নজরে নির্বাচন |
যাক, বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল |
প্রণব ঘোষ। পশ্চিম মেদিনীপুরের উন্নয়ন পরিকল্পনা আধিকারিক। ঠিক ছিল, এ বার প্রতিটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে এক- একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সেই মতো দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রণববাবুর দায়িত্ব ছিল ১ নম্বর ওয়ার্ডে। মেদিনীপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। আর প্রণববাবুই গেল পঞ্চায়েত ভোটে সবং ব্লকের দায়িত্বে ছিলেন। আর গত বিধানসভা ভোটে দায়িত্বে ছিল গড়বেতা। সবং কংগ্রেসের খাসতালুক। আর বিধানসভা ভোটের আগেও গড়বেতার ছিল ‘লাল- দুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। অর্থাৎ, পর পর তিনটি ভোটে প্রণববাবু রাজ্যের তিন প্রধান দল কংগ্রেস- তৃণমূল ও সিপিএমের ঘাঁটি সামলালেন। এক কর্মী রসিকতা করে বলছিলেন, “যাক্। বৃত্তটা তাহলে সম্পূর্ণ হল।” |
বাহিনী নিয়ে চক্কর আইসি’র |
সকাল থেকে বিকেল। বিশেষ বাহিনী নিয়ে সারাদিন শহরের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে চক্কর কাটলেন কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। কখনও মহাতাবপুর, তো কখনও সিপাইবাজার। আইসি ছিলেন গাড়িতে। সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ কর্মী। গাড়ির পিছনে পাঁচটি মোটরবাইকে ১০ জন সশস্ত্র পুলিশ। পাঁচটি বাইকের পিছনে আবার একটি ম্যাটাডোর। ম্যাটাডোরে ৭ জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী। ভোটগ্রহণ শুরু হতেই বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর আসতে থাকে। খবর পেয়ে বিশেষ বাহিনী সেখানে পৌঁছে যায়। এ বার ভোটের কাজে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছিল ১,১২৩ জন পুলিশকর্মীকে। ইন্সপেক্টর ১৩ জন, এসআই, এএসআই ১০৯ জন, কনস্টেবল ১,০০১ জন। কনস্টেবলের মধ্যে ৫৫৯ জন সশস্ত্র, ৩৮৮ জন লাঠিধারী। নজরদারির জন্য ছিল অতিরিক্ত বাহিনী। যার ফল, নির্বিঘ্ন ভোট। |
ভোটের সকালেও নিরুত্তাপ |
|
ভোটারকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রের পথে কংগ্রেস প্রার্থী সৌমেন খান। |
সকাল ন’টা। পুরভোটের উত্তাপ ক্রমে চড়ছে। অথচ, মেদিনীপুরের ফেডারেশন হলে তখন উত্তাপ নেই। থাকবেই বা কী করে? বেশি সংখ্যক নেতাকর্মীই যে নেই। ফেডারেশন হলই তৃণমূলের অস্থায়ী অফিস। সেখানেই কি না ভোটের সকালে নিরুত্তাপ! সকালে অফিস আগলে বসেছিলেন শ্যাম পাত্র। দাসপুরের প্রবীণ তৃণমূল নেতা। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামবাবু বলছিলেন, “মেদিনীপুরের মানুষ বরাবরই জাতীয়তাবাদী। সিপিএমের থেকে দূরে থাকে। নেতাকর্মীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই সকালে ফেডারেশন অফিসে আসেননি। কিন্তু, পুরভোটের উত্তাপ নেই কে বলল?” চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শ্যামবাবুর চোখ তখন খবরের কাগজে। পাশে বসে তৃণমূল কর্মী গণেশ মাইতি ঘাড় নাড়লেন, “দাদা ঠিকই বলেছেন।” |
হার ছিনতাই |
ভোট দিয়ে ফেরার পথে ছিনতাই হয়ে গেল হার। শুক্রবার দুপুরে রবীন্দ্রনগরে। গৃহবধূ কৃষ্ণা সৎপতি কামারআড়া থেকে ভোট দিয়ে ফিরছিলেন। মোটর বাইকে এক যুবক তাঁর পিছু নেয়। রবীন্দ্রনগরের কাছে এসে সে কৃষ্ণাদেবীর গলার হার ছিনিয়ে নেয়। এরপর বাইক নিয়ে পড়ে যায় মাটিতে। গুলির শব্দ হয়। পরে সে বাইক নিয়ে চম্পট দেয়। অনুমান, ওই যুবকের কাছে রিভলবার ছিল। ঘটনাস্থলে মিলেছে ম্যাগাজিন ও ৩টি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। |
চায়ে না |
বুথ থেকে কিছুটা দূরেও ভোটারদের খাতির করার কোনও উপায় রইল না এ বার। নিদেন পক্ষে এক কাপ চা দিয়েও না। কারণ, বুথের ধারেপাশে কোনও দোকানই খোলার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অগত্যা তা ভর্তি ফ্লাক্স নিয়েই ঘুরে বেড়াতে হয়েছে অনুগামীদের। পরিচিতরা এলেই ফ্লাক্স থেকে প্লাস্টিকের কাপে চা ধরিয়ে দিচ্ছেন অনুগামীরা। আর এই কাজ করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে সকলেই বলছেন, “পুলিশের এত কড়াকড়ি আগে কখনও কোনও ভোটে দেখিনি। একটু চা খেতে হলে ২ কিলোমিটার যেতে হচ্ছে!” |
নরম পুলিশ |
সংঘর্ষ দূর, বেশিরভাগ বুথেই ভোট হয়েছে চূড়ান্ত শান্তিতে। আবেগবশত, অনেকেই হয়তো এগিয়ে গিয়েছেন বুথের কাছে। একজন, দু’জন জমতে জমতে ১০-১২ জন। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকর্মী এসেই বলছেন, “রিকোয়েস্ট করছি, কিছুটা সরে গিয়ে দাঁড়ান। বুথের সামনে ভিড় জমাবেন না। আপনাদের দেখে অনেকেই চলে আসবে।” পুলিশের এ হেন নরম সুরে বিগলিত হয়ে সকলেই সরে দাঁড়ালেন। তাঁদের আর দ্বিতীয়বার এ ব্যাপারে কিছুই বলতে। |
এসপি-র জন্য |
ভীমচকে বুথের পাশে দাঁড়িয়ে তিন প্রবীণ ব্যক্তি। হঠাৎ এল কালো কাচ ঢাকা পুলিশের গাড়ি। এক পুলিশকর্মী তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে তিন জনই বলেন, “আমরা এস পি ম্যাডাম-কে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছি।” পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দেখা অবশ্য মেলেনি। |
|