেছে। কখনও ফোন করেছেন দলের প্রার্থী। কখনও বা কর্মী। জানিয়েছেন, এলাকার পরিস্থিতি। বিধায়কও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।
এ বার পুরভোটের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে সিপিএম-তৃণমূল, দুই দলের এই দুই ‘হেভিওয়েট’ নেতার নাম। কারণ, নিজেদের এলাকা ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা করেছেন দু’জনই। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি মেদিনীপুরের সিপাইবাজারে। ২ নম্বর ওয়ার্ডে। অন্য দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদকের বাড়ি বিধাননগরে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ২ নম্বর ওয়ার্ডে বরাবর তৃণমূলের জমি শক্ত। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের জমি শক্ত। কিন্তু, এ বার পরিস্থিতি অন্য ছিল। ফলে, এই দুই নেতা নিজেদের ‘গড়’ দখলে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লড়াইটা দু’জনের কাছে কঠিন হয়েছিল। ২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলকে ভাবিয়েছে নির্দল-কাঁটা। কারণ, প্রতীক না-পেয়ে নির্দল প্রার্থী হন দলেরই ওয়ার্ড সভাপতি অসীম ধর। পুরভোটের মুখে অসীমবাবুকে অবশ্য দল থেকে বহিস্কার করা হয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমকে ভাবিয়েছে পরিবর্তন-হাওয়া।
ভোট তো হল। ভোটের ফল কী হবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলছেন, “সোমবার তো গণনা। দেখাই যাক না কী হয়।” অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ী জবাব, “মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন। মানুষের রায় আমাদের পক্ষেই যাবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.