আর্মান্দোর মতো সমৃদ্ধশালী রিজার্ভ বেঞ্চ তাঁর নেই। অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ একাধিক জাতীয় ফুটবলারকে কাজে লাগিয়ে মাঠে যে বিস্ফোরণ ঘটাবেন, সেই রসদও নেই। ওডাফার মতো ‘এ কে-৫৬’ রাইফেল থাকলেও সেটা পুরো ‘সচল’ নয়।
তবু অনেক ‘নেই’-এর বাগানে আলো ঢোকার রাস্তা তৈরি করে রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন করিম। লাল-হলুদ ঝড় থেকে দলকে বাঁচাতে শুধু ‘প্ল্যান বি’ নয়। ‘প্ল্যান সি’, ‘ডি’, এমনকী প্ল্যান ‘ই’-র ব্লু প্রিন্টও নাকি তৈরি মরক্কান কোচের।
ডার্বিতে দুই কোচের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে জয়োল্লাসের সুযোগ তাঁর কপালেই জোটে, যিনি সঙ্কেতের পূর্বাভাস করতে পারেন! বাগান কোচ সঠিক পূর্বাভাস করতে পেরেছেন কি না সেটা সময় বলবে। তবে ‘কী হলে কী হবে’ তার পুরো স্কেচ ইতিমধ্যেই মস্তিষ্কে এঁকে ফেলেছেন করিম। সেটা আনফিট ওডাফার বদলি হোক বা রক্ষণে তরুণ-ব্রিগেডের কাঁপুনি।
বিপক্ষের ভাসুম-জোয়াকিম-বলজিতদের মতো বাগান বেঞ্চে কোয়ালিটি ফুটবলারের অভাব হয়তো মিটবে না। কিন্তু রাম মালিক, পঙ্কজ মৌলা কিংবা মণীশ ভার্গবের মতো অনামী ফুটবলাররা যে আশার আলো জাগিয়েছেন, তাতে হয়তো নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন তিন মরসুম ট্রফিহীন থাকা দলের সমর্থকেরা। না হলে প্র্যাকটিসের পরে ওডাফা-মুরান্ডারা গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছেন, আর সমর্থকরা ছুটছেন রাম মালিকের পিছনে? |
যে জুটির দিকে তাকিয়ে বাগান। শুক্রবার প্র্যাকটিসে
কাতসুমি-ওডাফা। ছবি: উৎপল সরকার। |
করিম বলছিলেন, “কোয়ালিটি আর অভিজ্ঞতায় ইস্টবেঙ্গল আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে ফিটনেস, টিম স্পিরিট এবং বোঝাপড়ার বিচারে আমরা একটু হলেও এগিয়ে। বহু দিন হল এখানে কোচিং করাচ্ছি। একটা দলে কোচ-ফুটবলারের মধ্যে যে মসৃণ সম্পর্ক থাকা উচিত, সেটা আমার সঙ্গে এই ছেলেদের তৈরি হয়ে গিয়েছে। কোলাসো তো সবে এসেছে।”
ময়দানের ইদানীং চালু কথা, ওডাফা ছাড়া মোহনবাগানে জয়ের স্বপ্ন দেখা যায় না। কিন্তু নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের যা শারীরিক কন্ডিশন, তাতে ডার্বিতে তাঁকে ঠিক কতক্ষণ ব্যবহার করা যাবে, সেটা বলা কঠিন। নিজস্ব মনোবিদ নেই ওডাফার। করিমই উদ্বুদ্ধ করার গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন। পাশাপাশি প্ল্যান ‘বি’ তৈরি রাখছেন। যদি ওডাফার ফের চোট লাগে, মণীশ ভার্গব নামবেন। শুক্রবারের সিচুয়েশন প্র্যাকটিস দেখে মনে হল, উইং দিয়েই আক্রমণের ঝড় তুলতে চাইছে বাগান। আর বিপক্ষ বল পেলেই গতি বাড়িয়ে ত্রিভূজ তৈরি করে আটকানোর ছক। শুরুতে কাতসুমি আর সাবিথ দু’দিক থেকে উঠবেন। পরে ‘প্ল্যান সি’ সাবিথের পরিবর্তে রাম খেলবেন। কাতসুমি চলে আসবেন ‘ডাউন দ্য মিডল’-এ। গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লে মাঝমাঠে করিমের প্ল্যান ‘ডি’ পঙ্কজ মৌলা। প্রাক্তন এরিয়ান ফুটবলারের বল ডিস্ট্রিবিউশন দেখে খুশি করিম। বললেন, “স্কুলের পরীক্ষায় গড়পরতা নম্বর পেতে হয়। দু’টো সাবজেক্টে সর্বোচ্চ হলাম, আর বাকিগুলোতে ফেল করলাম, তাতে কি পরীক্ষায় পাস করা যায়? আমার টিমও গড়পরতা। একাধিক অসাধারণ ফুটবলার হয়তো নেই। কিন্তু যারা আছে, তা দিয়ে পাস করা সম্ভব।”
সবচেয়ে রোমাঞ্চক হয়তো হতে পারে করিমের ‘প্ল্যান ই’। এমনিতে রক্ষণ-সংগঠন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চাইছেন না তিনি। তবে চিডি-মোগাদের দাপটে যদি শুরুতেই কেঁপে যান শৌভিক-প্রীতম-রোউইলসন-আইবররা, তা হলে ‘প্ল্যান ই’ কার্যকর হয়ে উঠতে পারে ‘বি’, ‘সি’ ‘ডি’-র আগে। তখন কিংশুক ডিফেন্সিভ স্ক্রিন থেকে নেমে আসবেন স্টপারে রোউইলসনের পাশে। ৪-১-৩-২ ছক বদলে ৫-৩-২। যদিও সাহসী করিম আত্মবিশ্বাসী, অতটা আলট্রা ডিফেন্সিভ তাঁকে হতে হবে না! |